বাঘারপাড়া প্রতিনিধি।। দুই যুগ ধরে ইউনিয়ন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের পদে দায়িত্ব পালন করেছেন বিল্লাল হোসেন। সত্তরের দশকে ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু। পরবর্তীতে যুবলীগের নেতা ছিলেন। চার দশক ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার পর দলের একাংশ বিল্লাল হোসেনকে ‘রাজাকারপুত্র’ আখ্যায়িত করে মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছে।
রোববার দুপুরে যশোর প্রেস ক্লাবের সামনে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড পৃথকভাবে এ মানবন্ধন করেছে। একই দাবিতে শনিবার বিকালে বাঘারপাড়ার রায়পুর বাজারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন এলাকাবাসী।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, শান্তি কমিটির স্থানীয় সভাপতি মোহাম্মদ আলীর পুত্র বিল্লাল হোসেন। তার বড়ভাই শাহাদৎ হোসেনও চিহ্নিত রাজাকার। আমরা চাই না কোনো রাজাকারের সন্তান জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হোক। এরা জনপ্রতিনিধি হলে বাঙালি জাতির জন্য হবে কলঙ্কজনক। এ কারণে আমরা চাই বিল্লালের দলীয় মনোনয়ন বাতিল করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণকারী নতুন কাউকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হোক।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান আলী, আব্দুস সালেক মাস্টার, মোসলেম উদ্দিন প্রমুখ।
এ বিষয়ে বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা হাসান আলী সাংবাদিকদের বলেছেন, স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্তে রায়পুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বিল্লাল হোসেন। উনার বাবা কুখ্যাত রাজাকার মোহাম্মদ আলী। তারা সপরিবারেই রাজাকার ছিল। উপজেলা কমিটি থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় বিল্লাল হোসেনকে রাজাকারের ছেলে বলে সুপারিশও করা হয়েছিল। তারপরও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড তাকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরোধিতাকারীদের জনপ্রতিনিধি করার সুযোগ দিচ্ছে; তাও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিরা- এটা খুবই লজ্জাজনক।
অভিযোগ প্রসঙ্গে নৌকার প্রার্থী বিল্লাল হোসেন বলেন, আমার বাবা রাজাকার কিংবা শান্তি কমিটির কোনো সদস্য ছিল না। এ সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণও কেউ দিতে পারবে না। রাজনৈতিকভাবে ঘায়েল করতে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। আমি ১৯৭৮ সালে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হই। এরপর ১৯৮৭ সালে মাগুরার হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি। এরপর ইউনিয়ন যুবলীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি।
১৯৯৬ সালে রায়পুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির ১৬ নম্বর সদস্য পদ লাভ করি। ২০০৪ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত টানা ১৫ বছর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটিতেও সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে আছি।
১৯৮৮ সালে বঙ্গসেনা তালিকায় ২২ মাস ডিটেনশন (কারাবন্দি) খেটেছি। বিএনপির শাসন আমলে রাজনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আমি আদি আওয়ামী পরিবারের সন্তান। আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা হিসেবে দল আমাকে মূল্যায়ন করেছে। মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যের জবাবে নৌকার মনোনীত প্রার্থী বিল্লাল হোসেন বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা হাসান আলী ইউনিয়ন পরিষদের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কাছে প্রত্যয়নপত্র বিক্রি করেছেন। তার বিরুদ্ধে আমরা মানববন্ধন করেছি। আওয়ামী লীগের প্রত্যয়ন বাণিজ্য করে বিপাকে পড়েন হাসান আলী। এজন্য তিনি আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন।