যশোর অফিসঃ
যশোরের চৌগাছা উপজেলার ৯নং স্বরুপদাহ ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আসরাফ উদ্দিন রাজা (৩০) শপথ গ্রহণের পর থেকেই এলাকায় থাকে না। তিনি ঢাকায় ডিভাইন গ্রুপ নামের একটি ইন্ডাস্ট্রিতে চাকরি করেন বলে জানান এলাকাবাসী।
আসরাফ উদ্দিন রাজার বাড়ী স্বরুপদাহ ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের নওদাপাড়া গ্রামে। সে এলাকায় না থাকায় ৩ নং ওয়ার্ডের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ এবং মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,(খড়িঞ্চা-নওদাপাড়া), বহিলাপোতা, বাদে খড়িঞ্চা ) এই তিন গ্রামের সমন্বয়ে গঠিত উপজেলার স্বরুপদাহ ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড। যার ভোটার সংখ্যা ১৬২৪। গত বছর ২০২১ সালের ১১ নভেম্বর তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে স্বরুপদাহ ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের টিউবওয়েল প্রতিকে প্রার্থী হয়ে আসরাফ উদ্দিন রাজা ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন। একই বছর ২৬ ডিসেম্বর নির্বাচিত সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠিত হয়। রাজার ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড মেম্বার হিসেবে ৮/৯ মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও মেম্বার হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদের কোন সভা ও পরিষদের কোন কার্যত্রুমে উপস্থিত না থাকা বা এলাকায় না থাকার কারণে ৩ নং ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে এবং ক্ষোভ ও মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে স্বরুপদাহ ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আলাউদ্দিন বলেন, শপথের পর থেকে আমাদের মেম্বার এলাকায় থাকে না। ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করেন। এই জন্য আমরা ইউনিয়ন পরিষদের সকল সরকারি সুযোগ-সুবিধা হতে বঞ্চিত হচ্ছি।যেমন বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা , প্রতিবন্ধী ভাতা, ১০কেজি ও ৩০ কেজি চাউলের কার্ড ইত্যাদি এমনকি ওয়ারেশকায়েম সার্টিফিকেট প্রয়োজন হলেও আমরা কার কাছ থেকে নিব?
৩নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান জানান, ভোটের আগে মেম্বরকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ‘রাজা তুমি তো ঢাকায় চাকরি করো তাহলে ভোটে জিতলে কি করবা?’ প্রশ্নের উত্তরে তিনি তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে ভোটে পাশ করলে চাকরি ছেড়ে এলাকায় চলে আসবে এবং জনগণের সেবা করবে। কিন্ত পাশ করার পর থেকে মেম্বারকে আর এলাকায় দেখা যায় নি এবং খোঁজ নিয়ে দেখেন ইউনিয়ন পরিষদে যায় না। তিনি আরও বলেন, মেম্বার না থাকলে ওয়ার্ড নিয়ন্ত্রণ করবে কে। মেম্বার তো ঢাকায় চাকরি করে। মেম্বার না থাকলে চেয়ারম্যান কোন মাল দিতে চায় ? এবং তারা পরিষদের সকল মাল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।
৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হানিফ বলেন, মেম্বারের অনুপস্থিতিতে আমাদের নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। গরীব অসহায় মানুষ সরকারের সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কারণ মেম্বার না থাকলে চেয়ারম্যান কিছু দিতে চাই না বলে অভিযোগ করেন।
এলাকাবাসীর দাবি, আমাদের মেম্বার আমাদের মাঝে ফিরে আসুক। মেম্বারের অনুপস্থিতির কারণে ৩ নং ওয়ার্ডের সাধারণ জনগণের নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে আর সরকারের সকল সুযোগ-সুবিধা হতে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা। তারা মেম্বারের বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারী কর্মকর্তাদের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
উল্লেখ্য,স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ বিধান অনুযায়ী চেয়ারম্যান বা সদস্য তাঁহার স্বীয় পদ হইতে অপসারণযোগ্য হইবেন, যদি তিনি ৩৪-(ক) যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতিরেকে পরিষদের পর পর তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকেন।
আসরাফ উদ্দিন রাজার শপথের পর থেকে ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন আর কোনো সভা বা মিটিংয়ে উপস্থিত না থাকার বিষয়টি স্বরুপদাহ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব সাধন কুমার চন্দ্র নিশ্চিত করেছেন।
ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আসরাফ উদ্দীন রাজা বলেন, “হ্যা আমি ঢাকায় ইন্ডাস্ট্রিতে চাকরি করি কিন্তু মাঝে মধ্যে এলাকায় আসি ও ইউনিয়ন পরিষদে যায়।চেয়ারম্যান তো সবকিছু করেন।” তিনি জানান, আমি ঢাকায় এক জায়গায় কিছু টাকা পাবো হাতে পাইলে আমি চলে আসব।
স্বরুপদাহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল কদর এ বিষয়ে জানায়, মেম্বার মাঝে মধ্যে আসে। আমিই সব দেখাশুনো করি কোনো সমস্যা নাই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৯নং ওয়ার্ডের আমি মেম্বার আমি চেয়ারম্যান।