দুর্জয় নিউজ ডেস্ক : যশোর-৩ (সদর) বরাবরই ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থীদের আসন। পুরোনোরা বিদায় নিলেও এখন আসনটি নতুন হেভিওয়েটদের দখলে। পুরোনো হেভিওয়েট প্রার্থী বিএনপির তরিকুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের খালেদুর রহমান টিটো ও আলী রেজা রাজু চিরবিদায় নেওয়ায় এখন নতুন হেভিওয়েট প্রার্থীরা রয়েছেন এ আসনের নির্বাচনি আলোচনায়। এর মধ্যে রয়েছেন নৌকার টিকেটপ্রত্যাশী বর্তমান সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ এবং জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও যশোর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার। আর বিএনপি নির্বাচনে এলে তাদের হেভিওয়েট প্রার্থী প্রয়াত তরিকুলপুত্র অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। তবে এর বাইরেও আওয়ামী লীগ, বিএনপি থেকে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন নির্বাচনি মাঠে।
যশোর সদরের ১৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে যশোর-৩ আসন গঠিত। নব্বইপরবর্তী সাতটি সংসদ নির্বাচনে বিএনপি দুবার ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী পাঁচবার নির্বাচিত হয়েছেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন কাজী নাবিল আহমেদ। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে কোন দলের কে মনোনয়ন পাচ্ছেন তা নিয়ে সবার মধ্যেই রয়েছে কৌতূহল। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ থেকে কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি তা নিয়ে মাঠের কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে সবসময়ই আলোচনা রয়েছে।
আওয়ামী লীগ-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, যশোর সদরে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি রাজনীতি কেন্দ্রীয় মনোনয়নকে ঘিরে আবর্তিত হয়। ওয়ান-ইলেভেনপরবর্তী সময়ে ২০০৮-এর নির্বাচনে নৌকার টিকেট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টি-বিএনপি ঘুরে আওয়ামী লীগে আশ্রয় নেওয়া সাবেক মন্ত্রী খালেদুর রহমান টিটো। কিন্তু নানা কারণে পরে তিনি মনোনয়নবঞ্চিত হন। এ অবস্থায় ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে দল নতুন মুখ
হিসেবে কাজী নাবিল আহমেদের হাতে নৌকা তুলে দেয়। দলের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারও নৌকার মনোনয়ন চেয়েছিলেন। বঞ্চিত শাহীন চাকলাদার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দলের মনোনয়নে জয়ী হন। দশম সংসদ নির্বাচনে কাজী নাবিল আহমেদ ফাঁকা মাঠে গোল দিলেও স্থানীয় রাজনীতিতে শাহীন ও নাবিল গ্রুপ সক্রিয় হয়ে ওঠে।
গ্রুপিং দ্বন্দ্বে শাহীন-নাবিল জোর লড়াই চললেও বিগত নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত কাজী নাবিল আহমেদ দলীয় মনোনয়ন ছিনিয়ে নেন। মনোনয়ন না পাওয়ায় চাকলাদার অনুসারীরা ক্ষোভও প্রকাশ করেন। তবে শাহীন চাকলাদার সদর উপজেলা চেয়ারম্যান থাকায় সদরের রাজনীতিকে শক্ত হাতে ধরে রাখেন। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসন শূন্য হলে সেখানে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পান শাহীন চাকলাদার। উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তিনি কেশবপুরের সংসদ সদস্য হওয়ায় তিনি সেখানে মনোযোগ দেন। এতে সদরের রাজনীতিতে তার রাশ কিছুটা আলগা হয়ে যায়। গ্রুপিংয়ের রাজনীতিতে সদরে শাহীন-নাবিল দুই গ্রুপই সক্রিয়। ফলে সদরে কাজী নাবিল আহমেদ যেমন চান তার মনোনয়ন ধরে রাখতে; তেমনি শাহীন চাকলাদারও চান সদরের মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে। দুই পক্ষের নেতাকর্মীরা সেভাবে নির্বাচনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং শো-ডাউন শুরু করেছেন।
এ ব্যাপারে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এমপি বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যশোরের ৬টি আসন নিয়েই কাজ করছি। উপজেলাগুলোর অধিকাংশের কাউন্সিল হয়েছে; কমিটি হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সংগঠনের ভিত আরও মজবুত হচ্ছে। নির্বাচন সামনে রেখে নেতাকর্মীরা সরকারের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার তথ্য-উপাত্ত তৃণমূল পর্যন্ত সরবরাহ করছেন। ব্যক্তি নয়; নৌকাকে বিজয়ী করার জন্য কর্ম তৎপরতা শুরু হয়েছে। জেলার ছয়টি আসনেই দলের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন; আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী তার সঙ্গেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করে বিজয়ের নৌকা নেত্রীকে উপহার দেবেন।
ব্যক্তিগত মনোনয়ন প্রশ্নে গুরুত্ব না দিয়ে শাহীন চাকলাদার বলেন, নেত্রী আমাকে একটি আসনে মনোনয়ন দিয়েছেন। আগামী নির্বাচনেও তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটিই চূড়ান্ত। এখানে ব্যক্তি শাহীন চাকলাদারের কোনো ভাবনা নেই। তবে নাবিল-শাহীনের বাইরেও নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে দুয়েকটি নাম ঘুরে-ফিরে আসছে। এর মধ্যে রয়েছে-জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুলের নামও।
নির্বাচন প্রসঙ্গে যশোর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, যশোরের ৬টি আসনেই আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা অত্যন্ত ভালো। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দেশে নজিরবিহীন উন্নয়ন হয়েছে। পদ্মা সেতু, মধুমতী সেতুর কারণে এ অঞ্চলের মানুষ যোগাযোগব্যবস্থায় অভাবনীয় সুফল পাচ্ছেন। ফলে সাধারণ মানুষ আবারও নৌকার প্রার্থীদেরই বিজয়ী করবেন। মনোনয়ন প্রত্যাশা প্রসঙ্গে মিলন বলেন, যশোর-৩ (সদর), যশোর-৪ (অভয়নগর-বাঘারপাড়া) বা যশোর-৫ (মণিরামপুর)-এর যেকোনো একটি আসনে তিনি মনোনয়ন চাইবেন। তবে নেত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটিই চূড়ান্ত।
অপরদিকে তরিকুল ইসলামের জীবদ্দশায় যশোর সদরে বিএনপিতে তার বিকল্প প্রার্থী ছিল না। বিগত সংসদ নির্বাচনের আগে তিনি চিরবিদায় নেন। এরপর সদর আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পান তরিকুলপুত্র অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। কেন্দ্রীয় বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে তিনিই এখানে বিএনপির মনোনয়নের জোর দাবিদার। তবে মনোনয়ন তরিকুল পরিবারের বাইরে গেলে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাবেরুল হক সাবুও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী। দলের অভ্যন্তরে তার নিজস্ব বলয়ও রয়েছে। তবে বিএনপি যেহেতু নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের জন্য আন্দোলনে মাঠে রয়েছে; এ কারণে নির্বাচন বিষয়ে তারা মুখ খুলছেন না।
যশোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাবেরুল হক সাবু বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক দল; নির্বাচনমুখী দল। আমরা অবশ্যই নির্বাচনে যেতে চাই কিন্তু সেই নির্বাচনটি হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। এ জন্য আমাদের আন্দোলন চলছে। সেটি সফল হলে আমরা নির্বাচনে যাব। সে ক্ষেত্রে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তিনিই দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করবেন। দলীয় ফোরামে আমিও মনোনয়ন চাইব। তবে সেসব নিয়ে এখনই ভাবছি না। আমাদের ভাবনায় এখন নির্বাচনকালীন সরকার। তবে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপির বাইরে জাতীয় পার্টি বা ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীও মাঠে থাকতে পারেন-এমন আলোচনা থাকলেও প্রার্থী হিসেবে কেউ এখনও মাঠে নামেননি।