যুবদল নেতাদের সহযোগিতায় ওবাইদুল কাদের পালানোর তথ্য নিয়ে ধোঁয়াশা- অভিযোগকারীর কাছেও নেই প্রমাণ!
যশোর প্রতিনিধি: ‘ওবায়দুল কাদেরকে ভারতে পালাতে সহযোগিতা করেছেন যশোর জেলা যুবদলের শীর্ষ দুই নেতা’ বুধবার (৮ জানুয়ারি) সকাল থেকে বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্ম ও সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন তথ্য ছড়িয়ে পড়লে যশোর সহ দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) যশোর জেলা যুবদলের বহিষ্কৃত প্রচার সম্পাদক এসকেন্দার আলী জনি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক লাইভে এসে এসব কথা বলেন৷
ফেসবুক লাইভে জনি দাবি করেন ৫ আগস্টের পর যশোর সেনানিবাসে ছিলেন পতিত সরকারের সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।সেখান থেকে তাকে ভারতে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছেন জেলা যুবদল সভাপতি এম তমাল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা।
মুহুর্তেই বিষয়টি ভাইরাল হলে তুমুল সমালোচনার সৃষ্টি হয় সোস্যাল মাধ্যমে। তবে অধিকাংশ নেটিজেনরা এসকেন্দারের এমন স্পর্শকাতর তথ্যের সতত্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন৷
এবিষয়ে জানতে চাইলে যুবদলের বহিস্কৃত নেতা এসকেন্দার আলী জনি বলেন, তার ফেসবুক লাইভে বলা কথাগুলি সত্য। তবে তার কাছে সঠিক কোন প্রমাণ নেই। তিনি মানুষের কাছ থেকে শুণেছেন৷ তার ব্যক্তিগত একটি মোবাইলে প্রমাণ ছিল সেটি হারিয়ে গেছে। প্রমাণ এনএসআই ডিজিএফআইয়ের কাছে থেকে নিতে বলেন তিনি৷ তার দাবি সে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন সে কারনে তাকে ষড়যন্ত্র করে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এছাড়াও শেখ হেলাল পরিবারের ৬ সদস্য, জেলা আওয়ীমীলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার সহ আওয়ামী প্রভাবশালী নেতাদের ভারতে পাঠানোর নেপথ্যে যুবদলের ওই দুই নেতাকে দায়ি করেন এসকেন্দার৷
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ৫ আগস্টের পর জেলা যুবলীগের প্রচার সম্পাদক এসকেন্দার আলী জনি তার নিজ এলাকা শহরতলীর বালিয়াডাঙ্গায় ব্যক্তিগত কার্যালয় খুলে বসেন, সেখানে বিচার শালিশের মাধ্যমে অর্থ আদায়, নিয়মিত মাদক সেবন, আওয়ামী নেতাকর্মীদের সাথে অর্থিক সুবিধা আদায়, হামলা ভাংচুর সহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন৷ এ সকল বিষয়ে তাকে সাবধান করতে বিএনপির কার্যালয়ে ডাকা হলে সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সাথে তর্কাতর্কিতে লিপ্ত হন৷ তারপর থেকেই ওই সময় পার্টি অফিসে থাকা নেতাদের নামে ফেসবুকে নিয়মিত বিষোদগার শুরু করেন জনি৷
বিষয়টি জেলা বিএনপির নজরে এলে গেল ৩০ সেপ্টেম্বর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এসকেন্দারের অপপ্রচার বন্ধ সহ দলীয় গঠনতন্ত্র ভঙ্গের দায়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কেন্দ্রীয় যুবদলের নেতাদের সাথে আলোচনার নির্দেশ প্রদান করেন জেলা যুবদলের সভাপতি ও সম্পাদককে।
পরে কেন্দ্রীয় যুবদল সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়ন দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে এসকেন্দার আলী জনি কে দল থেকে বহিষ্কার করেন৷ ১৭ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় যুবদলের দপ্তর সম্পাদক নুর ইসলাম সোহেল স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন৷
অপরদিকে চলতি মাসের যে কোন সময় জেলা যুবদলের কমিটি ঘোষণার আবহ শোণা যাচ্ছে। এ কমিটিতে বিতর্কিত এসকেন্দার আলী জনি সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী ছিলেন৷ দল থেকে বহিষ্কারের পর আরও বেসামাল হয়ে পড়েছেন তিনি। বিভিন্ন সময় ফেসবুক লাইভে এসে বিভিন্ন বিষয়ে জেলার শীর্ষ নেতাদের নিয়ে স্পর্শকাতর কথা বার্তা বলছেন৷ এতে করে শীর্ষ নেতারা প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন। গণমাধ্যমকর্মীরাও তার বক্তব্যের সত্যতা অনুসন্ধানে গিয়ে তথ্য প্রমাণ না মেলায় বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন৷
আজ (৮জানুয়ারি) বুধবার সকাল থেকে ভাইরাল হওয়া ওবায়দুল কাদের ইস্যুতে ইসকেন্দারের বক্তব্য গণমাধ্যমকর্মী দের ব্যাপক বিড়ম্বনায় ফেলেছে৷ ভবিষ্যতে এ ধরনের ডিস ইনফরমেশন ছড়ানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন ও সম্পাদক এসএম তৌহিদুর রহমান।
এ বিষয়ে জেলা যুবদলের সভাপতি এম তমাল আহমেদ জনান, জনির শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পর্যন্ত কিন্তু তার দম্ভ গেজেটেড অফিসারের মত। এতদিন ধরে সে জেলা যুবদল নিয়ে প্রতিনিয়ত ফেসবুকে বিভিন্ন অসংলগ্ন কথা বলে আসছিলো কিন্তু মিডিয়া কাভারেজ পাচ্ছিলোনা৷ মিডিয়া কাভারেজ ও পদ ফিরে পেতে সে এবার মনগড়া কল্পকাহিনির সাথে ওবাইদুল কাদের ট্যাগ লাগিয়েছে৷ শীর্ষ নেতাদের সাথে পরামর্শ করে দ্রুতই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে৷
জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা বলেন, বিভিন্ন সময়ে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট করতেন জনি। এছাড়া তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগও রয়েছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাবেরুল হক সাবুর সুপারিশে কেন্দ্রীয় যুবদল এ সিদ্ধান্ত নেয়।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নুর ই আলম সিদ্দিকী জানিয়েছেন এ ধরনের কোন বিষয় জেলা পুলিশের জানা নেই। সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ সহ এসকেন্দারকে অভিযোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি৷ তার লাইভ ভিডিওটি পুলিশ সংরক্ষণ করেছে।
Leave a Reply