নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
পবিত্র ঈদ-উল-আজহার ছুটি শেষে খুলেছে সরকারি অফিস আদালতসহ সব প্রতিষ্ঠান। কর্মস্থলে যোগ দিতে বিভিন্ন পেশাজীবীর মানুষ ঢাকায় ফিরছেন। ফলে কুমিল্লা-ঢাকা রুটের সব বাস সার্ভিসেই যাত্রীর চাপ বেড়েছে। আর এরই সুযোগ নিয়ে বাস মালিকরা যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি কায়দা করে সাংকেতিক সংখ্যা ব্যবহার করেও এ বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেক যাত্রী।
টিকিট দেখে ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুটি আসনের টিকিটের জন্য যদি কেউ ৫০০ টাকার নোট দেন তাহলে টিকিটে লেখা থাকে ৪০। দুইটি টিকিটের দাম ২৩০ করে ৪৬০ টাকা। ৪০ দিয়ে বোঝানো হয় সেটা গাড়িতে দেওয়া হবে।
আরেকটি টিকিটে দেখা যায়, ০ কম দিয়ে হাতের লেখায় শুধু ২৩ লেখা। অর্থাৎ ২৩০ টাকা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, আরও বিভিন্ন উপায়ে প্রশাসনের দৃষ্টি এড়াতে বাড়তি টাকা আদায় করা হচ্ছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকা ঘুরে দেখা দেখা যায়, কুমিল্লা থেকে ঢাকাগামী তিশা প্লাস বাসের কাউন্টারের সামনে যাত্রীদের দীর্ঘ সারি। সেখানে প্রায় ৩০ জনের বেশি যাত্রী দাঁড়ানো। টিকিট নেওয়ায় বাস মালিকরা অন্য কোনো উপায় না নিলেও টিকিটের দাম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। টিকিটে ১৮০ টাকা ভাড়া লেখা থাকলেও তিশা প্লাস কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের কাছে ২৩০ টাকা নিচ্ছে, যা স্বাভাবিক ভাড়ার তুলনায় ৫০ টাকা বেশি।
এছাড়া, শাসনগাছা, জাঙ্গালিয়াসহ কুমিল্লার প্রায় সব বাসস্ট্যান্ডেই যাত্রীর চাপ থাকলেই বাড়তি ভাড়া নেওয়া হয় বলে জানা গেছে। তবে কুমিল্লা থেকে ঢাকা ছাড়া অন্য কোনো রুটের কাউন্টারে তেমন যাত্রী দেখা যায়নি।
চাঁদপুর থেকে বাসের টিকিট না পেয়ে বোগদাদ সার্ভিসের বাসে করে ঢাকা যেতে কুমিল্লার বিশ্বরোড এসেছেন মতিঝিলের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম। তিনি ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “চাঁদপুর থেকে এসে আধা ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট নিয়েছি। টিকিটের গায়ে লেখা ভাড়া ১৮০ টাকা। কিন্তু তারা ভাড়া নিচ্ছেন ২৩০ টাকা করে। এটা তো নিয়ম হতে পারে না।”
পরিবারের চার সদস্যকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হয়েছেন লালমাইয়ের আবদুল জলিল। তার কাছ থেকে ভাড়া হিসেবে ৯২০ টাকা রাখা হয়। তিনি এত বেশি ভাড়া রাখার কারণ জিজ্ঞেস করলে কাউন্টারে থাকা ম্যানেজার বলেন, “ঈদের ভাড়া বেশি হয়। গেলে যাবেন, না গেলে নাই।”
ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “ঈদের আগেও গেলাম ১৮০ টাকা দিয়ে। এখন মানুষ নিরুপায়। ২৩০ টাকা ভাড়া বললেও যেতে হবে। কারণ প্রায় সবাই কর্মজীবী।”
অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিশা প্লাস কাউন্টার কুমিল্লার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড শাখার পরিচালক বিমল চন্দ দে বলেন, “আমরা যখন ঢাকা থেকে কুমিল্লা যাই, তখন আমাদের গাড়ি খালি থাকে। তাই যদি আমরা আগের ভাড়াতেই যাত্রী নেই, আমাদের লোকসান গুণতে হবে। এ কারণে আমরা ২৩০ টাকা ভাড়া নিচ্ছি। তাছাড়া, আমরা নিয়ম মেনেই এ ভাড়া নিচ্ছি।”
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কুমিল্লার সহকারী পরিচালক আছাদুল ইসলাম বলেন, “বিষয়টির ওপর আমরা নজর রাখছি। এখনও কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে নিয়ম অনুযায়ী অভিযোগকারীকে জরিমানার ২৫% দেওয়া হবে।”