1. admin@channeldurjoy.com : admin : Salahuddin Sagor
  2. news.channeldurjoy@gmail.com : Editor :
শারদীয়া দুর্গোৎসব - চ্যানেল দুর্জয়
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৩৮ অপরাহ্ন

শারদীয়া দুর্গোৎসব

  • প্রকাশিত : রবিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২০


উজ্জ্বল রায় (নড়াইল জেলা) প্রতিনিধিঃ

তবে বসন্তকালেও একটি দুর্গাপুজো প্রচলিত আছে, যা বাসন্তীপুজো নামে পরিচিত। তবে তা শারদীয়া পুজোর মতো সাড়ম্বর উৎসবে পরিণত হতে পারেনি।

বাংলার মুষ্টিমেয় স্থানে অপেক্ষাকৃত কম জাঁকজমকের সঙ্গে তা পালন করা হয়। উভয়ক্ষেত্রেই দেবীর রূপ এক – দশভূজা মহিষমর্দ্দিনী মূর্তি। সঙ্গে লক্ষী, সরস্বতী, কার্ত্তিক, গণেশ। পুজোও হয় পাঁচদিন ধরে। তবে একটি পার্থক্য আছে, এবং তা হল পুজোর কালবিচারে। হিন্দু শাস্ত্র মতে পার্থিব বছরের ৬মাস =স্বর্গের ১দিন। বাকী ৬ মাস = স্বর্গের ১ রাত। পার্থিব বছরের মাঘ থেকে আষাঢ় – এই ৬ মাস উত্তরায়ণ, এই সময় স্বর্গে দিন। আর শ্রাবণ থেকে পৌষ – এই ৬ মাস দক্ষিণায়ণ, এই সময় স্বর্গে রাত। দক্ষিণায়ণের সময় দেবতারা নিদ্রিত থাকেন। তাই দেবদেবীর পুজোর প্রকৃষ্ট কাল উত্তরায়ণের সময়কাল। এই হিসাবে বাসন্তীপুজোই প্রকৃত সময়ের পুজো।

কিন্তু যদি দক্ষিণায়ণকালে পুজোর প্রয়োজন পড়ে, তখন করতে হবে অকালবোধন, অর্থাৎ অকালে দেবতাকে জাগিয়ে তুলতে বিশেষ পুজো। যেমনটি করতে হয়েছিল রামচন্দ্রকে। কবি কৃত্তিবাসের “শ্রীরামপাঁচালি” কাব্যে রামের সেই অকালবোধনের বিস্তৃত বিবরণ পাওয়া যায়।
রাবণ সীতাহরণ করার পর রাম যখন রাবণ-নিধনে প্রয়াসী হলেন, তখন তিনি জানলেন, রাবণের ইষ্টদেবী মহামায়া। দেখলেন রাবণকে কোলে বসিয়ে রণক্ষেত্রে অবতীর্ণা হয়েছেন সাক্ষাৎ মহামায়া ! মহামায়াকে দেখে ‘বিস্ময় হইয়া রাম ফেলে ধনুর্ব্বাণ’ এবং যতক্ষণ মহামায়া রাবণকে রক্ষা করবেন, ততক্ষণ তাঁকে নিপাত করা অসম্ভব বুঝে ‘বিষন্ন হইয়া রাম পড়িল ভূতলে’। রামচন্দ্রের সারথি ইন্দ্রদেব এই অবস্থায় ব্রহ্মদেবকে উপায় জানাতে বললে তিনি রামচন্দ্রকে উপদেশ দিলেন মহামায়ার আরাধনা করতে। কিন্তু তখন দক্ষিণায়ণকাল, দেবীর নিদ্রার সময়। তাঁর নিদ্রাভঙ্গ করে তাঁকে জাগিয়ে না তুললে পুজো হবে কিকরে ? তাই একদিকে ব্রহ্মা স্বর্গে সমস্ত দেবগণকে নিয়ে দেবী চন্ডীর অকালবোধন করলেন, অন্যদিকে রামচন্দ্র শরৎকালের শুক্লাষষ্ঠী তিথিতে বিল্ববৃক্ষতলে করতে শুরু করলেন মহামায়ার পুজো। সপ্তমী, অষ্টমী ও সন্ধিক্ষণবিহিত পুজো অত্যন্ত ভক্তিভরে সমাধা করলেন রামচন্দ্র।

কিন্তু তাতেও ভগবতীর দর্শন পেলেন না ! তখন তিনি অত্যন্ত কাতর হয়ে পড়লেন। তাঁর কাতরতা দেখে বিভীষণ তাঁকে দেবীর উদ্দেশ্যে ১০৮ নীলপদ্ম অর্পণ করতে বললেন। হনুমান দেবীদহ থেকে এনে দিলেন ১০৮ পদ্ম। কিন্তু দেবী রামচন্দ্রের ভক্তির পরীক্ষা নেওয়ার জন্য একটি পদ্ম হরণ করলেন। ১০৭ টি পদ্ম অর্পণের পর রামচন্দ্র দেখলেন আর পদ্ম অবশিষ্ট নেই। তখন তিনি হনুমানকে আবার পদ্ম নিয়ে আসতে অনুরোধ জানালেন। হনুমান প্রত্যুত্তরে জানালেন যে দেবীদহে আর পদ্ম অবশিষ্ট নেই। তখন রামচন্দ্র সংকল্প-ভঙ্গ হওয়ার আশঙ্কায় অত্যন্ত পীড়িত হলেন। এমতাবস্থায় তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন – “কমললোচন মোরে বলে সর্বজনে। / এক চক্ষু দিব আমি সঙ্কল্প পূরণে।।” এই অভিলাষ নিয়ে যখন তিনি তূণ থেকে বাণ নির্গত করে চোখ উপড়াতে গেলেন, সেই মূহুর্তে মহামায়া আবির্ভূতা হয়ে তাঁর হাত ধরলেন। মহামায়া জানালেন, রামচন্দ্রের ভক্তির গভীরতা পরীক্ষা করতেই তিনি একটি পদ্ম হরণ করেছিলেন। সকলেই দেখলেন হৃত পদ্মটি দেবী স্বহস্তে ধরে আছেন ! সকলেই দেবীর দর্শনলাভ করে ধন্য হলেন। দেবীর কাছে রামচন্দ্র রাবণবধের অনুমতি চাইলেন। দেবীও জানালেন -” রাবণে ছাড়িনু আমি, বিনাশ করহ তুমি” আর সেইসঙ্গে দেবীও সাক্ষাৎ নারায়ণ রামচন্দ্রকে ধন্যবাদ জানালেন তাঁর পুজো প্রকাশ করার জন্য – ” অকাল-বোধনে পূজা, কৈলে তুমি দশভুজা, বিধিমতে করিলে বিন্যাস।/ লোক জানাবার জন্য, আমারে করিতে ধন্য, অবনীতে করিলে প্রকাশ।।” এইভাবেই দেবীর কাছে বরপ্রাপ্ত হয়ে রামচন্দ্র রাবণবধ করে সীতাউদ্ধারে সমর্থ হয়েছিলেন। অকালে জাগ্রত করে দেবীর পুজো করা হল বলে দেবীর শারদীয়া পুজো ‘অকালবোধন’ নামে পরিচিত হল।

এই কাহিনী মূল সংস্কৃত বাল্মীকি রামায়ণে না পাওয়া গেলেও খ্রিষ্টীয় একাদশ শতকে সংকলিত কালিকাপুরাণে পাওয়া যায়। মহাকবি কৃত্তিবাস সেখানে থেকেই কাহিনীটিকে গ্রহণ করে ‘আপন মনের মাধুরী মিশায়ে’ পরিবেশন করেছিলেন তাঁর কাব্যে। যাইহোক, এখনও শারদীয় দুর্গাপুজোয় ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় বোধনপুজো করা হয়ে থাকে বিল্ববৃক্ষমূলে।


অনেকেই মনে করেন, কৃত্তিবাসী রামায়ণ অনুসারেই বাংলায় শারদীয়া দুর্গোৎসব প্রচলিত হয়েছে। কিন্তু আমরা দেখলাম কৃত্তিবাসের পূর্ববর্তী কালিকাপুরাণে শারদীয়া পুজোর উল্লেখ আছে, যা কিনা খ্রিষ্টীয় একাদশ শতকে সংকলিত হয়েছিল। আমরা এবিষয়ে আরও কিছু অনুসন্ধান করতে পারি। যেমন, একাদশ শতাব্দিতে বর্তমান ছিলেন স্মৃতিনিবন্ধকার ভবদেব ভট্ট। তিনি তাঁর নিবন্ধাবলিতে জীকন ও বালক নামক দুই স্মার্তপন্ডিতের অনেক শ্লোক ব্যবহার করেছেন। পরবর্তীকালে চতুর্দশ-পঞ্চদশ শতকের স্মার্ত পন্ডিত শূলপাণি রচনা করেছেন ‘দুর্গোৎসববিবেক’, ‘বাসন্তীবিবেক’, ‘দুর্গোৎসবপ্রয়োগ’ নামক তিনটি গ্রন্থ। সেখানে তিনি শারদীয় দুর্গোৎসব প্রসঙ্গে জীকন ও বালকের উক্তি উদ্ধৃত করেছেন ! অর্থাৎ বলা যায় খ্রিষ্টীয় একাদশ শতক বা তারও আগের লোক ছিলেন এই জীকন ও বালক। আর তাঁরা তাঁদের রচনায় শারদীয় দুর্গোৎসবের উল্লেখ করে গেছেন। সুতরাং শারদীয় দুর্গোৎসব বহুপূর্ব থেকেই বাংলায় প্রচলিত ছিল, তা কৃত্তিবাসী রামায়ণের প্রভাবে শুরু হয়নি। কৃত্তিবাসী রামায়ণেও তার প্রমাণ আছে।

রামচন্দ্র নিজেই ব্রহ্মাকে জানিয়েছেন – “শ্রীরাম আপনি কয়, বসন্তে শুদ্ধি সময়, শরৎ অকাল এ পূজার।।/ বিধি তার নিরূপণ, নিদ্রা ভাঙ্গিতে বোধন, কৃষ্ণা নবমীর দিনে তার। ” অর্থাৎ কৃত্তিবাসের কালে যে অকালবোধনের বিধি ছিল, রামের জবানিতে তারই প্রমাণ মিলল। এমনকি শুধু কৃষ্ণানবমীবিহিত বোধনই নয়, প্রতিপদবিহিত বোধনের কথাও উল্লেখ করেছেন রাম ! ব্রহ্মা তাঁকে পরামর্শ দিয়েছেন ষষ্ঠীবিহিত বোধন করতে। সুতরাং সবকটি বোধনবিধিই যে সেকালেপ্রচলিত ছিল, তার প্রমাণিত হয়। এছাড়াও কাব্যের “শ্রীরামচন্দ্রের দুর্গোৎসব” শীর্ষক অংশে কবি বলেছেন -এইরূপে উদ্যোগ করিলা দ্রব্য যত।

এই বিভাগের আরো সংবাদ

আজকের দিন-তারিখ

  • শুক্রবার (সন্ধ্যা ৬:৩৮)
  • ২৬শে এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৭ই শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরি
  • ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)

এই মুহুর্তে সরাসরি সংযুক্ত আছেন

Live visitors
174
3274626
Total Visitors