নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোরের ছয়টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া ৪৬ জনের মধ্যে ১৮ জনের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। বাকি ২৮ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনি এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনে ত্রুটি, আয়কর রিটার্ন দাখিলে সমস্যা ও বিদ্যুৎ বিল বকেয়াসহ কয়েকটি কারণে এসব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
রবিবার (০৩ ডিসেম্বর) দুপুর ১টার দিকে এসব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ এবং বাতিল ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসক ও নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার। এর আগে সকাল ৯টায় জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে ছয়টি আসনের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শুরু হয়। পরে ছয়টি আসনে ২৮ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ও ১৮ জনের মনোনয়নপত্র বাতিলের ঘোষণা দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এ সময় জেলার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা আনিছুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন, বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং মনোনয়নপ্রত্যাশী ও তাদের সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, যশোরের ছয়টি আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত ছয় প্রার্থী, স্বতন্ত্র ও বিভিন্ন দলের ৪৬ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত ছয়, স্বতন্ত্র ১৬, জাকের পার্টির ছয়, জাতীয় পার্টির ছয়, তৃণমূল বিএনপির তিন, ইসলামী ঐক্যজোটের দুই, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের দুই, বাংলাদেশ কংগ্রেসের এক, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের এক, বিকল্পধারা বাংলাদেশের এক, খেলাফত আন্দোলনের এক এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টির এক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। তার মধ্যে যাচাই-বাছাইকালে ১৮ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়। বাতিলের মধ্যে রয়েছেন স্বতন্ত্র ১১, জাতীয় পার্টির এক, জাকের পার্টির দুই, তৃণমূল বিএনপির এক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের এক, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের এক ও খেলাফত আন্দোলনের একজন।
যশোর-১ (শার্শা) আসনে তিন জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। তারা হলেন—আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী বেনাপোল পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম লিটন এবং জাকের পার্টির সবুর খান। এই আসনে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে তিন জনের। তারা হলেন—আওয়ামী লীগ নেতা নাজমুল হাসান ও সোহরাব হোসেন এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী আক্তারুজ্জামান।
যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনে পাঁচ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। তারা হলেন—আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা. তৌহিদুজ্জামান তুহিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক এমপি মনিরুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির মুফতি ফিরোজ শাহ, বাংলাদেশ কংগ্রেসের আব্দুল আওয়াল ও জাকের পার্টির মো. সাফারুজ্জামান। এই আসনে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে দুই জনের। তারা হলেন—স্বতন্ত্র প্রার্থী চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম হাবিবুর রহমান ও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের মো. শামছুল হক।
যশোর-৩ (সদর) আসনে মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে চার জনের। তারা হলেন—আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট মাহবুব আলম বাচ্চু, বিকল্পধারা বাংলাদেশের মো. মারুফ হাসান কাজল ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সুমন কুমার রায়। এই আসনে ছয় জনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। তারা হলেন—স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. তৌহিদুজ্জামান, তৃণমূল বিএনপির মো. কামরুজ্জামান, জাকের পার্টির মো. মহিদুল ইসলাম ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের শেখ নুরুজ্জামান।
যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর) আসনে সাত জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। তারা হলেন—আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুল হক বাবুল, স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য রণজিত কুমার রায়, জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট জহুরুল হক, তৃণমূল বিএনপির লে. কর্নেল (অব.) এম শাব্বির আহমেদ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সুকৃতি কুমার মন্ডল, ইসলামী ঐক্যজোটের ইউনুছ আলী ও জাকের পার্টির লিটন মোল্যা। এই আসনে একজনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তিনি হলেন—স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক উপ-সচিব সন্তোষ অধিকারী।
যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনে পাঁচ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। তারা হলেন—আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য, স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি ইয়াকুব আলী, জাতীয় পার্টির এমএ হালিম, ইসলামী ঐক্যজোটের হাফেজ মাওলানা নুরুল্লাহ আব্বাসী ও তৃণমূল বিএনপির আবু নসর মোহাম্মদ মোস্তফা। এই আসনে চার জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তারা হলেন—স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক এমপি খান টিপু সুলতানের ছেলে হুমায়ুন সুলতান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি পৌর মেয়র আমজাদ হোসেন লাবলু, আওয়ামী লীগ নেতা কামরুল হাসান বারী ও জাকের পার্টির হাবিবুর রহমান।
যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে চার জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। তারা হলেন—আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এইচএম আমীর হোসেন, জাতীয় পার্টির জিএম হাসান এবং জাকের পার্টির মো. সাইদুজ্জামান। এই আসনে দুই জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তারা হলেন—স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা হোসাইন মোহাম্মদ ইসলাম ও আজিজুল ইসলাম।
জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, ‘নির্বাচনি এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনে ত্রুটি, আয়কর রিটার্ন দাখিলে সমস্যা ও বিদ্যুৎ বিল বকেয়াসহ কয়েকটি কারণে এসব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। তবে মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া প্রার্থীরা আপিল করতে পারবেন।’
Leave a Reply