ছাকিন হোসেন: যশোরে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে লোডশেডিং। অসহনীয় গরমে লোডশেডিংয়ের কারণে জনজীবন অতিষ্ঠ। তীব্র গরমের মধ্যে টানা কয়েক দিনের লোডশেডিংয়ে নাজেহাল যশোরবাসী। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পেতে ও গরম থেকে বাঁচতে ইলেকট্রনিক্সের দোকানে ছুটছে মানুষ। তীব্র গরমের মধ্যে বিদ্যুৎ যাওয়া-আসার এ অবস্থা আরও অসহনীয় করে তুলেছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা। বিশেষ করে বৃদ্ধ, শিশু, অসুস্থ ব্যক্তিরা পড়েছেন বেশি বিপাকে। আবার বিদ্যুৎ সরবরাহ যে সহসাই স্বাভাবিক হচ্ছে না, অনেকে মনে করছেন। এ কারণে তীব্র গরম থেকে বাঁচতে বিকল্প পথ খুঁজতে শুরু করেছেন যশোর জেলার সাধারণ মানুষ।
এখানেই বাঁধছে তুলকালাম কাণ্ড, রবিবার সন্ধ্যার পর মাইকপট্টির রাস্তা ছেয়ে যায় ভাঙা কর্কশিটে আর প্রত্যেকটি দোকানে উপচে পড়া ভীড় হৈচৈ তো আছেই, আপাত দৃষ্টিতে দেখে যে কেউ মনে করবেন বোধহয় দোকানপাট ভাংচুর করছে উত্তেজিত জনতা। খবর নিয়ে জানা গেল অতিমাত্রায় লোডশেডিংয়ে সবাই এসেছে ফ্যান কিনতে৷ তবে চার্জার ফ্যানের সরবরাহ কম থাকায় অনেকটা বিপাকে পড়তে হয়েছে দোকানীদের৷ অবশ্য সাড়ে তিন’শ টাকার ফ্যান একদাম সাত’শ করে কিনেই বাড়ি ফিরেছেন ক্রেতারা। এ কারণে কার্টুন সুশৃঙ্খল ভাবে না রাখতে পারায় তা রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। এমন কাণ্ড দেখে ফ্যান কিনতে আসা একজন ক্রেতাকে কাঙ্খিত মূল্যে ফ্যান কিনতে না পেরে দূরে দাঁড়িয়ে মন্তব্য করতে শোনা যায় ‘হুজুগে বাঙ্গালী’
রবিবার (০৪ জুন) কয়েকটি উপজেলা খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তীব্র গরমে লোডশেডিংয়ের হাত থেকে বাঁচতে মানুষ চার্জার লাইট, ফ্যান কিনতে ভিড় করছেন জেলার মাইকপট্টি মার্কেট সহ বিভিন্ন ছোট বড় মার্কেটে। অন্য যে কোনো দোকানের তুলনায় ইলেকট্রনিকস পণ্যের দোকানে বেশি ভিড় দেখা গেছে।
ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রচন্ড গরম আর লোডশেডিংয়ের হাত থেকে বাঁচতে চার্জার ফ্যান, লাইট, মোবাইলে চার্জ দেয়ার জন্য পাওয়ার ব্যাংক কিনছেন তারা। অন্যদিকে, যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো, তারা কিনছেন আইপিএস। সকাল থেকেই মার্কেট খোলার সঙ্গে সঙ্গে ইলেকট্রনিকসের এসব দোকানে ছিল ক্রেতাদের ভিড়।
রবিবার (০৪ জুন) সকালে যশোরের মাইক পট্টির বিভিন্ন ইলেকট্রনিকের দোকানে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ইলেকট্রনিক দোকানে ক্রেতাদের প্রচুর ভিড়। তাদের চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মালিক ও কর্মচারীরা। ঘন ঘন লোডশেডিং হওয়ায় দোকানগুলোতে অনেক চাপ পড়েছে। আগে যেখানে দিনে ২ থেকে ৩টি চার্জার ফ্যান বিক্রি হতো, সেখানে বর্তমানে দিনে ১৫ থেকে ২০টি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, বাল্ব ও চার্জার লাইটের বিক্রি বেড়েছে পাঁচ থেকে ১০ গুণ। চার্জার ফ্যানের দাম চলতি সপ্তাহে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
১২ ইঞ্চি চার্জার ফ্যান ২ হাজার ৭শ’ থেকে ৩ হাজার ২শ’, ১৬ ইঞ্চি চার্জার ফ্যান সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার ও হাফ স্ট্যান্ড ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৩শ’ থেকে ৪ হাজার ৭শ’ টাকায়।
এসি-ডিসি বাল্ব ৩০ থেকে১শ’ টাকা বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে দেড়শ থেকে ৮শ’ টাকায়। এছাড়া, চার্জার লাইট ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
ক্রেতা ইয়াসিন মোল্লা বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা আরও ভয়াবহ হতে পারে শুনে চার্জার লাইট ও ফ্যান কিনতে আসেন । সারাদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা বিদুৎ থাকছে না। ফ্যানের বাতাস ছাড়া শিশুরা ঘুমাতে পারছে না। এর বাইরে মশা ও তীব্র গরমে নাকাল হয়ে পড়েছেন সবাই।
যশোরের মাইক পোর্টির ইলেকট্রনিক দোকানের মালিক ও কর্মচারীরা বলেন, বেচাকেনা আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে। তীব্র গরমের মধ্যে লোডশেডিং হওয়ায় ক্রেতাদের চাপও বেশি। দিন দিন বেচাকেনা আরও বাড়বে বলে মনে করেন । এমনকি বেচাকেনার সাথে সাথে বেড়েছে বিভিন্ন মালের দাম।