বিজেপি যদি মনে করে আমি আলিপুরদুয়ারটা বিক্রি করে দেবো, অত সস্তা নয়। বিজেপি যদি মনে করে আমি কুচবিহারটা বিক্রি করে দেবো, অত সস্তা নয়। বিজেপি যদি মনে করে আমি দার্জিলিংটা বিক্রি করে দেবো, অত সস্তা নয়। নিজেরা দিল্লী সামলাতে পারে না!
দূর্জয় আন্তর্জাতিক।। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকারকে টার্গেট করে বলেছেন, বাংলার মানুষকে আমরা পরাধীন করতে দেবো না।
উত্তরবঙ্গকে কেন্দ্রীয় সরকারশাসিত অঞ্চল করার বিজেপি নেতাদের দাবি প্রসঙ্গে তিনি সোমবার বিকেলে রাজ্য সচিবালয় নবান্নে এক সংবাদ সম্মেলনে ওই মন্তব্য করেন।
নবান্নে এক সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, বিজেপি নেতারা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে উত্তরবঙ্গকে ‘কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল’ করার দাবি জানাচ্ছেন, কী বলবেন? জবাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এ মনে হচ্ছে যেন মহারাণী নিজেই নিজের ঘরের অলঙ্কার বিতরণ করছেন! বিজেপি যেন দেশটাকে এভাবে মনে করছে! এত সহজ?
উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? পশ্চিমবঙ্গ হল পশ্চিমবঙ্গ। দক্ষিণবঙ্গ পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে উত্তরবঙ্গও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে। কোনও রকম ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ আমরা করতে দেবো না। রাজ্য সরকারের অনুমতি ছাড়া এটা করা যায় না। বিজেপি যদি মনে করে আমি জলপাইগুড়িটা বিক্রি করে দেবো, অত সস্তা নয়।
বিজেপি যদি মনে করে আমি আলিপুরদুয়ারটা বিক্রি করে দেবো, অত সস্তা নয়। বিজেপি যদি মনে করে আমি কুচবিহারটা বিক্রি করে দেবো, অত সস্তা নয়। বিজেপি যদি মনে করে আমি দার্জিলিংটা বিক্রি করে দেবো, অত সস্তা নয়। নিজেরা দিল্লী সামলাতে পারে না!
ক্ষুব্ধ মমতা কেন্দ্রীয় সরকারকে টার্গেট করে বলেন, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মানে কী? কাশ্মীরের মতো মুখ বন্ধ করে দেয়া? তাঁদের নজরবন্দী করে রেখে দেওয়া? তাঁদের মুখ বন্ধ করে রেখে দেয়া? তাঁদের অধিকার কেড়ে নেওয়া? তাঁদের সম্পত্তির অধিকার, তাদের বাঁচার অধিকার রয়েছে। বাংলাটাকে টুকরো টুকরো করে দিয়ে কার স্বার্থ পূরণ হবে?
মাত্র ক’দিন আগে নির্বাচন হয়েছে, এতো বড়ো ধাক্কা খেয়েছে, এতো বড়ো ধাক্কা খাওয়ার পরেও লজ্জা করে না? বাংলার দিকে যারা তাকাবে, বাংলার মানুষ তাদের উপযুক্ত জবাব দেবে। তিনি বলেন, উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গ আমার দুটোই প্রিয়। বাংলার দুটোই কন্যা। উত্তরবঙ্গের জন্য আমাদের সরকার অনেক কাজ করেছে।
কোথাও কোথাও দক্ষিণবঙ্গের থেকেও উত্তরবঙ্গে কাজ বেশি হয়েছে। কী ছিল? কিছুই ছিল না। আজকে সেখানে সেক্রেটেরিয়েট হয়েছে। সেখানে আফ্রিকান সাফারি হয়েছে। বিশ্ব বাংলা ক্রীড়া কেন্দ্র হয়েছে, পঞ্চানন বর্মা ইউনিভার্সিটি হয়েছে। কী হয়নি? মমতা বিজেপিকে টার্গেট করে আরও বলেন, যারা কোনোদিন কিছু করলো না, শুধু মিথ্যে কথা বলে গেল, তাঁরা চায় তার বিনিময়ে কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চল।
মানে, দিল্লির পায়ে পড়ে ‘দিল্লী কা লাড্ডু’ খাবে। নিজের জীবন, নিজের সমস্ত ভবিষ্যৎ বিক্রি করে দিয়ে? বাংলার মানুষকে পরাধীন করতে আমরা দেবো না। উত্তরবঙ্গের মানুষকে পরাধীন করতে আমরা দেবো না। তাঁরা স্বাধীন, তাঁরা স্বাধীনভাবেই থাকবে। বিজেপির ওই দাবিকে আমরা ধিক্কার জানাই। এবং এটার মধ্যে নিশ্চয়ই ওদের কেন্দ্রের নেতারা আছেন।
তা না হলে এত বড়ো সাহস এঁদের হতে পারে না। আমি ওদের কেন্দ্রের নেতাদের বলি, আগে দিল্লিটা সামলান। বাংলা ভালো আছে বলে এতো হিংসা কেন? বাংলা যা করতে পারে, আর কেউ তা করতে পারে না। সাজিয়ে গুজিয়ে নাটক করে কিছু ভুয়ো ভিডিও করে যারা বাংলার মানহানি করে বেড়াচ্ছে, একদিন তাদের বুকে লিখে বেড়াতে হবে, বিজেপি করি না, বিজেপি করি না’।
গণমাধ্যমে প্রকাশ, সম্প্রতি জলপাইগুড়ি বিজেপি নেতাদের এক বৈঠকে উত্তর বঙ্গকে কেন্দ্রীয় সরকার শাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের ওই প্রস্তাবে মূলত অনুন্নয়ন, অনুপ্রবেশ এবং নিরাপত্তার বিষয়কে জোর দেওয়ার কৌশল নেয়া হয়। বলা হয়েছে, উত্তরবঙ্গ এ রাজ্যের সীমান্ত এলাকায় হওয়ায় নিরাপত্তার অভাব রয়েছে।
বাংলাদেশ, নেপাল থেকে দুর্বৃত্তদের অবাধ যাতায়াতের পাশাপাশি রোহিঙ্গারাও ঢুকে পড়ছে। এমনকী চীনারাও একে ‘করিডর’ হিসেবে ব্যবহার করছে। সেজন্য উত্তরবঙ্গ অরক্ষিত হয়ে পড়ছে। ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বিজেপির নির্বাচিত এমপি, বিধায়করাও নিরাপদ নন। বিভিন্ন সময়ে তাঁরাও আক্রান্ত হচ্ছেন।
বিজেপির উত্তরবঙ্গের এক নেতা বলেন, এ সব থেকে বাঁচতেই আমরা চাই উত্তরবঙ্গকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করুক কেন্দ্রীয় সরকার। এরপরেই আজ ওই ইস্যুতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বিজেপির ওই দাবিকে ধিক্কার জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।