যশোর: যশোরের মণিরামপুরের কাশিমনগর ইউনিয়নের ইত্যা পূর্বপাড়ায় একই ভিটায় ছেলে জিন্নাত হোসেনের সাথে থাকেন আতিয়ার রহমান ও শিউলি বেগম। জিন্নাত এবারের ইউপি নির্বাচনে ইত্যা ২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সাধারণ সদস্য (মেম্বার) প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা হলেও জিন্নাতের বাবা-মা তাকে ভোট দিতে পারছেন না। ভোটার তালিকায় জটিলতা থাকায় বাড়ির পাশের কেন্দ্র রেখে তাদের অন্য কেন্দ্রে গিয়ে ইত্যা ১ নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থীদের ভোট দিতে হবে।
ইত্যা ১ নম্বর ওয়ার্ডের ঋষিপাড়ার বাসিন্দা সুবাস দাস। তার ঘরের সাথে ইত্যা ব্যাপ্টিষ্ট চার্চ স্কুল। ভোটার জটিলতায় সুবাস দাসকে ঘরের কেন্দ্র রেখে আধা কিলোমিটার দূরে ইত্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে হবে। আর বাবার সাথে একঘরে থেকেও সুবাস দাসের ছেলে বাসুদেব দাস নিজের ওয়ার্ডের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারছেন না। ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হয়ে তাকে ভোট দিতে হচ্ছে ২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থীকে।
শুধু মতিয়ার রহমান বা সুবাস দাস না ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকার জন্য ভোটকেন্দ্রের এমন জটিলতায় আছেন ইত্যা গ্রামের পূর্ব ও পশ্চিমপাড়ার ১ ও ২ ওয়ার্ডের প্রায় ৭০০ ভোটার।
স্থানীয়রা বলছেন, আয়তনে বড় হওয়ায় কাশিমনগর ইউনিয়নের ইত্যা গ্রামটিকে দুটি ওয়ার্ডে ভাগ করা হয়েছে। ইত্যা পশ্চিম পাড়াকে করা হয়েছে ১ নম্বর ওয়ার্ড আর পূর্বপাড়াকে করা হয়েছে ২ নম্বর ওয়ার্ড। ২০০৮ সালে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভোটার তালিকা করার সময় নির্বাচন অফিসের কর্মীরা ওয়ার্ড নম্বর গুলিয়ে ফেলেন। তাদের ভুলে ১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় ৩০০ ভোটার চলে আসে ২ নম্বর ওয়ার্ডে আর ২ নম্বর ওয়ার্ডের ৩৭৫ ভোটার চলে যান ১ নম্বর ওয়ার্ডে। পাল্টে যায় ভোটকেন্দ্রও। ১ নম্বর পশ্চিম পাড়ার ভোটাররা বাড়ির কাছের ইত্যা ব্যাপ্টিষ্ট চার্চ স্কুল কেন্দ্র ফেলে চলে আসেন ২ নম্বর পূর্বপাড়া ওয়ার্ডের ইত্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে। আর পূর্বপাড়ার ভোটাররা নিজেদের কেন্দ্র রেখে চলে যান পশ্চিমপাড়ার কেন্দ্রে।
শুধু ভোটকেন্দ্র জটিলতা নয়। নাগরিক সুবিধা পেতেও বেগ পেতে হয় ওয়ার্ড পরিবর্তন হওয়া এসব ভোটারদের।
উপজেলা নির্বাচন অফিস বলছেন, সংসদ নির্বাচনে ইত্যা দুই ওয়ার্ড মিলে এক কেন্দ্রে ভোট হয়। তখন সমস্যা হয়না। কিন্তু ইউপি নির্বাচন আসলে এ দুই ওয়ার্ডের বাসিন্দারা ভোটকেন্দ্রের জটিলতায় পড়েন। ২০০৮ সালে ভোটার তালিকা করার সময় মাঠ কর্মীদের ভুলে এ জটিলতা হয়েছে। ২০১১, ২০১৬ ও এবারের ২০২১ সালের ইউপি নির্বাচন মিলে তিনবার ভোটাররা এ জটিলতায় পড়ছেন।
ইত্যা দুই ওয়ার্ড থেকে এবার ৪ জন করে ৮ জন মেম্বার প্রার্থী রয়েছেন। ভোটার তালিকা এলোমেলো হওয়ায় দুই ওয়ার্ডেই ৮ প্রার্থীর প্রচার পোষ্টার রয়েছে। আগামী রবিবার (২৮ নভেম্বর) উপজেলার অন্য ১৫০টি কেন্দ্রের সাথে এ দুই কেন্দ্রে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এ গ্রামের পশ্চিমপাড়ার ভোটার ১ হাজার ৩৫৮ জন এবং পূর্বপাড়ার ভোটার ১ হাজার ১৮৩ জন।
ইত্যা পশ্চিম পাড়ার ইলিয়াছ মুন্সি বলেন, আগে বাড়ির কাছে ঋষিপাড়ার কেন্দ্রে ভোট দিছি। এবার সরকারি প্রাথমিক স্কুল কেন্দ্রে ভোট দিতে যেতে হবে।
ঋষিপাড়ার বাসিন্দা বাবু দাস বলেন, আগে ওয়ার্ড ১ নম্বর ছিলো। এখন ২ নম্বর হয়ে গেছে। আমি দাস পাড়ার হলেও এখানকার কেন্দ্র ফেলে অন্য কেন্দ্রে ভোট দিতে যেতে হবে।
কেন্দ্র জটিলতায় পড়া ভোটাররা বলছেন, ভোট এলোমেলো হওয়ায় নাগরিক সুবিধা নিতে গেলে এক মেম্বার অন্য মেম্বাররে দেখায়। একই জায়গায় বাড়ি হলেও বলেন আমরা তার ভোটার না।
মণিরামপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ বলেন, আমি নতুন এসেছি। ইত্যা দুই কেন্দ্রে ভোটের এ জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে ২০০৮ সালে। ২৮ নভেম্বরের নির্বাচনের পর এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেবো।