উজ্জ্বল রায়, নড়াইল প্রতিনিধিঃ বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের ৫০তম শাহাদতবার্ষিকী আজ। ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যশোর জেলার গোয়ালহাটি গ্রামে শাহাদাতবরণ করেন তিনি। দেশের এ শ্রেষ্ঠ সন্তানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নড়াইল সদর উপজেলার নূর মোহাম্মদ নগরে দিনটিকে ঘিরে নূর মোহাম্মদ ট্রাস্ট ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচীর আয়োজন করেছে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে কোরআনখানি, স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ, পুলিশ কর্তৃক সশস্ত্র সালাম এবং দোয়া মাহফিল। নূর মোহাম্মদ ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার মহিষখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন (বর্তমানে নূর মোহাম্মদনগর)। বাবা মোহাম্মদ আমানত শেখ ও মা জেন্নাতুন্নেছা। ১৯৫৯ সালের ২৬ফেব্রæয়ারি পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসে (বর্তমান বিজেবি) যোগদান করেন। দিনাজপুর সীমান্তে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করে ১৯৭০ সালের ১০ জুলাই বদলি হন যশোর সেক্টরে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি যশোর অঞ্চল নিয়ে গঠিত ৮নং সেক্টরে ইপিআর ও বাঙ্গালী সেনাদের নিয়ে গঠিত একটি কোম্পনিতে যোগ দেন। দেশ মাতৃকার মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টম্বর যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর সীমান্তের বয়রা অঞ্চলে একটি টহলের নেতৃত্বে ছিলেন। সঙ্গী আরও ৪জন সৈন্য। তারা পার্শ্ববর্তী ছুটিপুর পাকিস্তানি হানাদান বাহিনীর ওপর নজর রাখছিলেন। শত্রæ বাহিনী টের পেয়ে তাদের ফাঁদে ফেলার পরিকল্পনা করে। বুঝে উঠতেই নূর মোহাম্মদ সঙ্গীদের নিয়ে হানাদার বাহিনীর ঘাঁটি আক্রমন করেন। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। এ সময় পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে সহযোদ্ধা নান্নু মিয়া গুরুতর আহত হলেও তাকে কাঁধে নিয়েই এলএমজি হাতে নিয়ে শত্রু পক্ষের বিরুদ্ধে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে থাকলে শত্রুপক্ষ পশ্চাদপসরণে বাধ্য হয়। হঠাৎ পাকিস্তানি বাহিনীর একটি মর্টারের গোলা এসে লাগে তাঁর ডান কাঁধে। মৃত্যু আসন্ন বুঝে তিনি সিপাহী মোস্তফার হাতে এলএমজি দিয়ে তার রাইফেল চেয়ে নেন। আহত নান্নু মিয়াকে নিয়ে সবাইকে চলে যেতে বলেন। তারপর নূর মোহাম্মদ মৃত্যুপথযাত্রী হয়েও ঝাঁপিয়ে পড়েন হানাদারদের ওপর। এখানেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন। যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর গ্রামে তাকে সমাহিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত হন তিনি।