এমএম ইয়াসিন ।। বাবা পুলিশের সাব ইনসপেক্টর আর মেয়ে সদ্য সেনাবাহিনীতে নিযুক্ত ক্যাপ্টেন। বাবা-মেয়েতে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে একে অপরকে স্যালুট করার একটি ছবি ভাসছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। নেটিজেনদের দু’একজন পদমর্যাদা আর সম্পর্কের যুক্তি দিয়ে নেতিবাচক কথা বললেও বেশিরভাগ মানুষই প্রশংসা করছেন, অভিনন্দন শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সিক্ত করে তুলেছেন পিতা-কন্যাকে। দুই বাহিনীর এ দুই কর্মকর্তার স্যালুট দেওয়ার এ ছবিটি দুনিয়াজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
সেনাবাহিনীতে সদ্য চাকরিপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন ডা. শাহনাজ পারভীন। আর তার গর্বিত বাবা রংপুরের গঙ্গাচড়া মডেল থানার এসআই আব্দুস সালাম। চাকরি পাওয়ার পর প্রথম তারা মুখুমুখি হলে মেয়ে শাহনাজ পারভীন সামরিক কায়দায় তার বাবাকে স্যালুট জানান। গর্ব আর ভালোলাগার অন্যরকম এক অনুভূতি থেকে মেয়েকেও স্যালুট করেন। এ সময় আনন্দঅশ্রুতে ছলছল করে ওঠে দুজনের চোখ।
আচমকা ঘটে গেলেও পাশে থেকে বাবা-মেয়ের মধ্যকার আবেগঘন মুহুর্তটি মোবাইলফোনে ক্যামেরাবন্দী করেন এক পথিক। ছবিটি নিজের ফেসবুকে শেয়ার করেন তিনি। পরে সেই ছবি ছড়িয়ে পড়ে। সাব ইনসপেক্টর আব্দুস সালামের গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার চন্দ্রখানায়। চাকরির সুবাদে তিনি পরিবার নিয়ে রংপুরে বসবাস করছেন।
আব্দুস সালাম তিন সন্তানের জনক। তার তিন সন্তানই মেয়ে। ছেলে সন্তানের অভাববোধও নেই পরিবারে। বড় মেয়ে শাহনাজ পারভীন রংপুর মেডিকেল কলেজের ৪৩তম ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। সেশন ২০১৩-২০১৪। ইন্টার্ন শেষ করে সম্প্রতি ক্যাপ্টেন পদে চাকরি পেয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে। মেঝ মেয়ে উম্মে সালমা একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। তিনি পড়ছেন তৃতীয় বর্ষে। সবার ছোট স্মৃতিমনি মীম এসএসসি পরীক্ষার্থী।
নিভৃত গ্রামের স্কুল থেকে উঠে আসা শাহনাজ পারভীন ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। ফুলবাড়ী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর ভর্তি হন ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজে। ২০১২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাতেও কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। পরে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০১৩-১৪ সেশনে রংপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান শাহনাজ পারভীন।
সোমবার (২ আগস্ট) সময় সংবাদের সঙ্গে কথা হয় পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুস সালামের সঙ্গে। তিনি বলেন, বড় মেয়ে শাহনাজ পারভীন ইন্টার্ন শেষ করে সেনাবাহিনীতে ক্যাপ্টেন পদে চাকরি পেয়েছে। ছোট থেকেই সে পড়ালেখায় মনোযোগী। যা পড়ত-দেখত খুব সহজেই তাই মুখস্ত হয়ে যেত। সারাদিনে ছয় থেকে আট ঘণ্টা পড়ালেখা করত। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা বা অহেতুক ঘোরাফেরা ছিল না। সারাদিন নিজেকে কীভাবে প্রতিষ্ঠিত করবে সেই চিন্তাটা ওর মাথায় ঘুরঘুর করত।
তিনি আরও বলেন, আমার সন্তানদের আমি সব সময় সাহস দিয়ে আসছি। ওদেরকে মনোবল বাড়ানোর জন্য উৎসাহিত করি। কোনো কাজ ও বিষয়কে কঠিন করে ভাবতে দেইনি। সকল পরিস্থিতিতে ধৈর্য, চেষ্টা আর আদর্শ থেকে বিচ্যুত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। মা-বাবাই সন্তানের ভালো চায় সেটা সন্তান নিজে বাবা-মা হলে না বুঝতে পারবে না। কিন্তু মা-বাবার স্বপ্ন ও চেষ্টাটা তারা যদি উপলব্ধি করতে পারে, তাহলে প্রত্যেক মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ সম্ভব। আমি আমার বড় মেয়ের মতো বাকি দুই মেয়েকেও চিকিৎসক বানাতে চাই। তবে সব কিছুর কৃতিত্ব শাহনাজের মায়ের। সঙ্গে শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকাও রয়েছে।