নিজস্ব প্রতিবেদক : বসুন্ধরা গ্রুপের নামকরা ব্রান্ডের নকল ভিক্সল তৈরি হচ্ছে যশোরের সুলতানপুর দক্ষিনপাড়া গ্রামে। নুরুজ্জামান ভূইয়া তার প্রাচীর ঘেরা বসত বাড়ির মধ্যে এন জামান কেমিক্যালস্ নামক টিন শেডের ঘরে গড়ে তুলেছেন নকল ভিক্সল কারখানা। ইচ্ছেমতো সব ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক উপাদান মিশিয়ে তৈরি করছেন টাইলস ও টয়লেট ক্লিনার ভিক্সল, পানির ট্যাংক পরিষ্কারক ড্যামফিক্স ও গাজীপুরের বন্ধন কেমিক্যালস্’র বি-ওয়ান নামক টাইলস জয়েন্ট ফিলার পাউডার ।
কারখানায় ব্যবহৃত এসিডসহ অন্যান্য পদার্থ ফেলে রাখা হচ্ছে উন্মুক্ত স্থানে। কারখানার নেই কোনো অনুমোদন, নিয়োগ দেয়া হয়নি স্বীকৃত কেমিস্টও।
স্থানীয়রা জানান, নুরুজ্জামান ভূইয়া কি কাজ করেন তা অনেকেই জানেননা। মাঝে মধ্যে তিনি নিজেকে কসমেটিক্স ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিতেন। সম্প্রতি অতিরিক্ত মুনাফার লোভে নিজ বাড়িতে খুলে বসেন নকল ভিক্সল, ড্যামফিক্স ও টাইলস্ পুটিং কারখানা। রাতের আঁধারে শুধুমাত্র পানি ও অ্যাসিড দিয়ে তৈরি হচ্ছে ভিক্সল। যশোর থেকে তৈরি হচ্ছে বোতল ও লেভেল। বোতলের লেবেলে ব্যবহার করা হচ্ছে এন জামান কেমিক্যালস্ লিমিটেডের নাম। সব মিলিয়ে এক বোতল ভিক্সল তৈরি করতে খরচ হচ্ছে পাঁচ-ছয় টাকা। ওই ভিক্সল বাজারজাত করা হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকায়। এতে করে ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছেনতো বটেই হাতে পায়ে লেগে অনেকের শরীরে ঘাঁও হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার রাতে নুরুজ্জামান ভূইয়ার বাড়ীতে প্রবেশ করেই চোখে পড়লো টিন শেডের সেই ঘর। ঘরে ঢুকেই দেখা যায় থরে থরে সাজানো কার্টুন ভর্তি নকল ভিক্সল। সয়াবিন তেলের ৫ লিটারের ক্যান ভর্তি এসিড । চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ভিক্সল,ড্যামফিক্স ও বি-ওয়ানের খালি প্লাষ্টিক বোতল লেভেল ও প্যাকেট।
কারখানা সম্পর্কে জানতে চাইলে নুরুজ্জামান বলেন, তিনি কোনো নকল ভিক্সল তৈরি করেন না। বসুন্ধরা গ্রুপের ভিক্সল ও তার তৈরি ভিক্সল বানানে একটি ইংরেজি অক্ষর ‘এস’ এর পার্থক্য রয়েছে (বসুন্ধরা গ্রুপ: VIXOL, নকল: VIXSOL )। তিনি নিজে কোন কেমিস্ট নন, এ কাজে পারদর্শী বাধন নামে এক স্কুলছাত্র তাকে এ সকল রাসায়নিক তৈরির কাজে সহায়তা করে।
কারখানার অনুমোদন বলতে ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নেয়া একটি ট্রেড লাইসেন্স ও একটি ফায়ার সার্টিফিকেট দেখাতে পেরেছেন তিনি।
বসুন্ধরা ট্রেডিং এর ম্যানেজার মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন , তাঁদের পণ্যের নামটি বাংলাদেশ সরকারের পেটেন্ট ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তর কর্তৃক নিবন্ধিত যার নাম্বার ১০৬৭৪৬৫। নুরুজ্জামান সরকারের ভ্যাট ট্রাক্স ফাঁকি দিয়ে তাঁদের পণ্যের নামের সাথে মিল রেখে নকল ভিক্সল তৈরি করে যশোরের বাজারে বিক্রি করছে বলে তিনিও জানতে পেরেছেন। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে দ্রুতই তিনি যশোর আসবেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ওয়ালিদ বিন হাবিব বলেন, এরকম একটি রাসায়নিক কার্যক্রম করতে গেলে ,অন্যান্য কাগজ পত্রের সাথে একটি ল্যাবরেটরি ও কেমিস্ট থাকতেই হবে, এন জামান কেমিক্যালস্ এর বিরুদ্ধে খুব দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) নুরুজ্জামান কে অভিযুক্ত করে কোতয়ালি মডেল থানায় একটি অভিযোগও দায়ের করেছেন যশোরের চুড়িপট্টি এলাকার বসুন্ধরা ট্রেডিং এর এক পরিবেশক।