নিজস্ব প্রতিবেদক : বেনাপোল বন্দর দিয়ে গত ৯ দিনে ভারতে ইলিশ রপ্তানি হয়েছে ৬০০ মেট্রিক টন ৪৪০ কেজি ইলিশ। এবারের দুর্গাপূজায় ভারতে বিভিন্ন বন্দর দিয়ে মোট ৩ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির কথা রয়েছে। ১১ অক্টোবর পর্যন্ত ভারতে এসব ইলিশ রপ্তানি করা যাবে।
তবে দেশে ইলিশ সংকট, বাজারে দাম বৃদ্ধিসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রপ্তানি শেষ করা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। হাতে রয়েছে আর মাত্র ৫ দিন। ভারতীয় আমদানিকারকরা সময় বাড়ানোর দাবি নিয়ে এরইমধ্যে কলকাতায় বাংলাদেশ দূতাবাসে চিঠি পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ বছরও দেশের ৭৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৩ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়ে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে অক্টোবর মাস ইলিশ প্রজননের মৌসুম হওয়ায় ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ আহরণ ও বিক্রি নিষেধাজ্ঞা জারিতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রপ্তানি সমাপ্ত নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। গত বছরও অনুমতির সব ইলিশ রপ্তানি করতে পারেননি তারা। তাই এ বছর রপ্তানির সময়সীমা আরও বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন আমদানি-রপ্তানিকারকরা।
গত ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত ৯ কার্যদিবসে মাত্র ৬০০ মেট্রিক টন ৪৪০ কেজি ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে ৫ অক্টোবর ৭২ মেট্রিক টন, ৪ অক্টোবর ৮৩ মেট্রিক টন ৯০০ কেজি, ৩ অক্টোবর ৯৮ মেট্রিক টন ৬০০ কেজি, ৩০ সেপ্টেম্বর ৯১ মেট্রিক টন ৫০০ কেজি, ২৭ সেপ্টেম্বর ৩১ মেট্রিক টন ৭৬০ কেজি, ২৬ সেপ্টেম্বর ৪৮ মেট্রিক টন ৯৮০ কেজি, ২৫ সেপ্টেম্বর ৫৬ মেট্রিক টন ৫০০ কেজি, ২৩ সেপ্টেম্বর ৪০ মেট্রিক টন ১০০ কেজি ও ২১ সেপ্টেম্বর ৭৭ মেট্রিক টন ১০০ কেজি ইলিশ পাঠানো হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশে তুলনামূলক ইলিশের যোগান না থাকলেও প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে প্রতিবছর দুর্গাপূজায় ওপার বাংলার মানুষের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়ে আসছে সরকার।
এদিকে ইলিশ রপ্তানির খবরে যশোরের বাজারগুলোতে ইলিশ সংকট দেখা দিয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে লাগামহীন দাম বাড়ানোয় সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে রসনাবিলাস বাঙালির জাতীয় মাছ ইলিশ। চড়া দামের কারণেই মধ্য ও নিম্নবিত্ত মানুষের অধিকাংশের পাতে এখনো ওঠেনি ইলিশ। শহরের বড় বাজারের মাছ বিক্রেতা শংকর কুমার জানান, কেজি সাইজের ইলিশ মাছ ১৪-১৫শ টাকা এবং তার বড় মাছ ১৬শ-২ হাজার টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তিনি জানান, ভারতে রপ্তানির কারণে ইলিশ মিলছে না আড়তগুলোতে, যা পাওয়া যাচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে। এ কারণে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।
ইলিশ রপ্তানিকারক বেনাপোলের সততা ফিসের ম্যানেজার রকি মাহামুদ জানান, ইলিশ প্রজননের জন্য ২২ দিন ইলিশ ধরা, ক্রয় ও বিক্রয় নিষেধ করেছে সরকার। এ বছর ইলিশ রপ্তানির সময় বাড়ানো না হলে অনুমোদিত ইলিশ নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ রপ্তানি করা কঠিন হয়ে যাবে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক আব্দুল জলিল বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এবারের দুর্গাপূজায় ভারতে মোট ৩ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির কথা রয়েছে। এর মধ্যে গত ৯ দিনে বেনাপোল দিয়ে ৬০০ মেট্রিক টন ৪৪০ কেজি ইলিশ ভারতে রপ্তানি হয়েছে।
বেনাপোল মৎস্য অফিসের ফিশারিজ কোয়ারেন্টাইন অফিসার মাহবুবুর রহমান বলেন, সরকারের বিশেষ অনুমতিতে ইলিশ রপ্তানি শুরু হলেও অনেক প্রতিষ্ঠান এখনো রপ্তানি করতে পারেনি। ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত শেষ সময় থাকলেও ইলিশ প্রজননের কারণে ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ আহরণ ও বিক্রি নিষেধাজ্ঞা থাকায় ১১ অক্টোবরের পর আর কোনো ইলিশ ভারতে রপ্তানি হবে না।