আশিকুর রহমান, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি ॥ গরু ফেরত পেতে এবার আদালতের আশ্রয় নিয়েছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের চারজন গরু মালিক। প্রসংগতঃ চোরেদের ফেলে যাওয়া ছয়টি গরু পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেছিল পুলিশ। এরপর চার ব্যাক্তি সেই গরুর মালিকানা দাবী করলেও পুলিশ গরু না দিয়ে সঠিক মালিকানা নিশ্চিতে আদালতের আশ্রয় নেয়। এতে আইনের জটিলতায় পড়ে যায় মালিকগন। শেষে বাধ্য হয়ে মালিকগন ২৩ আগষ্ট আদালতের দ্বারস্থ হলে ২৬ আগষ্ট পুলিশ তার তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। এ নিয়ে পুলিশের ভাষ্য ওরা চার জন ছাড়াও একাধিক ব্যাক্তি গরুর মালিকানা দাবী করাতে তারা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। আর মালিকানা দাবীকৃতদের ভাষ্য তারা ৪ জন ছাড়া অন্য কেহ গরুর দাবী করেনি। তারপরও পুলিশ তাদেরকে গরু ফেরত না দিয়ে আদালতে পাঠিয়ে নাজেহাল করছেন। বর্তমানে ওই গরুগুলি ঝিনাইদহ কোর্টের হেফাজতে রয়েছে। গরুর মালিকানা দাবী করে আদালতের দ্বারস্থ চার ব্যক্তিগন হলেন, কালীগঞ্জ পৌর এলাকার মধুগঞ্জ বাজারের এনামুল হক ঈমানের তিনটি, মুন্নার একটি, ঢাকালে পাড়ার পারভেজ রহমান রচির একটি ও পৌরসভার পানির লাইনের কর্মচারী নুর ইসলাম একটি গরু। উল্লেখ্য, গত ১৮ আগষ্ট কালীগঞ্জ উপজেলার দুলালমুন্দিয়া গ্রামের একটি বাঁশ বাগান থেকে পুলিশ পরিত্যক্ত অবস্থায় ছয়টি গরু উদ্ধার করে। যার মূল্য প্রায় ৪ লক্ষ টাকা।
আদালতে প্রতিবেদন দাখিলকারী কালীগঞ্জ থানার এসআই সুজাত হোসেন জানান, ১৮ আগষ্ট উদ্ধারকৃত ৬ টি গরু থানায় আনার পর জিডি ও পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন থানাতে বেতার বার্তা প্রেরন করা হয়। সেই সাথে প্রকৃত গরুর মালিকদের প্রমানাদি সহ থানাতে যোগাযোগের আহব্বান জানান। তিনি জানান, এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন এলাকা থেকে একাধিক মানুষ গরুগুলো দেখতে আসেন। এ সময়ে স্থানীয় চারজন ছাড়াও একাধিক ব্যক্তি মৌখিক ভাবে গরুগুলোর মালিকানা দাবি করছিল। এতে দ্বিধাদ্বন্দে পড়ে পুলিশ বাধ্য হয়েই পরদিন গরুর মালিকানা নিশ্চিত করতে একটি জব্দ তালিকা করে ঝিনাইদহে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এ ঘটনায় দাবীকৃত মালিকগনের আদালতে দায়ের করা অভিযোগের প্রতিবেদনটির তদন্তের জন্য গত ২৫ আগষ্ট থানাতে আসে। তিনি পূনরায় তদন্ত শেষে পরদিনই ওই প্রতিবেদনের জবাব আদালতে দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদনে পুলিশ উল্লেখ করেছে, গরুর দাবীকৃত মালিকগন উপযুক্ত প্রমানদি দেখাতে পারেনী। তাই উপযুক্ত প্রমাণাদি দিয়েই প্রকৃত মালিকগন আদালত থেকে গরুগুলি গ্রহন করবেন।
গরু ফেরত পেতে আদালতের আশ্রয় নেওয়া গরু মালিকদের মধ্যে মধুগঞ্জ বাজারের এনামুল হক ঈমান জানায়, পুলিশের উদ্ধারকৃত গরু গুলির মালিক তারা চারজনই। উদ্ধারের পর থেকেই তারা বার বার থানাতে গেলেও গরু ফেরত দেয়নি পুলিশ। উল্টো দু’দিন পর থানা থেকে তাদেরকে জানিয়ে দেওয়া হয় আদালত থেকেই গরু নিতে হবে। তাই বাধ্য হয়েই তারাও আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। পরবর্তীতে পুলিশের আদালতে পাঠানো তদন্ত প্রতিবেদনেরও পাল্টা নারাজি পিটিশন দিয়েছেন মালিকগন।
ক্ষতিগ্রস্থ গরু মালিকেরা আরো জানায়, গরুর মালিক নির্ধারনে কি কি প্রমানপত্র দিতে হবে তা তারা বুঝে উঠতে পারছেন না। অথচ ভাগ্যক্রমে চোরেদের কবল থেকে গরুগুলি রক্ষা পেলেও এখন আইনি জটিলতায় থানা পুলিশের ভোগান্তীতে নাজেহাল হচ্ছেন।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহফুজুর রহমান মিয়া জানান, গরু পাওয়ার পর থেকে অনেকেই মালিকানা দাবি করে আসছেন। এমন পরিস্থিতিতে পড়াতে গরুগুলোর জব্দ তালিকা করে কোর্টে পাঠানো হয়েছে। প্রকৃত মালিকগন সেখানে প্রমাণ দিয়ে গরু নিয়ে যাবেন।