নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৩৬ তম কমিশনার হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান বিপিএম-বার, পিপিএম-বার। শনিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে বিদায়ী কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক, বিপিএম-বার, পিপিএম-এর নিকট হতে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
বিদায়ী ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক, বিপিএম(বার), পিপিএমকে আনুষ্ঠানিকভাবে রীতি অনুযায়ী পুলিশ সদস্যরা ফুলের রশি দিয়ে গাড়ি টেনে বিদায় জানান। কমিশনারের বিদায়ের সময় ডিএমপি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণসহ বিভিন্ন পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা আবেগাপ্লুত হয়ে ওঠেন। এর আগে, বিদায়ী কমিশনারকে বিদায়ী সালাম প্রদান করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সুসজ্জিত একটি চৌকস দল।
গত ২০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে হাবিবুর রহমান বিপিএম-বার, পিপিএম-বার-কে ডিএমপি’র কমিশনার হিসেবে পদায়ন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
হাবিবুর রহমান ১৯৬৭ সালের ১ জানুয়ারি গোপালগঞ্জ জেলার চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামের আব্দুল আলী মোল্লা এবং মোসাম্মৎ রাবেয়া বেগম দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি খেলাধুলা, শিল্প-সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিবেদিত প্রাণ। এসএম মডেল হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক শেষ করে গোপালগঞ্জের সরকারি বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৭তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। চাকরি জীবনে যে কর্মস্থলেই দায়িত্ব পালন করেছেন, সেখানেই রেখে এসেছেন তার সৃষ্টিশীল চিন্তাচেতনা আর ব্যতিক্রমী কর্মস্পৃহার সাক্ষর। নেতৃত্ব আর সৃজনশীলতা দিয়ে প্রশিক্ষণকালেই ‘আমার হলো শুরু’র সম্পাদক নির্বাচিত হন। ডিএমপির ডিসি (হেডকোয়ার্টার্স) হিসেবে কর্মরত অবস্থায় মেধা ও নেতৃত্বগুণে তিনি সাধারণ মানুষ, সহকর্মী ও অধস্তন পুলিশ সদস্যের কাছে হয়ে ওঠেন মানবিক পুলিশি সেবার উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার প্রচেষ্টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’। মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধযোদ্ধা হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ স্বীকৃতি পায় তার অনন্য উদ্যোগের মাধ্যমে। ডিসি হেডকোয়ার্টার্স থাকাকালীন তিনি বাংলাদেশ পুলিশের বাস্কেটবল এবং কাবাডি টিমের দায়িত্ব গ্রহণ করে পুলিশ টিমের খেলায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনেন।
তিনি বাংলাদেশ পুলিশের মাসিক প্রকাশনা ‘দি ডিটেকটিভ’ সম্পাদনা করছেন। সংস্কৃতিমনা হাবিবুর রহমান বাংলাদেশ পুলিশ নাট্যদলের প্রতিষ্ঠাতা। তার গবেষণা ও দিকনির্দেশনায় মঞ্চায়িত হয়েছে জনপ্রিয় ‘অভিশপ্ত আগস্ট’ ও ‘অচলায়তনের অপ্সরী’ নাটক ।
হাবিবুর রহমান একজন সফল ক্রীড়া সংগঠক। তিনি বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের সেক্রেটারি এবং এশিয়ান কাবাডি ফেডারেশনের সহসভাপতি। বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডি হাবিবুর রহমানের হাত ধরেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক নতুন উচ্চতায় আবির্ভূত হয়। তার গতিশীল নেতৃত্বে দেশে বাংলাদেশ গেমস, যুব গেমস, জাতীয় কাবাডি প্রতিযোগিতা, আইজিপি কাপ জাতীয় যুব কাবাড়ি, প্রিমিয়ার কাবাডি লীগ, প্রথম ও দ্বিতীয় বিভাগ কাবাডি লীগসহ অসংখ্য কাবাডি টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বকাপ কাবাডিতে বাংলাদেশ কাবাডির অবস্থান ৫ম। এছাড়াও এশিয়ান কাবাডিতে ৫ম ও সাউথ এশিয়ান কাবাডিতে বাংলাদেশের অবস্থান ৩য়। কাবাডিতে তার অভূতপূর্ব উদ্যোগের কারণে ২০২২ সালে ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর মধ্যে কাবাডি ফেডারেশন শ্রেষ্ঠ ফেডারেশন হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
সূত্র : ডিএমপি নিউজ।