1. admin@channeldurjoy.com : admin : Salahuddin Sagor
  2. news.channeldurjoy@gmail.com : Editor :
একটি অসমাপ্ত কল্পকথা :শরিফা পারভীন এ্যানি। - চ্যানেল দুর্জয়
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৪:৫৪ অপরাহ্ন

একটি অসমাপ্ত কল্পকথা :শরিফা পারভীন এ্যানি।

  • প্রকাশিত : শনিবার, ২০ জুন, ২০২০


খোলা জানালা / ফিচার : বাসার দরজার সামনে কলিং বেল টিপে দাড়িয়ে আছি। তখন রাত ১১:৩৫। দরজা খুলতে দেরি হচ্ছে। তার মানে রেনু (আমার সহর্ধমিণী) নিশ্চয় ঘুমিয়ে পড়েছিল। এত রাতে কলিং বেলের শব্দ শুনে হয়ত আতকে উঠেছে। কারন বাসায় আাসার মত লোক বলতে আমি আর কাজের মেয়েটা কিন্তুএত রাতে তো কাজের মেয়েটার আসার কথা নয়এসব ভেবেই হয়ত দরজা খুলতে দেরি হচ্ছে। এদিকে টানা ৫দিন পর ডিউটি শেষ করে বাসায় ফেরার উ কন্ঠা চেপে না রাখতে পেরে ভাবলাম রেনুকে ফোন দিয়ে বলি আমি রাকিব দরজা খোলো। পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম সে বার রাতুলকে (আমার বড় ছেলে) র্স্মাট ফোন কিনে দেওয়াই ওর যে বাটন ফোনটা আমাকে দিয়েছিল সেটা পকেটে নেই। তাড়াহুড়ো তে সেটার কথা মনেই হয়নি একবার ও হয়তো টেবিলের ওপর পড়ে আছে এখনো। কেউ এত রাতে কলিং বেল টিপছে এ খবর জানাতে হয়তো ইতিমধ্যে রেনুফেলে আসা ফোনটার কয়েকবার ঘন্টা বাজিয়েছে। এসব ভাবতে ভাবতে দরজা খুলার শব্দ পেলাম।


ও কী! কাকের মতো ভিজেছো কেন?
হাহাহা দেখেছ তোমার মনেই নেই যে বাসায় একটাই মাত্রই ছাতা? আচ্ছা আগে বলো দরজা খুল্লে একা
একা, রাতুলকে না নিয়ে, তুমি তো এত সাহসী ছিলে না? কি হোল দিয়ে দেখলাম তুমি ভেজা গায়ে দাড়িয়ে
আছো। ভাবিনি আজ তুমি আসবে। তা আসবে যখন একটুআগে এলেই পারতে রাস্তায় তো জ্যাম নেই।
ফোন করলাম কয়েকবার কিন্তুতুল্লে না। হাসপাতাল এ ফোন করে জানলাম তোমার ওর্য়াড এর ৪জনের
নেগেটিভ এসেছে আজ রাতটা নাকি বাড়িতেই থাকবে। তখন ছুটে এসে দরজা খুল্লাম।আচ্ছা কথা পরে হবে আগে গোসল করে নাও ভিজে একশেষ হয়েছো। জানো তোমাকে সত্যিই কাকের মত দেখাচ্ছে হাহা।
তুমিই তো বলো আমার গা এর রঙ নাকি আর একটুকালো হলেই কাকের সাথে মিলে যেত হাহাহা।বাজে কথা রাখো আমি পানি গরম করে দিচ্ছি তুমি গোসল টা সেরে নাও। ঠাণ্ডা পানিতে আবার অসুখ বাধাবে তোমার যে ঠাণ্ডা লাগার ধাচ।
বাবা তুমি ও দেখি ডাক্তার গিন্নি হয়ে উঠেছ। তা এসব পরার্মশ কি ফ্রিতে দিচ্ছো?
শোনো রাত দুপুরে আমার পেছনে লাগা বন্ধ কর। আমি তরকারি গরম করছি গোসল করে খেতে আসো।
যথা হুকুম।
রেনুর আদেশে গোসলে ঢুকে গেলাম। আজ বেশ অন্যরকম, প্রায় বীরের বেশেই ঢুকলাম। তার অবশ্য দুটো
কারন আছে,আজ ঠাণ্ডা পানিকে পরাজিত করতে মানসিক শক্তি ব্যয় করতে হচ্ছে না। মানসিক শক্তি
অবশ্য বেশ খানিক ফুরিয়ে এসেছিলো।কিন্তুআজকে আমার আন্ডারের ৬ জনের মধ্যে ৪ জনের
রির্পোট নেগেটিভ আসায় সে শক্তি ফিরে পাচ্ছি বলে মনে হচ্ছে। এজন্য বোধহয় নিজেকে বীর মনে
হচ্ছে। অবশ্য এমনটা ভাবতে মন্দ লাগছে না। কিন্তুনিজেকে বীর রুপে বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারলাম
না।বাথরুমের দরজায় টোকা পড়লো,রেনুর গলা… কই তুমি তো বের হওয়ার নামই নিচ্ছো না। কখন থেকে খাবার গরম করে বসে আছি। ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে
তো। মেয়েদের ও তো গোসলে এত সময়লাগে না।
দরজা না খুলেই জবাব দিলাম ৫দিনের গোসল একসাথে করছি সময় তো লাগবেই। আর একটুঘষা মাজা করে দেখি নিজের কাক অপবাদ ঘুচাতে পারি কিনা!হাহাহা। রসিকতা ছাড়ো তো খাবে এসো। গোসল সেরে খাবার টেবিলে গিয়ে দেখি রেনুখাবার সাজিয়ে বসে আছে। আয়োজন বেশি না কিন্তুমন্দ ও না। বেগুন
দিয়ে শুটকি মাছের চচ্চড়ি, মাসকলাই এর ডাল,আগুন গরম ধোয়া ওঠা ভাত। এই ৫ দিনে কলা পাউরুটি আর ডিম খেতে খেতে অন্য খাবারের স্বাদ প্রায় ভুলতে বসেছিলাম। বেগুন আমার অতিপ্রিয়। বেগুনের গুনগান করতেই মনে হলো পরীর কথা (আমার ছোট মেয়ে) সে কি তাহলে বাড়িতে নেই? কারন তার উপস্থিতিতে তার গাছের বেগুন ছেড়া হবে এটা সম্ভব না। এর আগে ও ৩বার আমাকেই বিচারকের আসনে বসতে হয়েছে।অভিযোগ ছিলো রেনুর বিরুদ্ধে সে পরীর গাছের বেগুন ছিড়ে শুটকি দিয়ে রান্না করতে চাই। পরী বড্ড অভিমানী। বিচারক হওয়া সত্ত্বেও নিজের বেগুন -শুটকি রসনার লালসায়
বলেছিলাম তাহলে তো মন্দ হয়না। তা শুনেই পরীর অভিমানের পালা শুরুহলো। এরপর পরীর সাথে আর
ভালো করে কথা বলার সুযোগ হয়নি পরের দিনই তো ডা: মাহমুদ সাহেবের করোনা পজিটিভ আসলো।
দুইজনের দায়িত্ব একা সামলাতে হলো।বাসায় ফেরা হলো না ৫দিন। পরীর অভিমান ভাঙানো দরকার।
এখনো হয়তো অভিমান কমেনি।

নাহলে ফোন দিয়ে জানতে চাইতো বাবা তুমি কবে আসবে? ৫দিনে সে
একবারো ফোন দেয়নি। হয়তো বা ফোন দিয়েছে আমাকে না পেয়ে অভিমানে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।
এসব ভেবেই নিজের অজান্তে র্দীঘশ্বাস ফেললাম।সামনে বসা রেনুকে দেখে অপ্রস্তুত হলাম। রেনুর
প্রশ্ন এড়াতে আমিই মুখের আধ চেবানো ভাতটা গিলেই পাল্টা প্রশ্ন করলাম রেনুপরী কোথায়?
রেনুবলল: ছোট মামা গাড়ী পাটিয়েছিল ওইখানেই গেছে তুমি কাল বাসায় থাকলে ওকে দিয়ে যেত বলব।
আমাকে বলে আম্মুআমার সব বন্ধুদের বাবারা বাসায় থাকে আমার আব্বুথাকে না কেন? আমি বলেছি
বাবা আসলে তার কাছেই শুনিস।
আচ্ছা সে ও আগে ফিরুক তারপর দেখা যাবে। কিন্তুএই অবস্থায় তুমি ওকে একা যেতে দিলে?
একা যায়নি রাতুল ও গেলো ওর সাথে।ডিসের তিন মাসের বিল বাকি থাকায় লাইন কেটে দিয়ে গেলো টিভি দেখতে পারে না দুইটা মিলে খালি আমার পিছে পিছে ঘুরে তাই ভাবলাম ঘুরে আসুক। তবুও যেতে দেওয়া ঠিক হয়নি।

রেনুচুপ করে রইল।আমি ও নিঃশব্দে খাওয়া শেষ করলাম।খাওয়া শেষে রেনুকে বললাম পরীর বেগুন
তাহলে রান্না করেই ছাড়লে? এবার এসে আবার বিচার দিবে ও এবার ও তুমিই আসামী। যাই বলো খেতে
কিন্তুদারুন হয়েছে আর ডাল টা তো অসাধারন হয়েছে। মাথা তুলে রেনুর দিকে তাকালাম। ওর মুখ দেখে মনে হলো আমার একটা কথা ও এতক্ষণ ও শোনেনি।ডান হাতের কনুই দিয়ে ওকে নাড়া দিয়ে বললাম তোমার আবার কি হলো? ও বললো কিছুনা,বলেই চুপ করে গেলো।আমার ও আর জানতে ইচ্ছা করলো না। ভাবলাম পরী আর রাতুলের কথা ভাবছে হয়ত।

হটাৎ রেনুবললো হ্যাঁগো একটা কথা বলি?আামাদের দেশে কি ডাক্তার ডিস লাইনের চেয়েও সস্তা?
কি বলো এসব?
দেখো তিনমাস বিল দেওয়া হয়নি বলে লাইন কেটে দিলো,তোমার ও তো তিনমাস বেতন হয়নি অথচ তুমি
তো…বলেই রেনুথেমে গেল।
আমি জানি রেনুর প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই। রেনুর চোখ এড়িয়েই আরও একটা র্দীঘনিঃশ্বাস
ফেললাম। ওর কথার কথার জবাব না দিয়েই বললাম অনেক দিন ভালো মতো ঘুম হয়নি চলো ঘুমাতে যাই।
আমি রেনুর জন্য অপেক্ষা না করেই বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম।


লেখকঃ
শরিফা পারভীন এ্যানি
এম.বি.বি.এস, প্রথমর্বষ।
উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ।

বিঃদ্রঃ- এই কলামে লেখার সকল দ্বায়ভার একমাত্র লেখকের। প্রিয় দর্শক/ পাঠক আপনিও লিখতে পারেন আমাদের খোলা জানালা কলাম / উপসম্পাদকীয়তে। জানাতে পারেন আপনার অভিজ্ঞতা ও মতামত৷ আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন info.channeldurjoy@gmail.com এই ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো সংবাদ

আজকের দিন-তারিখ

  • রবিবার (বিকাল ৪:৫৪)
  • ৫ই মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ২৬শে শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরি
  • ২২শে বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)

এই মুহুর্তে সরাসরি সংযুক্ত আছেন

Live visitors
283
3435321
Total Visitors