উজ্জ্বল রায়::: একবার ঢাকা জগন্নাথ কলেজের একদল চপলমতি ছাত্র লোকনাথ বাবাকে পরীক্ষা করবার জন্য বারদীর আশ্রমে আসে । তারা একে একে নানা প্রশ্ন করে বেকায়দায় ফেলতে না পেরে শেষে বলে, বেলা এখন দুপুর ৷ এখনি আমাদের ঢাকা হোস্টেলে ফিরে যেতে হবে। কিন্তু এই প্রচণ্ড রোদে এই বিরাট মাঠ পার হয়ে কি করে যাব? বাবা, আপনি যদি দয়া করেন-
তারা এই কথা বলতেই বাবা বললেন, তোরা বেরিয়ে যা । মাঠে তোদের রোদ লাগবে না?
ব্রহ্মচারী বাবার কথার সত্যতা পরীক্ষা করার জন্য তারা মাঠে বেরিয়ে পড়ল । তারা মাঠে নামতেই দেখা গেল, এক খণ্ড মেঘ হঠাৎ কোথা থেকে উদয় হয়ে সূর্যকে আড়াল করে রাখল ৷ ছাত্রেরা পথে রোদের কোন উত্তাপ অনুভব করল না। তারা মাঠ পার হতেই সেই মেঘ-খণ্ডটি সূর্যের উপর থেকে সরে গেল ।
এবার ছাত্ররা বুঝতে পারল, লোকনাথ বাবা একজন সাধারণ বা সামান্য সাধু নন। তিনি যে একজন ব্রহ্মজ্ঞ মহাপুরুষ এ বিষয়ে আর কোন সন্দেহ রইল না তাদের মনে ।
ছাত্ররা তখন আবার আশ্রমে ফিরে গিয়ে বাবাকে বলল, আমরা আগে শুধু মাঠ পার হবার কথা বলছিলাম । মাঠ পার হতে আমাদের কোন কষ্ট হয়নি আপনার দয়ায় । কিন্তু মাঠ পার হতেই আবার প্রচণ্ড রোদের তাপ পেলাম । ঢাকার আগে দয়াগঞ্জ পর্যন্ত আমরা যাতে ঠাণ্ডায় ঠাণ্ডায় যেতে পার, আপনি যদি কৃপা করে তার ব্যবস্থা করে দেন ত বড় ভাল হয়।
অন্তর্যামী বাবা তাদের মনের কথা আগেই জানতে পেরেছিলেন । তিনি বললেন, দয়াগঞ্জ পর্যন্ত তোরা কোন রোদের তাপ পাবি না। সেখান থেকে ঘোড়ার গাড়ি ভাড়া করে ঢাকায় যাবি ।
একথা শুনে ছাত্রের দল খুশি হয়ে বাবাকে প্রণাম করে বিদায় নিল । যতক্ষণ তারা দয়াগঞ্জ না পৌঁছাল ততক্ষণ আবার একখণ্ড মেঘ সূর্যকে আগের মত ঢেকে রাখল ।
এইভাবে তাঁর অমিত যোগ-শক্তিবলে প্রকৃতি জগৎকেও প্রভাবিত করতে পারতেন পরম-যোগী লোকনাথ বাবা। হংস যেমন জলমিশ্রিত দুগ্ধ হতে দুগ্ধের সার অংশটুকু গ্রহণ করে, তেমনি তিনি জীবের কর্মফলদ্বারা রচিত সুখদুঃখ মায়ায় ভরা এই জ্বালাময় সংসার হতে দুঃখের অবসান ঘটিয়ে সুখের অংশটুকু দান করতেন ভক্ত হৃদয়ে । লোকনাথ বাবা ছিলেন সেই হংস। ভক্তদের হদয়পদ্মে সর্বক্ষণ বিচরণ করতেন বলে তিনি ছিলেন শুচিষ্যৎ।