আজ ছয় ডিসেম্বর। যশোর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে যশোর জেলা হানাদার বাহিনী মুক্ত হয়েছিল। মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর যৌথ আক্রমণে এদিন সকাল থেকেই যশোর ছাড়তে শুরু করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।
এর আগের দিন বিকেল থেকেই ফাঁকা হতে শুরু করে যশোর ক্যান্টনমেন্ট। যশোর কালেক্টরেট ভবন থেকেও পালিয়ে যায় পাক সেনারা। ৬ ডিসেম্বর ভোর থেকে গ্রামাঞ্চলে থাকা মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর সদস্যরা মিছিল সহকারে যশোর শহরে প্রবেশ করতে থাকে। দুপুর হতে না হতেই মুক্তিকামী জনতার পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠে শহর। যশোর কালেক্টরেট ভবনে ওড়ানো হয় জাতীয় পতাকা। বিকেলে যশোর টাউন হল ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় মুক্তিকামী জনতার সমাবেশ। এই সমাবেশ থেকে গোটা দেশকে শত্রু-মুক্ত করার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করেন মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা।
মুক্তিযুদ্ধের সময় যশোর ছিল আট নম্বর সেক্টরের অধীন। এ সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন তদানীস্তন মেজর মঞ্জুর। অন্যদিকে পাকবাহিনীতে মোতায়ন ছিল ১০৭নং ব্রিগেড। যশোর সেনানিবাস থেকে শত্রু বাহিনী ছয়টি জেলা নিয়ন্ত্রণ করত। ২০ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী ও মিত্র বাহিনী যশোর সেনানিবাস দখলের অভিযান শুরু করে। পাক বাহিনীর পশ্চিমাঞ্চলের শক্তিশালী ঘাঁটি চৌগাছা ঘিরে ফেলে সম্মিলিত বাহিনী।
মিত্র বাহিনীর গোলার আওতায় আসে যশোর সেনানিবাস। ২২ নভেম্বর রাতে পতন হয় চৌগাছার। এ সময় যশোর সেনানিবাসের তিন দিকেই মিত্র ও মুক্তি বাহিনী শক্ত ঘাঁটি গেঁড়ে বসে। প্রতিরোধ যুদ্ধের শেষ অভিযান শুরু হয় পাঁচ ও ছয় ডিসেম্বর। যুদ্ধে টিকতে না পেরে পাক বাহিনী পালিয়ে যায় খুলনার দিকে। ছয় ডিসেম্বর যশোর শহর নিয়ন্ত্রণে নেয় মুক্তি বাহিনী। ওই দিন সন্ধ্যার পর শহরে তারা বিজয় মিছিল করে।
মুক্ত যশোরে সাত ডিসেম্বর সকালে মানুষের ঢল নামে। আনন্দ উল্লাসের পাশাপাশি স্বজন হারানো মানুষের কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। ১১ ডিসেম্বর যশোর টাউন হল মাঠে আয়োজিত এক সমাবেশে মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ ভাষণ দেন।
যশোরের বীর সন্তানদের ক্ষোভ তারা যাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিল, তারা আজ বাংলার মাটিতে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত। তাদের ইশারায় আজও অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রিত হয়।
এদিকে যশোর মুক্ত দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ যশোর ইউনিটের পক্ষ থেকে দিনব্যাপী ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আলোচনা সভা, মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চিত্র প্রদর্শনী, মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি।