নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে গৃহবধু ও দুই ছেলের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় স্বামীকে প্রধান আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। রোববার দুপুরে মনিরা বেগমের মা আবেদা বেগম বাদি হয়ে দেলদুয়ার থানায় হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় মনিরার স্বামীসহ তিনজনের নাম রয়েছে। অজ্ঞাতনামা আরও তিন চারজনকে আসামি করা হয়েছে। এ দিকে লাশ গুলো ময়না তদন্ত শেষে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে শনিবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের চকতৈল পূর্বপাড়া গ্রামে মো. শাহেদের স্ত্রীর ঝুলন্ত লাশ ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় পাশেই বিছানায় পড়ে ছিল শাহেদের দুই ছেলে মুসফিক (৮) ও মাশরাফির (২) লাশ। ঘটনার পর থেকে শাহেদ পলাতক।
দেলদুয়ার উপজেলার চকতৈল পূর্বপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় গ্রামজুড়ে শোক বইছে। মনিরার বাবার বাড়ি ও স্বামীর বাড়ি রাস্তার এপার-ওপার। মনিরার ঘর খোলা পড়ে আছে। সেখানে ঢুকে দেখা যায়, ঘরের মধ্যে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে তাদের জামাকাপড়। ঘরের পেছন দিকে সিঁধ কাটা। স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, এ সিঁধ কেটেই ঘর থেকে মনিরার স্বামী পালিয়ে গেছেন।
ওই গ্রামের একাধিক ব্যক্তি জানান, মনিরার স্বামী শাহেদের বাবা ফজলু মিয়া পুলিশে চাকরি করতেন। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর একবার ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনিও মাদকাসক্ত ছিলেন। কয়েক মাস আগে একটি চুরির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর গ্রাম ছেড়েছেন।
তারা আরও জানান, শাহেদ দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত। তিনি স্ত্রীর গয়না, ঘরের থালাবাটি বিক্রি করে নেশা করতেন। নেশার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। সর্বশেষ গত সপ্তাহে তার বসতঘর ২০ হাজার টাকায় চাচাতো ভাইয়ের কাছে বিক্রি করেন। ঘর ভেঙে নেওয়ার পর শাহেদ স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে তার বাবার ঘরে ওঠেন। এ নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে কয়েক দিন ধরে ঝগড়া চলছিল। ঝগড়ার জেরে স্ত্রী সন্তানদের হত্যা করেছেন বলে মনে করছেন মনিরার মা আবেদা বেগম।
মনিরার ফুফাতো ভাই জামাল মিয়া জানান, শাহেদ নেশা করতেন। হত্যা করার আগে স্ত্রী সন্তানকে কোনো ওষুধ খাইয়ে অজ্ঞান করে হত্যা করতে পারেন।
স্থানীয় কয়েক বাসিন্দা বলেন, গতকাল সন্ধ্যার দিকে যখন ঘর থেকে মনিরা ও তাঁর দুই ছেলের লাশ উদ্ধার করা হয়, তখনো শাহেদ বাড়িতে ছিলেন। পরে একপর্যায়ে চলে যান। একে একে তাঁদের অন্য চাচাতো ভাইয়েরা বাড়ি ত্যাগ করেন।
দেলদুয়ার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাছির উদ্দিন মৃধা জানান, সুরতহালে দেখা গেছে, দুই ছেলেকে ঘাড় মটকে হত্যা করা হয়েছে। মনিরার মৃত্যুর কারণ ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে বোঝা যাবে। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের পর আজ দুপুরে তিনজনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। শাহেদকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। দ্রুত এ হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করা যাবে বলে তিনি আশা করছেন।