রায়হান হোসেন, চৌগাছাঃ
যশোরের চৌগাছায় চিরকুট লিখে মাহফুজুল হক (৭৫) নামে এক ব্যবসায়ী গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার স্বরুপদহ ইউনিয়নের টেঙ্গুরপুর গ্রামে। তিনি দীর্ঘদিন চৌগাছা বাজারে কাপুড়ের ব্যবসা করতেন। শনিবার ১৩ আগষ্ট নিজ বাড়ীর ছাদের উপর হেলে থাকা মেহগনী গাছের ডাল থেকে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তাকে উদ্ধার করে চৌগাছা সরকারি মডেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। পরিবারের দাবি দীর্ঘ দিন তিনি শিরা রোগ, পেটের ব্যাথা ও বার্ধক্য জনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। শরীরের যন্ত্রনা সইতে না পেরে গাছের ডালের সাথে গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি।
মৃত মাহফুজুল হকের বড় ছেলে শাহিনুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ আমার আব্বা শিরা রোগ, পেটের ব্যাথা ও বার্ধক্য জনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। বিভিন্ন হাসপাতালের বড়-বড় ডাক্তার দেখানো হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই তিনি সুস্থ্য হয়নি। আমরা ৪ ভাই ৩ বোন সকলেই আব্বাকে খুব ভালোবাসতাম। আমরা সবাই তার চিকিৎসার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করেছি। পরিবারের কারো সাথে তার কোন মনোমালিন্য ছিলো না। কিন্তু কোন কিছুতেই তিনি সুস্থ্যতা ফিরে না পেয়ে কিছুটা মানসিকভাবে বিপর্যস্থ হয়ে পড়েন। শুক্রবার ১২ আগস্ট রাতের খাওয়া শেষে নিজেদের ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। রাতে হঠাৎ মার ঘুম ভেঙ্গে যায়। মা আব্বাকে না পেয়ে আমাদেরকে ডাকাডাকি করেন। আমরা উঠে দেখি বাড়ীর গেট লাগানো রয়েছে। বাড়ীর সাদের উপর উঠে লাইট মেরে দেখি আব্বা গাছে ঝুলে আছে। তখন আমার ভাইয়েরা আব্বাকে নামিয়ে চৌগাছা উপজেলা সরকারি মডেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
তাদের ধারণা, তিনি গভীর রাতে যে কোনো সময়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তিনি বলেন পরে আব্বার লিখা একটি চিরকুট পেয়েছি। তাতে তিনি লিখেছেন “খোকা বাপ আমি আর কাটাতি পারলাম না, কি করবো এত জালা আর সইতে পারলাম না, ঘাড়ে জালা, মাথায় জালা, পেটে জালা, আর কত সইবো, তোমরা সবাই দ্বীনের পথে থাকবা, কত ওষুধ খালাম রোগ ভালো হলো না, আমার জন্য সবাই আল্লাহর কাছে দোয়া করবা, আল্লাহ আমার মাফ করে দেবেন, আর যদি পুলিশ বাবাজিরা আসে বাবাজিদের কাছে আমার অনুরোধ শরীরের ও পেটের যন্ত্রনা সইতে না পেরে আমি চলে গেলাম, ভাই-বোন সবাই আল্লাহর পথে থাকিস”।
এ ব্যাপারে চৌগাছা উপজেলা সরকারি মডেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক জুলকার ইসলাম বলেন হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চৌগাছা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সবুজ বলেন এ ঘটনায় চৌগাছা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে লাশটি ময়না তদন্ত ছাড়াই দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।