1. admin@channeldurjoy.com : admin : Salahuddin Sagor
  2. news.channeldurjoy@gmail.com : Editor :
রোহিঙ্গা ইস্যুই কি মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের কারণ? - চ্যানেল দুর্জয়

রোহিঙ্গা ইস্যুই কি মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের কারণ?

  • প্রকাশিত : শুক্রবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

গত প্রায় এক দশক ধরে মিয়ানমারে যে গণতন্ত্রের চর্চা হয়ে আসছে তা শর্তযুক্ত গণতন্ত্র বৈ কিছু নয়; তা-ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার অধীন শর্তযুক্ত গণতন্ত্র।

এ নিয়েও অনেকের সন্তুষ্টি ছিল হয়তো। তবে সম্প্রতি সেই সন্তুষ্টিতেও ছেদ পড়েছে। ছেদ পড়েছে একেবারে কপিবুক উদাহরণের এক সামরিক অভ্যুত্থান দ্বারা।

কপিবই উদাহরণের সামরিক অভ্যুত্থান এজন্য যে, ক্যুর জন্য এ মুহূর্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্র প্রস্তুত ছিল না, আন্তর্জাতিক পরিবেশ তৈরির তো প্রশ্নই আসে না।

কোনো বৈপ্লবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেনি জনগণ। তা সত্ত্বেও উসকানি ছাড়াই ক্ষমতা নিজ হাতে তুলে নিল মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। নবগঠিত জাতীয় আইনসভার প্রথম অধিবেশন বসার কথা ছিল সোমবার সকালে।

ওটি শুরু হওয়ার আগেই দেশটির সামরিক বাহিনী (যাকে স্থানীয় ভাষায় তাতমাডও বলা হয়) আচমকা ঘোষণা দিয়ে বসল, গত বছর নভেম্বরের নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হওয়ায় গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষার্থে শাসনক্ষমতা গ্রহণ করল তারা।

এরপর যথারীতি গ্রেফতার হলেন নেত্রী অং সান সু চি; অফিসিয়ালি তখনো তিনি রাষ্ট্রের উপদেষ্টা (স্টেট কাউন্সেলর), কার্যত দেশের একমাত্র গ্রহণযোগ্য নেতা। তার সঙ্গে গ্রেফতার হলেন মুষ্টিমেয় কিছু অফিসার এবং কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। ২০০৮ সালে যে সংবিধানের খসড়া তৈরি হয়েছিল সেটিকে রহিত করে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করলেন সামরিক বাহিনীর ‘তৎকালীন’ সর্বাধিনায়ক জেনারেল মিং অং লিং; কার্যত যিনি এখন স্বৈরশাসক।

তিনি অঙ্গীকার করেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না মিয়ানমারে এমন একটি নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে যেখানে থাকবে প্রকৃত ও সুশৃঙ্খল বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, ততক্ষণ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকছে সেনাবাহিনী। এ ততক্ষণটা কতক্ষণ সেটি পরিষ্কার করেননি তিনি। ধারণা করা যায়, কালটি অনির্দিষ্ট।

মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনা পরিক্রমা অবাক করেনি আমাকে। আমার মনে শুধু প্রশ্ন জাগিয়ে তুলেছে, এখন কেন? এভাবে কেন? দেশটিতে সেনাবাহিনী এমনিতেই শক্তিশালী। তাদের ওপর কথা বলার মতো কেউ নেই সেখানে। তারপরও কেন দেশ ও সংবিধানের নামে ঘটাতে হলো অভ্যুত্থান? সাধারণত জনপ্রিয় কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসীন থাকলে সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থানের ঝুঁকি নেয় না।

কিন্তু মিয়ানমারে কী এমন ঘটল যাতে করে অভ্যুত্থানের সব কানুন বর্জন করে একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় গণতান্ত্রিক দলকে হটিয়ে দিয়ে ক্ষমতায় বসতে হলো তাদের? ২০১৫ সালে ভূমিধস বিজয় পেয়ে ক্ষমতায় এসেছিল অং সান সু চির ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি)। করোনা প্রকোপের মাঝে গত বছর নভেম্বরে যে নির্বাচনটি হলো সেখানেও এনএলডি পেয়েছে ৮০ শতাংশের বেশি ভোট। দেশি-বিদেশি সব পর্যবেক্ষক বলেছেন, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয়েছে নির্বাচনটি। সুতরাং বলার অপেক্ষা রাখে না, সু চি প্রশাসনের বিপক্ষে কিংবা সামরিক শক্তির অভ্যুত্থানের পক্ষে মোটেও প্রস্তুত ছিল না ক্ষেত্র।

তা সত্ত্বেও কেন জনপ্রিয় একটি দলকে শত্রুতে পরিণত করল সেনাবাহিনী? তাদের ক্ষমতা তো সংবিধানের মাধ্যমেই রক্ষিত। স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও সীমান্ত-এ তিন মন্ত্রণালয় তাদের অধীনে। জাতীয় ও আঞ্চলিক আইনসভার ২৫ শতাংশ আসনও সংরক্ষিত তাদের জন্য। সংবিধানের মৌলনীতি সংশোধনের বেলায় তাদের দেওয়া হয়েছে ভেটো ক্ষমতা। দেশের মধ্যে সরকার তথা বেসামরিক প্রশাসনকে না জানিয়ে সেনাবাহিনী যদি কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়, আইন অনুযায়ী সেক্ষেত্রে তাদের জবাবদিহি নিশ্চিতের তেমন কোনো ব্যবস্থাও নেই। তার মানে প্রকৃত অর্থে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থেকে স্রেফ অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী? কিন্তু কেন?

তার একটা কারণ আমি মনে করি, ২০১৫ সালের পর থেকেই জেনারেল মিং অং লিংয়ের সঙ্গে মানসিক দূরত্ব বাড়ছিল অং সান সু চির। জাতীয় অনুষ্ঠান ছাড়া তাদের একত্রে দেখা যায়নি একেবারেই। দ্বিতীয়ত, কয়েক দশক নির্যাতনের শিকার এনএলডি সাংগঠনিকভাবে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সাংঘর্ষিক স্থানে উপনীত হয় সাম্প্রতিক বছরগুলোয়। দীর্ঘ সামরিক শাসন শেষে গণতান্ত্রিক সরকারের শাসনামলে নতুন কিছু দ্বন্দ্ব দেখা দেয় সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনের মাঝেও।

শেষ পর্যন্ত রেষারেষিটি পৌঁছে জাত, বৌদ্ধ ও জাতিগত সংখ্যাগরিষ্ঠ বার্মার জনগণের মাঝে; অর্থাৎ ধর্ম বনাম জাতীয়তাবাদ। আর সে উৎকণ্ঠায়ই এমন এক অর্বাচীন তর্ক মঞ্চ অধিকার করে নেয়, যাতে করে সৃষ্টি হয়েছে কেউ কাউকে ছাড় না দেওয়ার মানসিকতা। খেয়াল করার মতো বিষয়, সামরিক বাহিনীর সাংবিধানিক, আইনগত ও আর্থিক ক্ষমতা খর্ব করার সুযোগ কিন্তু কখনোই দেওয়া হয়নি সু চিকে।

তবুও মুখোমুখি যে সংঘর্ষ সৃষ্টি হলো, তার অন্যতম কারণ হচ্ছে সামরিক-বেসামরিক প্রশাসন ও গণতান্ত্রিক দলগুলো-এ তিন পক্ষের মাঝে ভারসাম্য রক্ষায় একটা বাফার জোন প্রয়োজন ছিল; যে সমীকরণে থাকার কথা ছিল সুশীলসমাজ, বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকদের। দুর্ভাগ্যবশত সু চি নিশ্চিত করতে পারেননি সেটি। ফলে পুরো ক্ষমতাব্যবস্থা ভারসাম্যহীন হয়ে সৃষ্টি করে সু চি বনাম লিং দ্বন্দ্ব এবং যার পরিণাম আজকের এ সামরিক অভ্যুত্থান।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যক্তিগত বিষয়। সেটি হলো, প্রথমে জেনারেল মিং অং লিংয়ের অবসরে যাওয়ার কথা ছিল ২০১৫ সালেই। কিন্তু শুধু তাকে ক্ষমতায় রাখার জন্য মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জেনারেলদের চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয় ৬০ থেকে ৬৫ বছরে। সে হিসাবেও চলতি বছর অবসর পান তিনি। ঘটনা হলো, তার এ গত পাঁচ বছরের মধ্যেই ঘটে গেছে জঘন্য আরাকান গণহত্যা। আর সে ঘটনায় জেনারেল মিংয়ের ছিল প্রত্যক্ষ মদদ। একাধিক কূটনৈতিক সূত্র আভাস দিয়েছিল, অবসরে যাওয়া মাত্রই আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যার দায়ে শুরু হতে পারে জেনারেল মিংয়ের বিচার; যেখান থেকে তাকে বাঁচাতে পারবে না নোবেলজয়ী অং সান সু চির আন্তর্জাতিক প্রভাবও। কেউ কেউ বলছেন, এ রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিজের গা বাঁচানোর চেষ্টা হিসাবেই দেশ ও জাতির স্বার্থ, এমনকি খোদ সেনাবাহিনীর স্বার্থের বিরুদ্ধেও খানিকটা নেমে সাম্প্রতিক এ সামরিক অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিলেন জেনারেল মিং অং লিং।

নিউইয়র্ক টাইমস থেকে সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর : জায়েদ ইবনে আবুল ফজল

ডেভিড স্কট ম্যাথিসন : মিয়ানমার বিশেষজ্ঞ

এই বিভাগের আরো সংবাদ

আজকের দিন-তারিখ

  • শুক্রবার (বিকাল ৪:২৮)
  • ২৯শে মার্চ ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৯শে রমজান ১৪৪৫ হিজরি
  • ১৫ই চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ (বসন্তকাল)

এই মুহুর্তে সরাসরি সংযুক্ত আছেন

Live visitors
302
3177984
Total Visitors

©All rights reserved © 2020 Channel Durjoyচ্যানেল দুর্জয় মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লালিত একটি অনলাইন স্বাধীন গণমাধ্যাম, চ্যানেল দুর্জয়ের প্রতিনিধির নিকট থেকে শুধু তার প্রেরিত সংবাদ গ্রহণ করা হয়, সংশ্লিষ্ঠ প্রতিনিধি যদি সমাজ/রাষ্ট্রবিরোধী কোন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়, তাঁর দ্বায় দুর্জয় কর্তৃপক্ষ বহণ করবেনা
Customized BY NewsTheme