দুর্জয় আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ঘরের মাঠের ওয়ানডে বিশ্বকাপে রীতিমতো উড়ছিল রোহিত শর্মার ভারত। তবে সদ্য সমাপ্ত টুর্নামেন্টটিতে টানা ১০ ম্যাচে অপরাজিত থাকা সেই উড়ন্ত দলটিকে মাটিতে নামিয়েছে প্যাট কামিন্সের দল। গত ১৯ নভেম্বর আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে ভারতকে ৬ উইকেতে হারিয়ে রেকর্ড ষষ্ঠবারের মতো শিরোপা ঘরে তুলেছে অস্ট্রেলিয়া।
সাম্প্রতিক সময়ে যে ক্রিকেটে ভারতের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে বাংলাদেশ। দুই দলের বাইশগজের লড়াইয়ের বাইরেও সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনার আঁচ পাওয়া যায়। তার প্রমাণও দেখা গেছে বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের হারের ম্যাচে। এদিন সামাজিক মাধ্যমে বাংলাদেশের একদল সমর্থক উচ্ছ্বাস এবং ব্যঙ্গ-বিদ্রুপে মেতে ওঠে। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যানে যা চোখ এড়ায়নি ভারতীয়দেরও।
এই বিষয়টি মোটেও ভালোভাবে নেননি ভারতীয়রা। যার প্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের শৈল শহর দার্জিলিংয়ের একটি হোটেল সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তাদের হোটেলে বাংলাদেশের পর্যটকদের আর তারা থাকতে দেবেন না। ভারতে ঘুরতে যাওয়া বাংলাদেশিদের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনস্থল দার্জিলিং। সেখানকারই হোটেল রয়োপোরাস তক্তসঙ্গ নিজেদের ফেসবুক পেজে জানিয়ে দিয়েছে, অনির্দিষ্টকালের জন্য তারা বাংলাদেশি পর্যটকদের বুকিং নেবে না।
অবশ্য কী কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেটি সরাসরি না জানালেও বিশ্বকাপে ফাইনাল ভারতের হারের পর বাংলাদেশিদের উচ্ছ্বাসের জেরেই যে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা পোস্টটির মন্তব্যের ঘরে গেলেই বোঝা যাচ্ছে।
ফেসবুক পোস্টে তারা লিখেছে, ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য আমাদের হোটেলে বাংলাদেশি পর্যটকদের বুকিং আর নেওয়া হবে না। ধন্যবাদ।’ ইংরেজি এবং বাংলা, দু’টি ভাষাতেই এই বার্তা দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে পোস্টে ভারতীয় পতাকার ইমোজি রয়েছে। পোস্ট করার পর থেকেই অনেক ভারতীয় বিষয়টির প্রশংসা করছেন।
অনেকেই আবার বিষয়টির বিরোধিতা করছেন। কেউ কেউ প্রতিবাদ করে জানিয়েছেন, গুটি কয়েক উগ্র মানসিকতার মানুষদের জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক নয়। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত হোটেল কর্তৃপক্ষ নিজেদের সিদ্ধান্ত বদলায়নি।
এদিকে বিশ্বকাপ ফাইনালের পর ছয়দিন কেটে গেলেও ওই খেলার ফলাফল নিয়ে বাংলাদেশের একাংশের উচ্ছাস প্রকাশ যেমন বন্ধ হয় নি সামাজিক মাধ্যমে, তা নিয়ে আবার উল্টোদিকে ভারতীয় বাঙালীদের একাংশও পাল্টা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। এদের কেউ কেউ আবার সামাজিক মাধ্যমে ‘বয়কট বাংলাদেশ’ ডাক দিচ্ছেন। দুই তরফেই সামাজিক মাধ্যমে নানা পোস্ট-পাল্টা পোস্ট করা অব্যাহত রয়েছে।
ভারতীয় বাঙালীদের একাংশের সামাজিক মাধ্যমে বাংলাদেশকে নানা ক্ষেত্রে বয়কট করার ডাক দেওয়া হচ্ছে। কেউ বাংলাদেশিদের ভিসা না দেওয়ার কথা বলছেন, কেউ বলছেন কলকাতা বই মেলায় বাংলাদেশী প্রকাশকদের যেন স্টল দিতে না দেওয়া হয়। কয়েকজনের পোস্টে চোখে পড়ছে বাংলাদেশী সংস্থার যেসব পণ্য ভারতে পাওয়া যায়, সেগুলো বন্ধ করা হোক।
পারমিতা প্রামাণিক নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, একটা সময় খুব ইচ্ছা হতো বাংলাদেশ যাবো, দেখবো সোনার বাংলা কিন্তু যারা নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গা করে তাদের মাঝে কোনো দিন যেতে চাই না।
চলচ্চিত্র পরিচালক সৃজিত মুখার্জী তার এক্সে (সাবেক টুইটার) আরেকজনের পোস্ট করা একটি ভিডিও রিপোস্ট করেছেন, যেখানে বিশ্বকাপ ফাইনালের পরে বাংলাদেশিদের উচ্ছসিত হতে দেখা যাচ্ছে। ওই ভিডিওর ওপরে মি. মুখার্জীর ছোট্ট মন্তব্য- ‘হ্যালো ইন্দিরা গান্ধী, হাই জগমোহন ডালমিয়া’।
ধারণা করা হচ্ছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ইন্দিরা গান্ধীর ভূমিকা আর বাংলাদেশের ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রবেশের পিছনে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের (বিসিসিআই) প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়ার ভূমিকার কথাই মনে করিয়ে দিয়েছেন মি. মুখার্জী।