সামজ্যের সমাধিখ্যাত মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত ভূ- বৈষ্ঠিত দেশ আফগানিস্তান। ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ দেশটিকে বশে রাখা বা প্রভাব বিস্তার করা সব সময়ই দুষ্কর। এর সর্বশেষ প্রমাণ যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত পরাজয়।
সমুদ্র সংযোগহীন দেশগুলোর সাধারণত কোন ভূ- রাজনৈতিক গুরুত্ব থাকে না। কিন্তু এই সাধারণ ধারণার ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত হচ্ছে আফগানিস্তান। দেশটি যুগে যুগে পরাশক্তিদের ভূরাজনৈতির খেলার ময়দান ।মধ্যযুগে হিন্দুস্তানের রাজা জয়পালের জয়রথ ঠেকিয়ে দেয়া,পারস্য সাম্রাজ্যের আক্রমণ, আলেকজান্ডারের অভিযান, চেঙ্গিস খানের হামলা, ব্রিটিশদের যুদ্ধ, সোভিয়েত ইউনিয়নের আগ্রাসন, মার্কিনদের উপস্থিতির পেছনে থেকেছে ভূরাজনৈতিক বিবেচনা।বিংশ শতাব্দীতে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আঞ্চলিক শক্তি পাকিস্তান ও ভারত; প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই দুই দেশ আফগানিস্তানে প্রভাব রেখেছে।আফগানিস্তানঃ ভারত ও পাকিস্তানের কাছে কেন গুরুত্বপূর্ণ..? ভারতের নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য আফগানিস্তানের গুরুত্ব অপরিসীম। আফগান সরকার ভারত-ঘেঁষা আর তালেবান পাকিস্তানপন্থী। তাই তালেবান আবার ক্ষমতা নিলে ভারতের ক্ষতি হবে সবচেয়ে বেশি বলে অনেকে ধারণা করছে। কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের সাথে এবং লাদাখ নিয়ে চীনের সাথে বিপজ্জনক দ্বন্দ্ব রয়েছে ভারতের। তালেবান নিয়ে ভারতের উদ্বেগের প্রধান কারণ কাশ্মির। অতীতে আফগানিস্তান থেকে মুজাহিদীনরা এসে কাশ্মীরে তৎপর হয়েছে। ভারত এখন ভয় পাচ্ছে, পাকিস্তানি তালেবানদের সঙ্গে মিশে আফগান তালেবানরাও কাশ্মির নিয়ে আগের চেয়ে বেশি নাক গলাবে। তাতে ভারতের আঞ্চলিক নিরাপত্তা অথবা তালেবানের কারণে কাশ্মিরে আন্তসীমান্ত সন্ত্রাস বৃদ্ধি পাবে। আফগানিস্তানে প্রভাব বিস্তারে গত দুই দশকে চারশোরও বেশি সামাজিক-অর্থনৈতিক এবং বড় বড় কিছু অবকাঠামো প্রকল্পে ৩০০ কোটি ডলারেও বেশি বিনিয়োগ করেছে ভারত।আফগানিস্তানে ভারতের সবচেয়ে বড় প্রকল্প হলো ভারত-আফগানিস্তান মৈত্রী ড্যাম। সম্প্রতি ঐ ড্যামে তালেবানের হামলায় কমপক্ষে ১০ জন নিরাপত্তা রক্ষী মারা যায়। বিভিন্ন রিপোর্টে উল্লেখ, বিপুল সংখ্যক পাকিস্তানি জঙ্গি আফগানিস্তানে ঢুকে পড়েছে। এই জঙ্গিরা বর্তমান আফগান সরকারের বিরুদ্ধে এবং তালিবানদের সমর্থন করছে। এই জঙ্গিরাই ভারতীয় সম্পত্তির ক্ষতি করতে চাইছে।
ভারত তার পররাষ্ট্রনীতিতে সম্প্রতি নাটকীয় পরিবর্তন এনে আফগানিস্তানের তালেবানের সঙ্গে তার গোপন যোগাযোগের কথা রাখঢাক না রেখেই স্বীকার করেছে। এ ধরনের যোগাযোগে তালেবানের লাভ আরও বেশি। ভারত সরকারের দিক থেকে তারা সমর্থন বাগাতে পারলে তাদের পক্ষে সন্ত্রাসী সংগঠনের তকমা মুছে রাজনৈতিক পরিচয় সামনে আনার বিরাট সুযোগ হবে। এতে তালেবানকে শুধু পাকিস্তানের সহায়তার মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না।আফগান সংঘাতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলুড়ে পাকিস্তান। ভবিষ্যতে আফগানিস্তানের রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা বিষয়ক নীতি নির্ধারণে ভারত যেন কোনো ভূমিকা না রাখতে পারে, সেটাই পাকিস্তানের মূল লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য হাসিলে তালেবানই হচ্ছে পাকিস্তানের প্রধান হাতিয়ার। পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে তালেবানকে আশ্রয় দিয়েছে আফগানিস্তানে তাদের পছন্দের সরকার নিশ্চিত করতে, ভারতের প্রভাব হ্রাস এবং মধ্য এশিয়ায় প্রবেশের পথ করতে।
লেখক : মামুন হাসান বিদ্যুৎ, ঢাঃ বিঃ।