স্টাফ রিপোর্টার : যশোর স্ক্যান হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রসূতির খাদ্যনালী কেটে ফেলার ঘটনায় পুনরায় স্ক্যান হাসপাতাল ঘেরাও এবং তর্কাতর্কি তান্ডব চালিয়েছে ভুক্তভোগী রোগীর স্বজনেরা। সোমবার (২৮ মার্চ) বিকেলে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের বিপরীতে স্ক্যান হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, সোমবার বিকেল ৪টার দিকে প্রায় ১২ থেকে ১৪ জন রোগীর স্বজনরা স্ক্যান হাসপাতালের মধ্যে ঢুকে আহাজারি শুরু করে। এ সময় তারা দোতালায় গিয়ে কর্তৃপক্ষ’র সাথে কথা বলতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ’র লোকজন অপারেশন করার নামে অপারেশন থিয়েটার ও ডাক্তারের চেম্বারের মধ্যে গা-ঢাকা দিয়ে থাকে। এ সময় বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হলে খবর পেয়ে বিভিন্ন মিডিয়ার গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে উপস্থিত হয়। এ সময় সকলের ডাকাডাকিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ’র লোকজন সামনে আসে।
ভুক্তভোগী রোগীর বড় বোন তহমিনা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, আমার বোন এখন ঢাকায় পিজি হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। সেখানে ডাক্তারা আমার বোনের শারীরিক অবস্থা খারাপ দেখে আমার বোনকে হাসপাতালে রাখতে চাচ্ছে না। এদিকে স্ক্যান হাসপাতাল কতৃপক্ষ আমাদের এক লক্ষ টাকা দিয়ে দায় সেরে আমাদের আর কোন খোজ খবর নেননি। এবং আমাদের সহোযোগিতা করার কথা থাকলেও পরে আমাদের কোন রকম সহোযোগিতা করেনি। আমরা প্রশাসনের কাছে আমাদের বোনের জীবন ভিক্ষা চাই।
এদিকে হাসপাতাল ঘেরাও এবং রোগীর স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে স্ক্যান হাসপাতালের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক জুলফিকার আলী বলেন, আমরা থানায় বসাবসির মাধ্যমে এক লক্ষ টাকা ভুক্তভোগীদের প্রদানের মাধ্যমে আমরা বিষয়টি মিমাংসা করে সাক্ষী সমেত সই সাক্ষর করে আপোষনামা করে নিয়েছি। ্আজ তিন মাস পর আবারও নতুন করে হাসপাতালের মধ্যে এসে বিশৃঙ্খলা করলে আমাদের এখন কি করার আছে। আপোষনামা হওয়ার পর আমাদের সাথে এমন আচরণে হাসপাতালের শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, যশোরে গত ০৭ জানুয়ারি স্ক্যান হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নাজমা খাতুন(৩০) নামে এক প্রসুতীর সিজার করতে গিয়ে খাদ্য নালী কেটে ফেলেছেন ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ মাহাফুজা মনি।
ভুক্তোভোগী প্রসূতী নাজমা খাতুন মনিরামপুর উপজেলার, সদর বাজার এলাকার ফরিদ আহমেদের স্ত্রী। নাজমা প্রসূতি অবস্থায় শহরের খালধার রোড বরফ কলের পাশে একটি ভাড়া বাসায় তার মা আনোয়ারা বেগমের সাথে থাকতেন।
নাজমা খাতুনের ভাই রনি জানায়, তার বোন নাজমা খাতুনের প্রসব যন্ত্রণা উঠলে গত ৭ জানুয়ারি সকাল দশটার দিকে যশোর সদর হাসপাতালের বিপরীত পাশে স্ক্যান হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি হয়। ভর্তির পরের দিন সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা: মাহাফুজা মনির ও তার সহোযোগিরা নাজমা খাতুনের অবস্থা খারাপ বলে তৎক্ষণাৎ সিজার করাতে চায়। এসময় আমি ও আমার পরিবারের লোকজন নাজমার অবস্থা খারাপ শুনে সিজার করতে সম্মতি দেই। সিজারের পর নবজাতক বাচ্চা সুস্থ হলেও আমার বোন নাজমা আর সুস্থ হয় না। পরে আমাদের ছাড়পত্র দিলে বাড়িতে নিয়ে যাই। বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কিছুদিন পর অবস্থার অবনতি দেখে আবারও স্ক্যান হাসপাতালে ভর্তি করাই। এবং চিকিৎসক মাহাফুজা মনি বলেন, ৭-৮ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যাবে। কিন্তু দীর্ঘ সময় পার হলেও দিন দিন আমার বোন নাজমার শারীরিক অবস্থা আরও খারাপের দিকে চলে যায়। এ সময় আমাদের চাপে চিকিৎসক মাহাফুজা মনি স্বীকার করে যে সিজার করার সময় তার খাদ্যনালীর নাড়ি কেটে গিয়েছে। এমন ঘটনা শোনার পরে আমরা উত্তেজিত হলে আমাদের সকল খরচ বহন করার মৌখিক অঙ্গিকার করে এবং আমাদের সেখান থেকে খুলনা অথবা ঢাকায় চিকিৎসা নিতে বলে। সেখান থেকে খুলনা গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আমার বোনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।