যশোর প্রতিনিধি : ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট যশোরের পুলিশ সুপার পদে যোগদান করেন ডিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার জিয়াউদ্দীন আহমেদ।যোগদানের সাড়ে ছয় মাস পর প্রত্যাহার হলেন যশোরের পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহমেদ। তাৎক্ষণিক প্রত্যাহারের কারণ নিয়ে নানা বিষয় আলোচনায় উঠে আসছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত মণিরামপুর থানায় গ্রেপ্তার আসামিদের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট হামলা, ভাঙচুর, মামলা ও গ্রেপ্তারের ঘটনা। চৌগাছা থানার আলোচিত ওসি পায়েল হোসেনের টর্চার সেল ও নারীকেলেঙ্কারির অভিযোগের সত্যতা মিললেও তদন্ত কমিটি গঠনের নামে নামমাত্র শাস্তি দেয়া। তৎকালীন পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান কর্তৃক জোর পূর্বক জেলা প্রশাসনের জায়গা দখল করে ‘পুলিশ প্লাজা’ নামক সাইনবোর্ড বসিয়ে বছরের বছর ধরে চলে আসা অবৈধ মেলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া। জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং অপ্রতিরোধ্য স্বর্ণ চোরাচালানকে অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছে যশোরের মানুষ।
তাঁর দায়িত্ব চলাকালে যশোর জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। চাঁদাবাজি, খুন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের ঘটনায় জনজীবনে আতঙ্ক নেমে এসেছে।
একই সঙ্গে পুলিশের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আসতে থাকে। সর্বশেষ মনিরামপুরে মাদকসহ ৪ আসামি ধরে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় মনিরামপুর থানার ওসিসহ কয়েকজন উপপরিদর্শকের অপসারণ দাবি করে মনিরামপুর থানার ফটকে বিক্ষোভ করে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী। থানা ঘেরাওকালে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ আসামিদের ধরে আনছে ঠিকই, কিন্তু রহস্যজনক কারণে আদালতে সোপর্দ না করে থানা থেকেই ছেড়ে দিচ্ছে। চিহ্নিত অপরাধী হওয়ার পরও তাদের ছেড়ে দেওয়া ফ্যাসিস্টদের সহযোগিতার নামান্তর। এসবের নেপথ্যে পুলিশের অর্থ বাণিজ্য জড়িত বলে তারা দাবি করেন। এছাড়াও জেলা পুলিশের আওতাধীন বিভিন্ন থানা , ডিবি ও ট্রাফিক বিভাগ থেকে কর্মঠ অফিসারদের পোস্টিং করানো তার বাণিজ্যের কারণ হিসেবে দেখছেন যশোরবাসী ।
গত বছরের জুলাই মাস থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত যশোরে অর্ধশতাধিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের পর আসামি বা হত্যারহস্য উদ্ঘাটন করতে পারলেও হত্যা প্রতিরোধ করতে পারেনি। এ ছাড়া গত সাড়ে ছয় মাসে বাসাবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যশোরে ১৫টি ডাকাতি, অন্তত ৩০টি দুঃসাহসিক চুরির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় একটিরও কূলকিনারা করতে পারেনি পুলিশ। উদ্ধার হয়নি লুণ্ঠিত টাকা ও মালপত্র। এতে দিন দিন আতঙ্ক বেড়েই চলেছে। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিনিয়ত জেলা শহরে চুরি, ছিনতাই ও ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটেছে। সন্ধ্যার পর অনেক সচেতন বাসিন্দা বাইরে বের হতে আতঙ্কিত বোধ করেন। সব মিলিয়ে যশোরে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, বিগত কয়েক মাসে যশোর সীমান্তে স্বর্ণ চোরাচালান বেড়েছে। এই স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটের সঙ্গে পুলিশ চুক্তিবদ্ধ হয়ে সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব কাজে কন্ট্রাক্ট পার্সনদের সরাসরি বাহিনীর গোপন অভিযানে সংযুক্তও করতেন তিনি। জানতে চাইলে তাদেরকে সাংবাদিক দাবি করতেন। মূলত তাদের কাজ ছিলো পুলিশের অভিযান শেষ হলে অর্থনৈতিক লেনদেন সম্পন্ন করা। গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে বিষয়টি বেরিয়ে এলে তা অবহিত করা হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে। পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহারের পেছনে এটিও একটি কারণ হিসেবে কাজ করেছে বলে সূত্রটির দাবি।
যশোর পৌর নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, যশোরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি। প্রায় প্রতিদিন ছুরিকাঘাত, ডাকাতি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। দখলবাজি হয়েছে। অনেক ডাকাতি হলেও গণমাধ্যমের সূত্রে জানতে পেরেছি, কোনোটার রহস্য উদ্ঘাটিত হয়নি। প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিশেষ মতাদর্শের লোকদের বসানো হচ্ছে। আমরা ধারণা করছি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন না হওয়ার কারণে তাঁকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
Leave a Reply