যশোর : যশোর শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীরা এ অভিযোগ করেছেন। ইতিপূর্বে তিনি খুলনা আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসে সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব পালনকালে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িত ছিলেন। অবিলম্বে দুর্নীতিবাজ এই শিক্ষা কর্মকর্তাকে অপসারণসহ তার বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর অনিয়মের মাধ্যমে সিরাজুল ইসলাম ওরফে কালা সিরাজ শিক্ষাকতা বাদ দিয়ে প্রশাসনিক পদে আশীন হন। সর্বশেষ যশোর শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক হন। তেলবাজ শিক্ষা কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম ওরফে কালা সিরাজ যশোর ৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ এর আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। সংসদ সদস্যের আস্থাভাজন হয়ে শিক্ষা বোর্ডকে নিজের বাপ-দাদার পৈতিৃক সম্পদে পরিণত করেন। বিদ্যালয় পরিদর্শনের নামে তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেয়ে আদায় করেন মোটা অংকের টাকা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, পাঠদান, একাডেমিক স্বীকৃতি, অতিরিক্ত শ্রেণি খোলাসহ যে কোনো বিষয়ে পরিদর্শনে যেয়ে ২০ থেকে ৫০ হাজার আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ আদায় করেন। টাকা না দিলে হুমকি ও চরম দূর্ব্যবহারের স্বীকার হন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যশোর শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন একাধিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ প্রতিবেদকের কাছে বিদ্যালয় পরিদর্শকের দূর্ব্যবহার ও ঘুষ আদায়ের কথা স্বীকার করেছেন। আক¯র্ি§ক বিদ্যালয়ে অতর্কিতভাবে পরিদর্শনে যেয়ে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা ঘুষ আদায় করেন তিনি। বিদ্যালয়ের কমিটি অনুমোদনের ক্ষেত্রে তিনি ১ লাখ টাকা ঘুষ আদায় করেন। টাকা না দিলে তিনি কমিটি অনুমোদন করতে অস্বীকার করেন। এসব বিষয়ে শিক্ষকরা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। চাহিদা মত অর্থ না পেলে ক্ষুদ্র অপরাধেও বিদ্যালয়ের কমিটি ভেঙে দেয়ার হুমকিও দিতেন তিনি। শিক্ষা বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান প্রফেসর মর্জিনা আক্তারও তার অত্যান্ত অনুগত বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুষ্টিয়ার একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, টাকা ছাড়া সিরাজুল ইসলাম ওরফে কালা সিরাজ কিছুই বোঝেন না। তিনি সারাক্ষন অবৈধ টাকার ধান্ধায় ব্যস্ত থাকায় তাকে অফিসে পাওয়া যায়না।
বোর্ডের একাধিক সূত্র জানায়, গত ২০২২ সাল থেকে স্কুল পরিদর্শনের নামে সিরাজুল ইসলাম ওরফে কালা সিরাজ অন্তত ৫ কোটি টাকার বেশি ঘুষ আদায় করেছেন। সর্বমহলে তার চাঁদাবাজির ব্যাপক গুঞ্জনও শোনা যায়।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যশোর শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন একাধিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দাবি করেন, বর্তমানে রাষ্ট্র সংস্কার চলছে। রাষ্ট্র সংস্কারের এই সময়ে বর্তমান সরকার যখন সকল সেবা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে যাচ্ছে তখন দুর্নীতিবাজ বিদ্যালয় পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম ওরফে কালা সিরাজ রয়েছে বহাল তবিয়তে। তার ঘুষ-দুর্নীতির কারণে সরকারের ভাবমূর্তি যেমন ক্ষুন্ন হচ্ছে তেমনি যশোর শিক্ষা বোর্ডের বদনামও হচ্ছে। তাই অবিলম্বে দুর্নীতিবাজ সিরাজুল ইসলামের এহেন অপকর্ম বন্ধে দ্রুত তদন্ত পূর্বক বিদ্যালয় পরিদর্শকের পদ থেকে তাকে অপসারণ ও বিভাগীয় শাস্থির দাবি জানান ভূক্তভোগিরা।
এ অভিযোগের বিষয়ে সিরাজুল ইসলাম বলেন, যে সব অভিযোগ উঠেছে সব মিথ্যা। টাকা নিয়েছি, তার প্রমাণ দেন। তিনি বলেন, আমিও আপনার নামে অভিযোগ করতে পারি।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, মহান স্বাধীনতার চেতনা-আদর্শ এবং সমন্বিত ঐক্যে উজ্জীবিত শাহেদ-তানভীর-লিখন পরিষদ থেকে বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচন ২০২৪ এ অংশ নেন তিনি। সিরাজুল ইসলাম এই পরিষদের খুলনা বিভাগীয় যুগ্ম সম্পাদক পদে অংশগ্রহণ করেন।
নির্বাচন সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রথমে তিনি অস্বীকার করেন। পরে বলেন, আমি সদস্য। যারা অভিযোগ করছেন, তারাই নির্বাচন করেছেন। তার প্রমান আমার কাছে আছে। সূত্র জানায়, সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী ও আত্মীয়-স্বজনের নামে একাধিক ব্যাংকে আছে কোটি কোটি টাকা। নামে-বেনামে রয়েছে একাধিক জায়গা, জমি ও বাড়ি। অর্থ সম্পদের বিষয়ে জানতে চাইলে সিরাজুল ইসলাম তদন্ত করতে বলেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা যখন কোটা বিরোধী আন্দোলনে মাঠ সরগরম, তখন তিনি এসব ছাত্রদের সম্পর্কে নানা রকম কটুক্তি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগটি বানোয়াট বলে দাবি করেন।
যশোর সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষক নাহিদ নেওয়াজ লিখেছেন, ‘যশোরের শিক্ষা ক্যাডারের কুতুব সিরাজুল ইসলাম। তিনি ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ জাতীয় নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসারদের ভোট কারচুপি করার জন্য জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা করে সাবেক এমপি নাবিলের কাছ থেকে নিয়ে অফিসারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিতরণ করতেন। তবে যারা এসব ঘুষের টাকা নেননি তাদের কাছ থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি তৎসময়ে ভোট কারচুপির উস্তাদ খ্যাতি লাভ করেছিলেন যশোরে। কথায় কথায় যিনি জামায়াত-শিবিরের বদনাম দিয়ে সাবেক এমপি কাজী নাবিল আহমেদকে দিয়ে শিক্ষকদের বদলি করাতেন। তিনি ইদানিং ভোল পাল্টে নিজেকে নতুন করে ছাত্রদলের ক্যাডার পরিচয় দিতে শুর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
শফিকুল ইসলাম নামে এক শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘শিক্ষা ক্যাডারের এই তথাকথিত উত্তম পুরুষটি পতিত সরকারের শিক্ষা মন্ত্রীর এপিএস নামধারী চৌগাছার কুলাংগার নিকিরির বাচ্চা অমিতকে তথ্য দিয়ে মন্ত্রণালয়ে আমার পিডিএফ ফাইলে আমাকে জামায়াত-বিএনপি বদনাম দিয়ে আমাকে যশোর থেকে রংপুরে বদলি করেছেন। আমি বিসিএস সাধারণ শিক্ষক সমিতির সিরাজের আওয়ামী প্যানেলের বিরদ্ধে জাতীয়তাবাদী প্যানেলে নাছরিন-সোহেল পরিষদে কেন্দ্রীয় কমিটির (খুলনা অঞ্চল) যুগ্ম মহাসচিব পদে নির্বাচন করে ৫৫০ ভোটের ব্যবধানে সিরাজকে পরাজিত করে নির্বাচিত হই। নিকিরির বাচ্চা অমিতকে দিয়ে আমাকে রংপুরে বদলি করে সিরাজ প্রতিশোধ নেয়। আমি ওর বিচার চাই।’
আব্দুল করিম নামে এক শিক্ষক লিখেছেন, ‘এই ব্যক্তি আমার বিরদ্ধে মন্ত্রণালয়ে যতসব আজগুবি তথ্য প্রেরণ করে আমাকে ভোলায় বদলি করে দেন। আমার নামে বিভাগীয় মামলা রুজু করতে সব ধরণের ষড়যন্ত্র করেছেন। চরম নিকৃষ্ট প্রকৃতির এই লোকটি তাকে অবশ্যই সন্দীপ কিংবা চরফ্যাশান অথবা পাটগ্রামে বদলি করার জোর দাবি জানাচ্ছি। এই নিকৃষ্ট লোকের সাথে যুক্ত হয়েছিল একই শিক্ষা বোর্ডের উপ কলেজ পরিদর্শক মদন মহন কুমার দাশ ও পলাতক শিক্ষা মন্ত্রীর এপিএস অমিত কুমার বসু।’ ভুক্তভোগিরা এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
Leave a Reply