সালাহ্উদ্দীন সাগর ।। নামের শেষাংশে মিল থাকায় মারামারি সংক্রান্ত একটি মামলায় (এসসি ৫৯৮/১৭) ওয়ারেন্ট ভুক্ত আসামিকে আটক না করে পুলিশ অপর একজনকে আটক করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওয়ারেন্ট ভুক্ত আসামির নাম জাহাঙ্গীর আলম চঞ্চল। পিতার নাম ইনতাজ আলী সবর। বাড়ি শহরের খড়কী রেলগেট কলাবাগান এলাকায়। আর পুলিশ আটক করেছে শহিদুজ্জামান সেলিম চঞ্চলকে। পিতার নাম মৃত সবর আলী। বাড়ি শহরের ষষ্টিতলাপাড়ায়। পুলিশ বলেছে, তারা ওয়ারেন্ট ভুক্ত চঞ্চলকেই আটক করেছে। বাদি নিজে তাকে সনাক্ত করেছেন। মামলার চার্জশিটে ভুল নাম উপস্থাপনের সুযোগ নিচ্ছে এই চঞ্চল।’
আটক শহিদুজ্জামান সেলিম চঞ্চল দাবি করেছেন, তার নামে কোন মামলা নেই। অতীতে কোন মামলাও হয়নি। বৃহস্পতিবার (৬ মে) রাত ৮টার দিকে তিনি যখন রেলগেট এলাকায় যান;তখন পুলিশ তার কাছে গিয়ে নাম পরিচয় জানতে চায়। তিনি তার নাম, পিতার নাম, ভোটর আইডি কার্ড সব দেখালেও পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে থানায় গিয়ে তিনি জানতে পারেন তার নামে একটি মামলা হয়েছিল ২০১১ সালের ১৭ জুলাই। কোতয়ালি থানার তৎকালীন ডিউটি অফিসার এসআই তাসলিমা খাতুন মামলাটি রেকর্ড করেন।
আটক চঞ্চলের স্ত্রী রেশমা খাতুন জানিয়েছেন, খড়কী কাঁসারদিঘি এলাকার জিয়াদ আলী গাজীর ছেলে তরিকুল ইসলাম ২০১০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি তার ওপর হামলা হয়েছে এই দাবি করে একটি মামলা করেন থানায়। মামলায় মোট ৬ জনকে আসামি করা হয়েছিল। আসামিরা হলো, কলাবাগান খড়কী এলাকার মৃত কুদ্দসের ছেলে শহিদুল ইসলাম, ইনতাজ আলী সবরের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম চঞ্চল, আবুল হোসেনের স্ত্রী জোসনা বেগম, মোতালেবের ছেলে বিপুল এবং একই এলাকার সোহেল। যেদিন থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছিলো তার দেড় বছর আগে হামলা হয়েছিলো। যা বাদি তার এজাহারে উল্লেখ করেছিলেন। এই মামলাটি তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট দিয়েছিলেন থানার তৎকালীন এসআই আনিসুজ্জামান। চার্জশিটেও জাহাঙ্গীর আলম চঞ্চলের নাম রয়েছে। তার পিতার নাম সবর আলী। তারপরও পুলিশ তার স্বামী শহিদুজ্জামান সেলিম চঞ্চলকে আটক করে ওই মামলায় আদালতে চালান দিয়েছে।
রেশমার অভিযোগ, ‘সম্প্রতি ওই মামলায় পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। ওয়ারেন্ট নিয়ে কোতয়ালি থানার এএসআই আল মিরাজ বৃহস্পতিবার (৬ মে) সন্ধ্যার দিকে তার স্বামীকে আটক করেন। আটকের সময় ‘যে চঞ্চলকে খুঁজছেন সেই চঞ্চল আমি না’ জানালেও তিনি কোন আবেদন শুনেননি। বরং পুলিশের কথাশুনে বাদিকে থানায় নিয়ে গিয়ে ‘আসামি সনাক্ত করা হয়েছে’ বলে বাদি একটি লিখিত দরখাস্ত আদালতে জমা দেন। তবে বাদির মুখোমুখি করেনি পুলিশ। তিনি এই বিষয়টি আরো তদন্ত করার দাবি জানান এবং তার স্বামী নির্দোশ বলে জানান।
এ বিষয়ে এএসআই আল মিরাজের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আটক চঞ্চলকে বাদি নিজে সনাক্ত করেছে। এবিষয়ে আদালতে প্রত্যয়নও দেয়া হয়। কোতয়ালি থানার ওসি তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘যে সময় মামলা হয় সে সময় আটক চঞ্চলের নাম লেখা হয় জাহাঙ্গীর আলম চঞ্চল। প্রকৃত পক্ষে তার নাম হবে শহিদুজ্জামান সেলিম চঞ্চল। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার তদন্ত করে চার্জশিটে জাহাঙ্গীর আলম চঞ্চলের নাম উপস্থাপন করেছেন। মামলার বাদি নিজে তার ওপর হামলাকারী হিসাবে আটক শাহিদুজ্জামান সেলিম চঞ্চলকে সনাক্ত করেছেন। তিনি এই বিষয়ে আদালতে আবেদনও করেছেন।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চার্জশিটে ভুল নাম উপস্থাপন করার অপরাধ হিসাবে কোন আইনী ব্যবস্থা আছে কি-না জানতে চাইলে ওসি তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘এটি আদালতের বিষয়। আদালত ওই তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ডাকলে তিনিই জবাব দেবেন আদালতে।’ তবে আটক চঞ্চল যে প্রকৃত চঞ্চল তা তিনি জোর দিয়ে বলেন।