1. admin@channeldurjoy.com : admin : Salahuddin Sagor
  2. news.channeldurjoy@gmail.com : Editor :
শ্রীমা বলিতেন, দেশাচার মানতে হয় - চ্যানেল দুর্জয়
বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১০:৪৩ অপরাহ্ন

শ্রীমা বলিতেন, দেশাচার মানতে হয়

  • প্রকাশিত : সোমবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২০

উজ্জ্বল রায়:::: কিন্তু তাঁহার মতে তাই বলিয়া দেশাচারের নামে মানুষকে পিষিয়া মারা চলে না। বঙ্গের কোন কোন অংশে বিধবা মেয়েরা আহারাদি সম্বন্ধে খুব কঠোরতা করেন। এক বিধবার ঐরূপ কঠোরতার সংবাদ পাইয়া মা তাঁহাকে বলিয়াছিলেন, “তুমি রাত্রে রুটি পরটা ইত্যাদি খেও, ঠাকুরকে নিবেদন করে খেও।” অর্থাৎ দেশাচার মানিয়া অন্ন গ্রহন না করিলেও শরীররক্ষার অনুরূপ যুক্তিপূর্ণ ব্যবস্থা করা উচিত।

এইবিষয়ে শ্রীমায়ের স্বাভাবিক বিচারশক্তি ও সহানুভূতি শ্রীশ্রীঠাকুরের একদিনের ব্যবহার দ্বারা প্রভাবিত হইয়াছিল বলিয়া মনে হয়—- একবার একাদশীর দিন যোগীন-মার বিধবা খুড়িমা দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুরের কাছে আসিয়াছিলেন। কিন্তু সেইদিন নির্জলা উপবাস ও তার আগের দিনেও কোনো এক কার্যবশত অন্নগ্রহণ না করায় বৃদ্ধা সিঁড়িতে উঠিতে গিয়া একেবারে মাটিতে ঝুঁকিয়া পড়িতেছেন দেখিয়া ঠাকুর একপ্রকার ছুটিয়া আসিয়া তাঁহাকে ধরিলেন এবং যোগীন-মা কে জিজ্ঞাসা করিলেন, “এমন হাঁপাচ্ছে কেন?” যোগীন-মা কারন বলিলে ঠাকুর তখনি শিকা হইতে চিনি নামাইয়া গঙ্গাজলে শরবত করিয়া বৃদ্ধার মুখে ধরিয়া বলিলেন, “খাও।” বৃদ্ধা একবার অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে ঠাকুরের দিকে চাহিলেন; পরে বিনা বাক্যব্যয়ে শরবতটুকু পান করিয়া বুকে হাত দিয়া বলিলেন, “বুকটা ঠান্ডা হলো, বাবা।”

উত্তরকালে বালবিধবা শ্রীমতী ক্ষীরোদবালা রায় মায়ের নিকট দীক্ষা লইতে গেলে মা জিজ্ঞাসা করিলেন, “বাছা, তুমি একাদশীতে কি খাও?” ক্ষীরোদবালা আগে সাগু খাইতেন, কিন্তু পরে উহাতে বিধবার অগ্রহনীয় বস্তু ভেজাল দেওয়া আছে ভাবিয়া কিছুই খাইতেন না। এইরূপ কঠোরতার ফলে তাঁহার শরীর অতি শীর্ণ হইয়াছে। মা দেখিয়া, শুনিয়া বলিলেন, “না, না, আমি বলছি, তুমি সাগু খেও, এতে শরীর ঠাণ্ডা থাকে।” একটু থামিয়া বলিলেন, “বাছা, অনেক কঠোর করেছ; আমি বলছি, আর করো না। দেহটাকে একেবারে কাঠ করে ফেলেছ দেহ নষ্ট হলে কি নিয়ে ভজন করবে, মা?” ক্ষীরোদবালার মাথার চুল দেশাচার অনুযায়ী ছোট করিয়া কাটা ছিল বলিয়া গোলাপ-মা ও যোগীন-মা উহার অযৌক্তিকতা দেখাইয়া সহানুভূতি প্রকাশ করিলেন। কিন্তু মা বাধা দিয়া বলিলেন, “বেশ তো করেছে; চুল থাকলে একটু বিলাসিতার ভাব আসে, চুলের যত্ন করতে হয়। যাই হোক, মা, কেশের সেতু পার হয়ে তুমি এখানে এসে পৌছেছ। যার জন্যে এত কঠোরতা, তোমার সে কাজ হয়ে গেছে। এখন আমি বলছি, আর কঠোরতা করো না”। মায়ের কথাগুলিতে করুণা ও ভাগবতী দৃষ্টির—-বিলাসিতা-পরিহারের সহিত ঈশ্বরলাভের উপায়ভূত দেহরক্ষার জন্য আগ্রহের—-কি অপূর্ব সমাবেশ!

বালবিধবা শবাসনা দেবীকে নিরম্বু উপবাসে উন্মুখ দেখিয়া শ্রীমা বলিয়াছিলেন, “আত্মাকে কষ্ট দিয়ে কি হবে? আমি বলছি তুই জল খা।” সুরবালা দেবী পতিবিয়োগের পর অবশিষ্ট জীবন হবিষ্য করিয়া কাটাইবার প্রস্তাব করিলে মা বলিয়াছিলেন, “আত্মা যদি কিছু খেতে চায়, আত্মাকে দিতে হয়। না দিলে অপরাধ হয়; সে কাঁদে, ‘আমাকে দিলে না’ বলে।

শ্রীমা নিজে একাদশীর দিনে ভাত না খাইলেও সামান্য লুচি খাইতেন। তাঁহাকে বলিতে শোনা যাইত, “খেয়ে দেয়ে দেহটা ঠাণ্ডা করে নিয়ে ভগবানকে ডাক।” তাঁহার সহচরী যোগীন-মা এবং গোলাপ-মাও নির্জলা উপবাস করিতেন না। আমরা দেখিয়া আসিয়াছি যে, শ্রীশ্রীঠাকুর বস্তুত লীলাসংবরণ করেন নাই জানিয়া শ্রীমা ঠাকুরের নির্দেশমতে তাঁহার সধবা-চিহ্নগুলি সম্পূর্ণ ত্যাগ করেন নাই; তথাপি স্বাভাবিক বিলাসশূন্যতা ও দেশাচারের প্রতি সম্মানপ্রদর্শনের মিশ্রনে তাঁহার আহার ও পরিচ্ছেদাদিতে একটা সংযমের ভাব সকলেরই চোখে পড়িত। মাছ তিনি কখনও খাইতেন না, জামা পরা তাঁহার কোন কালেই অভ্যাস ছিল না; আর শাড়ি না পরিয়া তিনি সরু লাল পাড় ধুতি ব্যবহার করিতেন।

এই বিভাগের আরো সংবাদ

আজকের দিন-তারিখ

  • বুধবার (রাত ১০:৪৩)
  • ১৫ই মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ৭ই জিলকদ ১৪৪৫ হিজরি
  • ১লা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)

এই মুহুর্তে সরাসরি সংযুক্ত আছেন

Live visitors
288
3728841
Total Visitors