রায়হান হোসেন, চৌগাছাঃ
যশোর চৌগাছা উপজেলা বিএনপিতে এবার ভাঙ্গনের সুর। সোমবার বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সরকার পতনের ১ দফা দাবীতে যশোর জেলা বিএনপির কর্মসূচিতে তেমনটাই দেখাগেছে। কর্মসূচিতে চৌগাছা বিএনপির ৪ ভাগে অংশগ্রহনকে চরম গ্রুপিং বলে আখ্যা দিয়েছেন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক এমএ সালাম। তবে এটাকে গ্রুপিং না বলে খেয়ালিপনা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জহুরুল ইসলাম।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ দিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা চৌগাছা বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। নেতাদের মধ্যে পারষ্পারিক সম্পর্কের অবনিতর কারনে বার বার থমকে গেছে দলটির রাজনৈতিক কর্মকান্ড। তারপরেও সংগঠনকে টিকিয়ে রাখতে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক এমএ সালাম, যুগ্ম-আহ্বায়ক ও হাকিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদুল হাসান এবং পৌর বিএনপির সাধারন সম্পাদক আব্দুল হালিম চঞ্চলের মতো নেতাদের চেষ্টায় এ যাবৎ প্রায় সকল ঘোষিত কর্মসূচিতে অংশগ্রহন করেছে উপজেলা বিএনপি। তবে উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সেসব কর্মসূচিতে তেমন দেখা মেলেনি। এছাড়া বিভিন্ন মামলায় জর্জরিত বিএনপির নেতা কর্মীদেরকেও শীর্ষ নেতারা তেমন দেখভাল করেননা বলেই অভিযোগ রয়েছে।
অপরদিকে উপজেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক জহুরুল ইসলামের সাথে যুগ্ম-আহ্বায়ক ইউনুচ দফাদার ও এমএ সালামের সম্পর্ক অনেক আগে থেকেই ভালনা। কিন্তু ৯ অক্টোবরের (গত সোমবারের) কর্মসূচিতে দেখাগেল ভিন্ন চিত্র। পরিচিত বর্তমান যুগ্ম-আহ্বয়ক ইউনুচ-সালাম গ্রুপ ভেঙ্গে শুধুমাত্র এমএ সালামের নেতৃত্বে একটি, এবং আহ্বায়ক জহুরুল- যুগ্ম-আহ্বয়ক হাসান গ্রুপ ভেঙ্গে শুধুমাত্র যুগ্ম-আহ্বায়ক ও হাকিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল হাসানের নেতৃত্বে অপর একটি মিছিল কর্মসূচিতে যোগদান করে। অন্য দিকে চৌগাছা পৌর বিএনপির সাধারন সম্পাদক আব্দুল হালিম চঞ্চলের নেতৃত্বেও আলাদা একটি মিছিল জনসভাতে যোগ করে। আর সকলকে অবাক করে যুগ্ম-আহ্বায়ক ইউনুচ দফাদারের নেতৃত্বে জহুরুল ইসলামের অনুসারি হিসেবে পরিচিত নেতাদের নিয়ে একটি মিছিল জনসভায় যোগদান করে। সোমবারের এই বিভাজন যেনো নতুন গ্রুপিং-এর সংকেত দিচ্ছে। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা বিএনপির একাধিক নেতারা জানিয়েছেন, শুধূমাত্র নিজেদের অবস্থান ঠিক রাখতে আহ্বায়ক জহুরুল ইসলাম এবং ইউনূচ দফাদার একসাথে হয়েছেন। নতুন গ্রুপিং-এর বিষয়টি নিয়ে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক এমএ সালাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে বেশ কানাঘুষা শুনছি। তবে যেহেতু ইউনুচ ভাই নিজে আমার সাথে মিশে চলেছেন তাই এখনই তাকে আমি পর ভাবছিনা।
নতুন গ্রুপিং-এর বিষয়টি পাশ কাটিয়ে চার ভাগে মিছিলের বিষয়ে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জহুরুল ইসলাম বলেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যারা আলাদা আলাদা মিছিল করেছে সেটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়।
তবে জহুরুল ইসলাম স্বীকার না করলেও গ্রুপিং নিয়ে মুখ খুলেছেন উপজেলা বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। উপজেলা বিএনপির দুজন শীর্ষ নেতা বলেন নেতা কর্মীদেরকে মূল্যায়ণ না করে শুধু ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারে ব্যষÍ জহুরুল ইসলামের কারনেই দলের আজ বিভাজন।
এদিকে দলের বিশ^স্ত একটি সূত্র জানিয়েছেন আগামী সন্মেলনের আগে দলীয় গ্রুপিং আরো চরম আকার ধারন করতে পারে। এবং নতুন গ্রুপিং-এ জহুরুল-হাসান গ্রুপের নেতারা কে কোন দিকে অবস্থান করবেন, আর সালাম-ইউনূচ গ্রুপের নেতারাই বা কোন জোটে যাবেন সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে যুগ্ম-আহ্বায়ক ও হাকিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদুল হাসান বলেন, জহুরুল ইসলামের বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করে বলেন দল চাইলে আগামী সন্মেলনে আমি সাধারন সম্পাদক প্রার্থী।
তবে উপজেলা বিএনপির এই নতুন গ্রপিং আগামীতে দলকে নতুন বিপর্যয়ের মুখে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন উপজেলার রাজনৈতিক যোদ্ধারা ।