1. admin@channeldurjoy.com : admin : Salahuddin Sagor
  2. news.channeldurjoy@gmail.com : Editor :
দক্ষিণ এশীয় ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্যহীনতা: মুখ থুবড়ে পড়েছে সার্ক - চ্যানেল দুর্জয়
সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৪:৩২ পূর্বাহ্ন

দক্ষিণ এশীয় ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্যহীনতা: মুখ থুবড়ে পড়েছে সার্ক

  • প্রকাশিত : রবিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২০

দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা ( সার্ক ) , সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য সৃষ্টি হয়েছিল। বিশ্বে ঢাকার বড় কূটনৈতিক সফলতার স্মারক ছিল সার্ক। বাংলাদেশই এই জোট ধারণার প্রস্তাবক। এর প্রতিষ্ঠায় প্রচুর খেটেছেও বাংলাদেশ।দুটি বিষয় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সহযোগিতাবিষয়ক জোট সার্কের গঠনে কাজ করেছিল। একটি হলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ান গঠন। অন্যটি শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে এ অঞ্চলের ছোট দেশগুলোর জোটবদ্ধ হওয়া। দুই জিয়া—বাংলাদেশের জিয়াউর রহমান ও পাকিস্তানের জিয়াউল হক ‘মার্কিন প্রণোদনায়’ এ বিষয়ে উৎসাহিত হয়ে সার্ক গঠনে এগিয়ে যান। এইচ এম এরশাদ ১৯৮৫ সালে ঢাকায় প্রথম সার্ক সম্মেলনের আয়োজন করেন।স্নায়ুযুদ্ধের আমলে ভারতকে দুর্বল করার চিন্তা থেকে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র ওই উদ্যোগ নিয়েছিল।ভূ-রাজনীতিতে পরিবর্তন আসায় সার্কে ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে। সার্কের অন্যতম এর একটি বাধা হচ্ছে এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অভ্যন্তরীণ অতিমাত্রার রাজনৈতিক চরিত্র। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার বিদ্যমান দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ইতিহাস সার্কের মূল উদ্দেশ্য তথা সর্বজনীন স্বার্থকে সর্বদাই প্রভাবাচ্ছন্ন করেছে। সন্ত্রাসবাদের কারণে ক্রমেই সার্ক অর্থহীন হয়ে পড়ে। সর্বশেষ ২০১৪ সালে নেপালের কাঠমান্ডুতে ১৮তম সার্ক সম্মেলন হয়। উরি হামলার পর ২০১৬ সালে ইসলামাবাদে ১৯তম শীর্ষ সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও পরে সেটি বয়কট করে ভারত। ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশ, ভুটান, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ সম্মেলন বয়কট করে।
এক সময় স্বাভাবিকভাবে সার্কের কার্যক্রম চলতো, যদিও ধীর গতিতে এগুচ্ছিল তবুও আশা জাগানিয়া কিছু কাজ হয়েছিল কিন্তু হঠাৎ ভারতের মসনদে আবির্ভূত হল নরেন্দ্র মোদি। ক্ষমতার সুসংগত করতে ধর্মীয় উগ্রতা ছড়িয়ে দিল আর তার জন্য প্রয়োজন ছিল পাকিস্তান বিরোধী একটি পদক্ষেপ, সার্ক দিয়ে সেই পদক্ষেপ পূর্ণ করলো। ভারতের চেয়ে আবার চীনের অর্থনীতি বড়। প্রতিবেশী ছোট দেশগুলোকে ‘দুই হাতে’ দিচ্ছে বেইজিং। আর ভারতের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান তো অবশ্যই চীনের ‘সব সময়ের’ বন্ধু। নেপাল দীর্ঘদিন ধরে ভারতের প্রভাববলয়ের মধ্যে থাকলেও গত এক দশকে চীনের কাছ থেকে সড়ক ও অবকাঠামোগত অনেক সহায়তা পেয়েছে, এখনো পাচ্ছে। এমনকি সার্ক নেতারা এবার কাঠমান্ডুতে যে ভবনে বসে সম্মেলন করেছেন, তাও চীনের সহায়তায় তৈরি। সীমান্ত ও চীন ইস্যুতে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ভারতের দূরত্ব তৈরি হতে দেখা গেছে।
এই কারণটি নাও হতে পারে যে, ভারত সার্কের বিষয়ে একটি অনীহামূলক মনোভাব নিয়ে আছে, যা বাণিজ্য-অঞ্চল হিসেবে সার্কের প্রায় সমস্ত সম্ভাবনাকে খর্ব করেছে।’ একই সঙ্গে আট জাতির এই অঞ্চলে বাণিজ্য ব্লক গড়ে না ওঠা এবং প্রসারিত না হওয়ার জন্য ভারতকে দোষারোপ করা যায়। ভারত এমন একটি দেশ, যার সঙ্গে সার্কভুক্ত চারটি দেশের সরাসরি সীমান্ত সংযোগ রয়েছে এবং খুব কাছেই আরো দুটি দ্বীপদেশ মালদ্বীপ ও শ্রীলংকা আছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর বাণিজ্য-বাধাসমূহ দূর করার বিষয়টি ভারতের একক মনোভাবের ওপরই নির্ভর করছে।

বিশ্বের অন্যতম বানিজ্য ভূমি এই অঞ্চল। এই সার্কভুক্ত অঞ্চলে মোট বৈদেশিক বাণিজ্যর মাত্র ৫ শতাংশ আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য হয়ে থাকে যেখানে আসিয়ানভুক্ত দেশে ২৫ শতাংশ আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য হয়। আমাদের অতীত ইতিহাস আমাদের গৌরবময় সমৃদ্ধ দেখিয়ে দেয়, তখন তাবৎ বিশ্বের লোক এখানে এসেছে বানিজ্য করতে, এখন এখনকার জনগণ কামলা দিতে তাবৎ বিশ্বে যায়। বিশ্বে এখন অন্যতম আর্কষন হচ্ছে পর্যটন নির্ভর বাণিজ্য, আমাদের এই অঞ্চলের সমৃদ্ধ অতীত ইতিহাস আছে, প্রাকৃতিক লীলা ভূমি এ অঞ্চল, এই সব কে কেন্দ্র করে যদি একটি বাণিজ্য রুট তৈরি হয় এ অঞ্চলে তাহলে বিশ্বের অন্যতম আর্কষনীয় অঞ্চল হবে এটি।
সার্ককে নিষ্ক্রিয় করে বিমসটেক এর দিকে ঝুকছে ভারত। সার্ককে নিষ্ক্রিয় করে বিমসটেককে শক্তি জুগিয়ে ভারত মূলত দুটি লক্ষ্য হাসিল করতে চাইছে। প্রথমত, আঞ্চলিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে একঘরে করা—সার্কে থাকলেও বিমসটেকে তাদের নেওয়া হয়নি। দ্বিতীয়ত, সার্ক ফোরামে নদীর পানি থেকে সীমান্ত বিরোধ পর্যন্ত আঞ্চলিক প্রায় সব বিষয়ে আলাপ-আলোচনার যে পরিসর ছিল তা বন্ধ করা। ভারতের সঙ্গে পানির হিস্যা ও বাণিজ্যিক ভারসাম্য স্থাপনের বিষয়ে যৌক্তিক আঞ্চলিক নীতিকৌশলের পক্ষে প্রকাশ্যে বলা যেত সার্কে।
ভারতের পক্ষ থেকে সার্ককে বাদ দিয়ে প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। কারণ সার্কের উন্নয়নে এগিয়ে না এলে এই অঞ্চলে চীনের প্রভাববলয় অতিদ্রুততার সঙ্গে তৈরি হবে, যা ভারতের জন্য সুখকর হবে না; অন্যদিকে ভারতে অনুন্নত অঞ্চলকে উন্নত করে মূল অর্থনীতির সঙ্গে একসুতোয় বেঁধে দিতে সার্ক একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। সার্ক হচ্ছে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাবিকাঠি আর এর ওপরই নির্ভর করছে দক্ষিণ এশিয়ার ভাগ্যহত মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণের একটি বড় উপায়।


লেখকঃ মোঃ মামুন হাসান বিদ্যুৎ, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

এই বিভাগের আরো সংবাদ

আজকের দিন-তারিখ

  • সোমবার (রাত ৪:৩২)
  • ২০শে মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১২ই জিলকদ ১৪৪৫ হিজরি
  • ৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)

এই মুহুর্তে সরাসরি সংযুক্ত আছেন

Live visitors
93
3866075
Total Visitors