1. admin@channeldurjoy.com : admin : Salahuddin Sagor
  2. news.channeldurjoy@gmail.com : Editor :
বড়বেলুনের বড়মা - চ্যানেল দুর্জয়
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৭:৩৭ অপরাহ্ন

বড়বেলুনের বড়মা

  • প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই, ২০২০

উজ্জ্বল রায় নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বড়বেলুনের প্রাচীন নাম বিল্বপত্তন। কাটোয়ার অন্তর্গত কেতুগ্রামের বহুলা পীঠের মরাঘাট নদীতীরের মহাশ্মশানে একসময় থাকতেন স্বামী ভৃগুরাম নামে এক মাতৃসাধক। তিনি সর্বদাই মগ্ন থাকতেন মাতৃ সাধনায়। একদিন মা কালীর প্রত্যাদেশ পেলেন বড় বেলুন-এ গিয়ে পঞ্চমুন্ডি আসন স্থাপন করে দেবী কালিকাকে প্রতিষ্ঠা করে তাঁর মহিমা প্রচার করার। স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পরেই সাধক ভৃগুরাম বেরিয়ে পড়লেন বিল্বপত্তনের খোঁজে। দেবীর করুণায় অবশেষে তিনি উপস্থিত হলেন বিল্বপত্তনে। সেই স্থান তখন ছিল অত্যন্ত বিভীষিকাময়। সমগ্র অঞ্চলটা ছিল বড় বড় বেলগাছে ভরা। সেই বনে সাহস করে কেউ ঢুকতে পারত না। সেই বেল বনের পূর্ব প্রান্তে ছিল একটি মহাশ্মশান। সেখানে একদল ডাকাত প্রতিদিন কালী পুজো করে ডাকাতি করতে যেত। সেই গভীর জঙ্গলের পূর্ব প্রান্তে অতি নির্জনে ভৃগুরাম আসন পাতলেন। তারপর কেতুগ্রামের মৃত্যুঞ্জয় বন্দোপাধ্যায়ের পুত্র স্বামী ভৃগুরাম কঠোর কঠিন সাধনা করতে লাগলেন বড় বেলুন মহাশ্মশানে। একসময় মহাসাধক পঞ্চমুন্ডির আসন স্থাপন করলেন বড় বেলুনের মহাশ্মশানে। বহুলাপীঠ থেকে আনা একটি পাথরের প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করলেন পঞ্চমুণ্ডের আসনে। এই বিগ্রহই কালে কালে প্রসিদ্ধিলাভ করল ভৃগুরামের আরাধিত বড়মা নামে। ভৃগুরাম পঞ্চমুণ্ডির আসনে বড়মাকে প্রতিষ্ঠা করেন আনুমানিক ১১৮৪ সালে। প্রতি মাসের অমাবস্যায়, অষ্টমী তিথিতে, শনি ও মঙ্গলবার-এ বিশেষ পুজো হয় বড়মার। প্রতিবছর কার্তিক মাসে অমাবস্যা থেকে তিনদিন পুজো ও উৎসব হয় মনকাড়া। সেইসময় দূরদূরান্ত থেকে অগণিত ভক্ত যাত্রীদের সমাগম হয়। তৃতীয় দিন সন্ধ্যাবেলায় ১৪ হাত উচ্চতার বিগ্রহ রথে করে গ্রামের পশ্চিমে সরকারদের বড় পুকুরে বিসর্জন দেওয়া হয়। জানা যায় মহাসাধক ভৃগুরাম প্রতিদিন আসনে বসিয়ে মায়ের নাম গান করতে করতে মাটি দিয়ে মাতৃমূর্তি তৈরি করতেন। নিজের হাতে গড়া সেই মাটির মূর্তি পূজা করতেন আপনভাবে। এই ভাবেই দিনের পর দিন মাসের পর মাস কেটে যেতে লাগলো। একদিন ভৃগুরাম মাটির মূর্তি তৈরি করে রেখে স্নানে গিয়েছিলেন। স্নান শেষ করে ফিরে এসে দেখেন তাঁর তৈরি বিগ্রহটি পরিবর্তন হয়ে গেছে। তার গড়া বিগ্রহের জায়গায় এক অদ্ভুতদর্শন বিগ্রহ রয়েছে। ভৃগুরাম অত্যন্ত ভয় পেয়ে গেলেন সেই অদ্ভুতদর্শন ভীষণা মূর্তি দেখে। তাঁর বাকশক্তি যেন রুদ্ধ হয়ে গেল। সাধক ভাবলেন মা হয়তো ভাবছেন আমার এখানকার কাজ শেষ হয়ে গেছে। তাই তিনি সেই স্থান পরিত্যাগ করে চলে যেতে মনস্থ করলেন। ঠিক এরকম পরিস্থিতিতে ভক্ত ভৃগুরামকে অভয় দিয়ে মা বললেন, বাবা আমার নাম বড়মা। তুমি যে মূর্তি দেখছো এই মূর্তিই এখন থেকে আমার পুজো হবে যুগ যুগ ধরে। যারা আমাকে অন্তরের ভক্তি পুষ্প দিয়ে পুজো করবে তাদের কোনো ভাবনা থাকবে না। তিনি আরো বললেন, তুমি এখনো বিয়ে করোনি বিয়ে না করলে তোমার দেহ রক্ষার পর আমার পুজোভার কে গ্রহন করবে? শোন বাবা, সামনের অমাবস্যায় একটি কুমারী ব্রাহ্মণ কন্যা সর্প দংশনে মারা যাবে। তাকে তার আত্মীয়-স্বজনেরা যখন এই মহাশ্মশানে নিয়ে আসবে এসব দেখে কিন্তু তুমি একদম বিচলিত হবেনা। নির্বিকার ও শান্ত চিত্তে একমুঠো চিতাভস্ম দিয়ে দেবে মেয়েটির মুখে। দেখবে মুহূর্তের মধ্যে মেয়েটির প্রাণ ফিরে পাবে। নিশ্চিন্তে তুমি তাকে বিয়ে করে সংসার জীবন যাপন করবে। ভয় পেয় না, আমি সদাসর্বদাই তোমার সঙ্গে থাকব। এর পরের ঘটনা সত্যিই বিস্ময়কর। পরবর্তী অমাবস্যাতেই ঘটল সেই ঘটনা। সর্প দংশনে মৃত্যু এক ব্রাহ্মণ কন্যার মৃতদেহ মহাশ্মশানে এল। মৃতের আত্মীয় স্বজনেরা কান্নায় গুমরে গুমরে কেঁদে উঠল। কথিত আছে মেয়েটির পিতা ছিলেন বিল্বপত্তনের রাজা নারায়ণচন্দ্র রায়ের গুরুদেব। মহাসাধক ভৃগুরামের কাছে কন্যাহারা পিতার একটাই প্রার্থনা, তাঁর একমাত্র কন্যার জীবন ফিরে পাওয়া। যে ঘটনা ঘটতে চলেছে তা আগেই জানা ছিল ভৃগুরামের। তাই তিনি একটু ধৈর্য ধরতে বললেন আত্মীয়-স্বজনদের। এরপর মহাশ্মশানের চিতা থেকে তুলে আনলেন তিনি একমুঠো ভস্ম। সেই ভস্মই মৃত মেয়েটির মুখে ছড়িয়ে দিয়ে বড়মার উদ্দেশে প্রণাম করলেন। একটু পড়েই মৃত মেয়েটি চোখ মেলে উঠে বসে। এবার সমস্ত আদেশ ও নির্দেশের কথা জানালেন কন্যার পিতাকে। তাঁরা এই বিয়েতে সানন্দে রাজি হলেন। তারপর শাস্ত্র মতে বিয়ে হল সাধক ভৃগুরামের সঙ্গে। সংসার পাতলেন বড়বেলুনের মহাশ্মশানে। কালের নিয়মে একটা সংসার থেকে বড়বেলুনে গড়ে উঠল শত শত সংসার। বড়বেলুনের সেই নির্জন মহাশ্মশান লোকালয়ে ভরা।প্রাচীন মন্দির ভেঙে নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল এক মন্দির। প্রতিষ্ঠা করেন আনুমানিক ১৯৮৪ সালে। তারপর যথাসময়ে যথানিয়মেই দেহ রক্ষা করলেন মহাসাধক ভিগু। বর্তমান দেবী মন্দিরের পশ্চিমে পঞ্চমুন্ডি আসনের দক্ষিনে তাঁর মরদেহ সমাধি আছে। তিনি বর্তমানে দেহে না থাকলেও আজও সাধক ভৃগুরাম রয়েছেন বড়মার কোলে। বর্ধমান কাটোয়া রেল পথে ভাতার ষ্টেশনে নেমে রিকশায় যাওয়া যায় বড় বেলুনে। শহুরে ভাব থাকলেও বড়বেলুনে গ্রাম্যগন্ধ এখনও রয়েছে বেশ। ভালো লাগলে মায়ের প্রচার করতে দয়াকরে কোনো রকম এডিট না করে শেয়ার করবেন। মা কালী আপনাদের মঙ্গল করুন।মনে রাখবেন আমরা সকলেই মায়ের প্রচারক।মায়ের গুণগান করলে তিনি ভক্তের উপর সন্তুষ্ট হন।

এই বিভাগের আরো সংবাদ

আজকের দিন-তারিখ

  • শুক্রবার (সন্ধ্যা ৭:৩৭)
  • ৩রা মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ২৪শে শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরি
  • ২০শে বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)

এই মুহুর্তে সরাসরি সংযুক্ত আছেন

Live visitors
350
3382893
Total Visitors