নিজস্ব প্রতিবেদক: লোডশেডিংয়ের কারণে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অপারেশন চলাকালে আজ মঙ্গলবার বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়ায় ওটিতে লাইটের বাল্ব ভেঙে পড়ে। ডায়াথার্মি মেশিন থেকে কালো ধোঁয়া বের হতে থাকায় চিকিৎসকগণ ভীত হয়ে পড়েন। ওটি টেবিলে থাকা রোগীর অবস্থা হয়ে পড়ে। মোবাইল ও টর্চ লাইটের আলোয় অপারেশন করা হয়। ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীরা পড়েন বেকায়দায়।
সূত্র জানিয়েছেন, বিভিন্ন স্থানের ন্যায় যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালেও শুরু হয়েছে ঘনঘন লোডশেডিং। হাসপাতাল হচ্ছে অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। অথচ এখানে সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই। তারপরও সাধারণ জায়গার মতো হাসপাতালেও দেয়া হচ্ছে লোডশেডিং। এর ফলে অপারেশন থিয়েটারে চিকিৎসার উপকরণ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ওটি লাইট বিকল হয়ে পড়েছে।
মঙ্গলবারের লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যাপক ক্ষতি হয়। জানা গেছে, এদিন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত হাসপাতালে চলে লোডশেডিং। এ সময় অপারেশন থিয়েটারে সার্জারি বিভাগে, অর্থোপেডিক গাইনি ও ইএনটি বিভাগের চিকিৎসকগণ রোগীর অপারেশন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। শিশু সার্জারি বিভাগের ৮টি রোগীর মধ্যে ৬টি কিশোরের অপারেশন করা হয়। যশোর মেডিকেল কলেজের শিশু সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. শরীফুজ্জামান রঞ্জু, সহকারী অধ্যাপক ডা. মাসফিকুর রহমান ও সহকারী অধ্যাপক ডা. গোলাম কিবরিয়া ওই শিশু রোগীদের অপারেশন করেন। অপারেশন চলাকালে লোডশেডিং করেন। অপারেশন চলাকালে লোডশেডিং শুরু হয়। দেখা দেয় বিদ্যুৎ সংকট। তখন অপারেশন থিয়েটারের মধ্যে বিরাজ করে প্রচন্ড অন্ধকার ও গরম পরিবেশ। এ সময় সার্জারি ওটি কক্ষে থাকা বৈদ্যুতিক বাল্ব ভেঙে পড়ে। অপারেশন কাজে নিয়োজিত ডায়াথার্মি মেশিনটির মনিটর বন্ধ হয়ে ভেতর থেকে প্রচন্ড কালো ধোঁয়া বের হতে থাকে। দু’টি ওটি লাইটের মধ্যে মেশিনসহ একটি ওটি লাইট নষ্ট হয়ে যায়। ওটি টেবিলের উপর থানা শিশু রোগী নিয়ে চিকিৎসকগণ ভীত হয়ে পড়েন। সেবিকা ও কর্মচারীরা ভয়ে সস্ত্রস্ত হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে ডা. শরীফুজ্জামান রঞ্জু কর্মচারীদের ডায়াথার্মি মেশিন বন্ধ করে দিতে বললে তারা বন্ধ করে দেন। অন্ধকারের ভেতর ওটি টেবিলের উপর থাকা শিশু রোগী নিয়ে চিকিৎসকগণ সমস্যায় পড়েন। রোগীর অপারেশনের মাঝ পথে এমন ঘটনায় টর্চলাইট ও মোবাইল ফোনের আলো দিয়ে চিকিৎসকগণ তাদের অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনা করেন। আধা ঘন্টা পর বিদ্যুৎ এলে তারা জানতে পারেন বৈদ্যুতিক বাল্বের অংশ বিশেষ ভেঙে পড়েছে। ১টি ওটি লাইন খারাপ হয়ে গেছে। এ সময় সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অপারেশন থিয়েটারে রোগী নিয়ে বিপদে আছি। একই অবস্থা ছিল গাইনি অপারেশন থিয়েটারে। সেখানে ৩ জন রোগী অপারেশন টেবিলের উপর থাকা অবস্থায় লোডশেডিং শুরু হয়। লোডশেডিংয়ের সময় দুটি বৈদ্যুতিক লাইট ভেঙে পড়ে। ডা. প্রতিভা ঘরাইসহ তার সহযোগী চিকিৎসকগণ অপারেশন করছিলেন মোবাইল ফোনের আলো দিয়ে। তখন ওটির ভেতর ছিল একই অবস্থা। তারা মোবাইল ফোনের আলো ও চর্টলাইট মেরে অপারেশন করছিলেন। এ সময় অর্থোপেডিক বিভাগের কনসালটেট ডা. মো. আব্দুর রশিদ এ প্রতিবেদককে বলেন, দেখে যান আমরা বিভাবের টর্চলাইট মোবাইল ফোনের আলোয় অপারেশন করছি। বিদ্যুতের লোডশেডিং হওয়ায় অপারেশন থিয়েটারে চিকিৎসার উপকরণ যন্ত্রপাতি যেমন নষ্ট হচ্ছে। তেমন রোগীর মৃত্যু ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাসপাতালে জেনারেটর থাকলেও কেবল আইসিইউতে জেনারেটর সচল রাখা হয়। অন্য জায়গায় জেনারেটর বন্ধ থাকে। লোডশেডিংয়ের ফলে হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগে চিকিৎসক, রোগী ও সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হন।
এ ব্যাপারে অপারেশন থিয়েটারের এ্যানেসথিয়া বিভাগের ইনচার্জ সহযোগী অধ্যাপক ডা. এবিএম. আহ্বান হাবীবের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ঘনঘন লোডশেডিং হলে সমস্যাতো হবেই। বিদ্যুৎ চালিত যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাবে। এতে কিছু করার নেই। তবে অপারেশন থিয়েটারে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সচল রাখা না হলে কোন রোগীর ক্ষতি হতে পারে।