দেশের প্রবীণ আলেম ও আরবি ব্যাকরণবিদ আল্লামা শিব্বির আহমদ ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তিনি গত ২৯ মার্চ (বুধবার) সন্ধ্যায় রাজধানীর শেখ রাসেল ন্যাশনাল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। মাত্র তিন দিন আগেই তাঁর স্ত্রী ইন্তেকাল করেন। মরহুম দম্পতি তিন ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
গতকাল ৩০ মার্চ নোয়াখালীর দারুল উলুম আল ইসলামিয়া চরমটুয়া মাদরাসা মাঠে তাঁর জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন তাঁর বড় ছেলে মুফতি ফারুক আহমদ কাসেমী।
আল্লামা শিব্বির আহমদ (রহ.) আনুমানিক ১৯৩৬ সালে নোয়াখালীর দক্ষিণ মহতাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মাওলানা আবদুল লতিফ (রহ.) ও মাতা নুরুন্নেসা বিনতে মৌলভি ইদরিস (রহ.) উভয়ে ছিলেন সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে আল্লামা শিব্বির আহমদ (রহ.) ছিলেন তৃতীয়। পারিবারিক পরিমণ্ডলেই তাঁর শিক্ষার হাতেখড়ি হয়। তবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি লক্ষ্মীপুরের জামিয়া ইসলামিয়া কলাকোপায় সম্পন্ন করেন।
শিক্ষাজীবন শেষ করে আল্লামা শিব্বির আহমদ (রহ.) নানার প্রতিষ্ঠিত রাওলদিয়া দারুল উলুম ইসলামিয়া মাদরাসায় যোগদান করেন। এরপর ছয় বছর তিনি তিতাকান্দি আলিয়া মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। সেখান থেকে তিনি ফেনীর বাদাদিয়া মাদরাসায় দেড় বছর এবং নিজের প্রতিষ্ঠিত চর মানসা মাদরাসায় পাঁচ বছর শিক্ষকতা করেন। অতঃপর দারুল উলুম আল ইসলামিয়া চরমটুয়া মাদরাসায় যোগদান করেন এবং সেখানেই ৪৮ বছর পাঠদান করেন। তবে মাঝে তিন বছর তিনি ঢাকার জামিয়া মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়ায় শিক্ষকতা করেন। ২০১৬ সালে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে মারকাজুল উলুম ও শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন।
তিনি ফেনীর ওলামাবাজার মাদরাসার আব্দুল হালিম (রহ.)-এর খলিফা ছিলেন। এ ছাড়া হাফেজ্জি হুজুর (রহ.) ও জুলফিকার আহমদ নকশবন্দিও তাঁকে খিলাফত প্রদান করেন।
বাংলাদেশে আরবি ব্যাকরণ (নাহু ও সরফ) নিয়ে গবেষণা এবং পাঠদানের সহজ পদ্ধতি উদ্ভাবনে আল্লামা শিব্বির আহমদ (রহ.) ছিলেন একজন পথিকৃৎ আলেম। মাদরাসার শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দানেও তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। প্রায় ৪৫ বছর ধরে দেশের অসংখ্য আলেমকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকের প্রধান প্রশিক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।