সাগর জাহান : বাবাকে না পেলেও নাম পেলো যমজ দুই ভাই-বোন। পুত্র শিশুটির নাম রাখা হয়েছে মোহাম্মদ মুসা আর কন্যা শিশুটি নাম পেয়েছে মাইশা। তবে শিশুকালেই মা-বাবার স্নেহ ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হলো তারা। একদিকে মেলেনি পিতৃপরিচয়, অন্যদিকে মা মানসিক ভারসাম্যহীন। যেকারণে ১৮ দিন বয়সে মায়ের সাথেও বিচ্ছেদ ঘটলো তাদের। রাষ্ট্র নিলো তাদের দায়িত্ব।
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে দুটি অ্যাম্বুলেন্সে করে পাঠানো হয়েছে তাদের দুই ঠিকানায়। যশোর জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার তাদের বিদায় জানানোর আগমুহূর্তে শিশু দুজনকে কোলে তুলে আদর করেন।
যমজ দুই শিশুর মা মোছা. মাহিনুরকে নিয়ে গাজীপুরের কাশিমপুর সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রের উদ্দেশে যাত্রা করেন জেলা প্রতিবন্ধীবিষয়ক কর্মকর্তা মুনা আফরিণ। অন্যদিকে, শিশু মোহাম্মদ মুসা ও মোছা. মাইশাকে নিয়ে খুলনার ছোটমণি নিবাসের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের চাইল্ড প্রটেকশন কর্মকর্তা খালেদা আক্তার।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন যশোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য রণজিৎ কুমার রায়, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুণ অর রশিদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. ইয়াকুব আলী মোল্লা, জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম ও হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যালয়ের সমাজসেবা কর্মকর্তা রুবেল হাওলাদার।
বাঘারপাড়ার আব্দুল বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তি এ প্রসঙ্গে বলেন-যারা সন্তান জন্ম দিয়ে বাবার দায়িত্ব নিতে ভয় পায়, তারা কাপুরুষ। তাদের পিতা নামের কলঙ্ক। তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের শত্রু। এদের শনাক্তকরণে সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল এবং গ্রাম বাংলার সমাজ সচেতন মহলকে সজাগ ভূমিকা পালন করতে হবে।
যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন মা ও তাঁর দুই সন্তানকে পাওয়ার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের চিকিৎসা ও দেখাশোনার ব্যবস্থা করা হয়। পরে আদালতের নির্দেশনায় জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মা ও দুই সন্তানকে দুটি সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়। রাষ্ট্র তাদের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে।
যশোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য রণজিৎ কুমার রায় বলেন, তার নির্বাচনী এলাকা বাঘারপাড়ায় মানসিক ভারসাম্যহীন নারী মাহিনুর যমজ সন্তান প্রসব করেন। পরে হাসপাতালে তাদের সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত করা হয়। আজ সেই মানসিক ভারসাম্যহীন মা ও দুই শিশু সন্তানের বিচ্ছেদ ঘটলো। পরিস্থিতিগত কারণে তাদের যেতে হলো দুই ঠিকানায়। তিনি মা-সন্তানদের মঙ্গল কামনা করে বলেন-আপসোস ফুটফুটে নিষ্পাপ শিশু দুটি পিতৃপরিচয় পেলো না। মা মানসিক ভারসাম্যহীন হলেও বাবা যদি থাকতো, তাহলে এক ঠিকানায় অর্থাৎ এক ঘরে বেড়ে ওঠার সুযোগ পেতো শিশু দুটি। বাবা-মায়ের আদর ভালবাসা থেকে শিশু দুটিকে বঞ্চিত হতে হতো না।
এরআগে গত সোমবার দুপুরে যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে শিশু কল্যাণ বোর্ডের সভায় মা ও সন্তানদের দুই আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। ১৪ সেপ্টেম্বর পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-১-এর বিচারক ওই নারী ও দুই নবজাতকের বিষয়টি নিষ্পত্তি করার বিষয়ে জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডকে দায়িত্ব দেন।
এদিকে ১৮ দিন ধরে যশোর জেনারেল হাসপাতালে যমজ সন্তান ও তাদের মা চিকিৎসাধীন ছিলেন। পিতার খোঁজ না মিললেও মানসিক ভারসাম্যহীন মা মাহিনুরের স্বজনদের সন্ধান পাওয়া যায় কিন্তু তারা দায়িত্ব নিতে রাজি না হওয়ায় রাষ্ট্র নিলো দায়িত্ব।