দুর্জয় ডেস্ক : বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম সালমান শাহ। তিনি যেন আসলেন আর জয় করে নিলেন কোটি ভক্তের হৃদয়। তিনি আমাদের মাঝে না থাকলেও একবিন্দু কমেনি তার জনপ্রিয়তা ও আবেদন। বরং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে আরও অনেক বেশি রঙিন হয়েছে তাকে নিয়ে ভালোবাসার রঙ।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইস্কাটনের বাসা থেকে সালমান শাহর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তাকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসের অন্যতম জনপ্রিয়, সফল এবং কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ওই সময় অপমৃত্যুর মামলা করেন সালমান শাহর বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। তবে সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন বলে এটি মানতে পারেননি তার মা নীলা চৌধুরী।পরে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই অভিযোগটি হত্যা মামলায় রূপান্তরের আবেদন করা হয়।
নীলা চৌধুরীর দাবি, তার ছেলে আত্মহত্যা করেনি, আত্মহত্যার কোনো আলামত নেই। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আর এর জন্য তার স্ত্রী সামিরা ও আজিজ মোহাম্মদ ভাই জড়িত বলে জানান নীলা চৌধুরী। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী সালমান হত্যার বিচার করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু তিনি বিচার করলেন না।
নীলা চৌধুরী বলেন, আমি জানতাম শেখ হাসিনার আমলে আমার ছেলের বিচার হবে না। আমরা শেখ হাসিনা সরকারের পরিবর্তন চেয়েছিলাম, পতন চেয়েছিলাম। আর নতুন প্রজন্মকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী সরকারের বিদায় দরকার ছিল। অবশেষে তাদের বিদায় হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা নতুন সরকারের কাছে শুধু সালমান শাহ হত্যার বিচার না, সাগর-রুনি হত্যার বিচারও চাই। দেশের ১৮ কোটি মানুষের চাওয়া সালমান শাহ হত্যা মামলার বিচার হোক। হত্যার পেছনে তার স্ত্রী সামিরা, আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ফিল্মের অনেকে রয়েছে। সালমান শাহর জন্য ৪১ জন ভক্ত-অনুরাগী মারা গেছে। আমি মা তো মরতে পারলাম না। আমি যদি মরেও যাই, ভক্ত-অনুরাগীরা এ মামলার বিচার চালিয়ে নেবে।
অভিযোগ করে নীলা চৌধুরী বলেন, বনজ কুমার অনেক টাকা খেয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন। আমাদের কাছে বারবার টাকা চাওয়া হয়েছে। সালমান শাহর অডিও রেকর্ডের ক্যাসেট পিবিআইতে দিয়েছিলাম, কিন্তু সেটা ফেরত পাইনি। এ মামলার বিচার চাইতে গিয়ে আইনমন্ত্রী, পিপি আব্দুল্লাহ আবু, আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আমাকে অনেক হেনস্তা করেছে। আব্দুল্লাহ আবু রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হয়েও তিনি সালমান শাহ হত্যা মামলার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন।
তিনি বলেন, দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফিরব। এখন দেশে গেলে আমার নিরাপত্তা নেই। ২০১৮ সালে ফোনে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া সালমান শাহর মা হওয়ায় আমাকে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছে। পরে দেশ ছেড়ে এখানে (লন্ডনে) আশ্রয় নিয়েছি।
১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই অভিযোগটি হত্যা মামলায় রূপান্তরের আবেদন করা হয়। এরপর এ বিষয়ে তদন্ত করতে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা সিআইডিকে নির্দেশ দেন আদালত। তদন্ত শেষে ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি। প্রতিবেদনে এ ঘটনাকে আত্মহত্যা বলা হয়। পরে ওই বছরের ২৫ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন গৃহীত হয়। তবে প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করে রিভিশন মামলা করেন কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। পরে ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠান আদালত।
দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক। ওই প্রতিবেদনেও সালমান শাহর মৃত্যুকে অপমৃত্যু বলা হয়। কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরীর মৃত্যুর পর ছেলে হত্যা মামলার বাদী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন মা নীলা চৌধুরী। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজির আবেদন করেন। সর্বশেষ মামলাটি পিবিআই তদন্ত করে। ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর আদালত ওই প্রতিবেদন গ্রহণ করে মামলাটি নিষ্পত্তি করেন। ২০২২ সালের ১২ জুন এই আদেশের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে রিভিশন মামলা দায়ের হয়। আগামী ২ জানুয়ারি রিভিশন মামলার বিষয়ে শুনানি হবে।