যশোর প্রতিনিধি : যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়নের বড় মেঘলা গ্রামের জাফর হোসেন (৩৫)। ৪ মাস আগে ইউরোপের উদ্দেশ্যে দেশত্যাগ করেন৷ ইচ্ছে ছিল ইউরোপে গিয়ে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন করবেন৷ হাঁসি ফোটাবেন পরিবারের মুখে। সেজন্য এনজিও থেকে ৪ লাখ, সুদ করে ৩ লাখ এবং মা ও স্ত্রীর স্বর্ণের গহনা বন্ধক রেখে ১ লাখ। মোট ৮ লাখ টাকার বিনিময়ে দেশ ছাড়েন তিনি।
কিন্তু বিধিবাম। জাফর হোসেনের আর ইউরোপ যাওয়া হয়নি। এর আগেই দালাল চক্র তাকে রাশিয়ার আরেক দালালচক্রের কাছে বিক্রি করে দেয়। ফলে সে দেশে গিয়ে তাকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নামতে হয়েছে যুদ্ধের ময়দানে।
জাফর হোসেন যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়নের বড় মেঘলা গ্রামের খায়রুল সরদারের ছেলে। জাফরের মা হাসিনা খাতুন ও স্ত্রী খাদিজা খাতুন। তার দুই শিশু ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
জাফরের পরিবার জানিয়েছে, গেল বছরের নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলো জাফর। চার মাস পর পরিবারকে ফোন করে তিনি জানিয়েছেন বাংলাদেশের দালাল চক্র তাকে রাশিয়ার আরেক দালালচক্রের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে৷ ওই চক্রটি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে তাকে যুদ্ধের প্রশিক্ষণে যেতে বাধ্য করছে। প্রশিক্ষণে যেতে না চাইলে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। মারধর করছে এমনকি খবার দেয়াও বন্ধ করে দিচ্ছে।
জাফরের মা হাসিনা খাতুন বলেন, গত চার মাস আগে এনজিও থেকে ৪ লাখ ও সুদ করে ৩ লাখ এবং স্বর্ণালঙ্কার বন্ধক রেখে ১ লাখ। মোট ৮ লাখ টাকা দিয়ে ছেলেকে রাশিয়া পাঠানো হয়। দালালের প্রতারণার ফাঁদে পরে সৌদিতে একমাস রাখে, এরপর দুবাই থেকে নতুন দালাল তাকে লিবিয়া নিয়ে যায়। সেখান থেকে রাশিয়ায় সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। যেকোনো মুহূর্তে যুদ্ধের ময়দানে নামতে হবে বলে ছেলে তাকে জানিয়েছে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, এখন আমার ছেলে যুদ্ধের ময়দানে কান্নাকাটি করছে। সে জানিয়েছে, যুদ্ধ করতে গিয়ে বাংলাদেশি একজন মারা গেছে আরেকজন গুরুতরভাবে আহত হয়েছে। আমার ছেলে এখন বাংলাদেশে ফিরে আসতে চাইছে। না হলে তার মৃত্যু হবে বলে জানিয়েছে।
সরকারের কাছে বুকের মানিককে ফিরে পাওয়ার আকুতি জানিয়েছেন কিংকর্তব্যবিমূঢ় অসহায় মা হাসিনা।
জাফরের স্ত্রী খাদিজা খাতুন বলেন, সাইপ্রাস যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকার ড্রিম হোম ট্রাভেলসে টাকা জমা দিয়েছিলেন জাফর। কিন্তু সাইপ্রাস না পাঠিয়ে ছলছাতুরি করে তাকে রাশিয়ায় পাঠিয়েছে এজেন্সিটি। ভাগ্য বদলের আশায় দেশ ছেড়ে এখন যুদ্ধ করতে বাধ্য করা হচ্ছে জাফর। যুদ্ধ না করলে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে তাকে। তিনি স্বামীকে ফিরে পাওয়ার আকুতি জানিয়েছেন সরকারের কাছে।
এদিকে দেশে এ খবর পৌঁছানোর পাওনাদাররা টাকা ফেরৎ পেতে নানা ভাবে জাফরের পরিবারের উপর চাপসৃষ্টি করছে৷ কুল কিনারা হারিয়ে পরিবারটি অথৈ সাগরে পড়ে সরকারের আশুহস্তক্ষেপ কামনা করেছে ৷ ঢাকার ড্রিম হোম ট্রাভেলসের সব গুলো যোগাযোগ নাম্বার বন্ধ পাওয়ায় পরিবারটি এজেন্সির সাথেও যোগাযোগ করতে পারছেনা৷
তথ্য মিলেছে , দেশের বিভিন্ন জেলায় মানবপাচারের একটি বড় ফাঁদ রয়েছে ড্রিম হোম ট্রাভেলস নামে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানের। গ্রাম পর্যায় থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন স্তরে তাদের একটি চক্র সক্রিয় রয়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ থেকে রাশিয়া পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রায় প্রতিটি পয়েন্টে এই চক্রের সদস্যরা কাজ করে।
Leave a Reply