খোলা জানালা ডেস্ক।। ঠিক এমনই এক ঈদে ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছিলো। যখন বিচার বিভাগ সাদ্দাম হোসেনের ফাঁসির রায় দিলেন, তিনি শুধু আল্লাহ নামে তাকবির দিয়েছিলেন। তিনি কখনো কাফেরদের কাছে মাথা নত করেন নাই। যে জীবাণু অস্ত্রের দোহায় দিয়ে রাষ্টধর দেশগুলো সাদ্দামের বিরোধিতা করেছিলো আজ কোথায় তারা । চীনের প্রধানমন্ত্রী এখন কাঠগড়ার দ্বারপা্ন্তে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি ভয়াভয় করোনা ভাইরাস এর জনকই হচ্ছে চীন। বিশ্বের মাথামোটা দেশগুলোর যৌথ অভিযানে সাদ্দামের পতন ও ফাঁসি হলেও করোনা জীবানুর কাছে তারায় আজ বেশি ধরাশয়ী। তবে শেষ পর্যন্ত মহানায়ক সাদ্দাম ছিলো অনড়। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে সাদ্দাম হোসেনের কাছে শেষ ইচ্ছার কথা জানতে চাইলে তিনি তার ব্লেজার পরার ইচ্ছে পোষণ করেন। রক্ষীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, প্রচণ্ড ঠান্ডায় শরীরটা কাঁপছে। এ অবস্থায় আমার প্রিয় ইরাকবাসী আমাকে দেখলে মনে করবে- আমি ফাঁসির ভয়ে কাঁপছি। এ কথা বলে তিনি হেসেছিলেন।যদিও পরে প্রমাণ হয়েছে সাদ্দামের বিরুদ্ধে জীবানু অস্ত্র তৈরি ও মজুদের অভিযোগ ষড়যন্ত্র ছিল। কিন্তু সেসময় সাদ্দাম আর নেই। আজ বিশ্বে সাদ্দাম হোসেনের সেই মনগড়া জীবাণু অস্ত্র নেই। কিন্ত করোনা জীবানু এসে ছোবল দিয়েছে । কেড়ে নিয়েছে গোটা বিশ্ববাসীর ঘুম। সবাই আজ যুদ্ধ ঘোষণা করেছে করোনার বিরুদ্ধে। এখন সেই বুশ নেই কিন্তু ডোনাল্ট ট্রাম্প আছে। এখন তার ভাষ্য, মার্কিন জনগন আজ বড় অসহায়।
উল্লেখ্য, সাদ্দাম হোসেন ছিলেন ইরাকের সাবেক রাষ্ট্রপতি। তিনি ১৬ জুলাই ১৯৭৯ থেকে ৯ এপ্রিল ২০০৩ সাল পর্যন্ত ইরাকের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। প্রথমে সাদ্দাম হোসেন জেনারেল আহমেদ হাসান আল বকরের উপ-রাষ্ট্রপতি ছিলেন। সেই সময় সাদ্দাম দৃঃঢ় ভাবে সরকার ও সামরিক বাহিনীর মধ্যকার বিরোধের অবসান ঘটান। এই উদ্দেশ্যে তিনি নিরাপত্তা বাহিনী গঠন করেন। ইরাকের রাষ্ট্রপতি ও বাথ পার্টির প্রধান হিসেবে সাদ্দাম হোসেন আরব জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে ধর্ম নিরপেক্ষ ও আধুনিক ইরাক গড়ে তুলতে প্রয়াস নেন। সাদ্দাম এক দলীয় শাসন কায়েম করেন। এসময়ই সাদ্দাম ইরানের সাথে ৯ বছরের যুদ্ধে জড়িয়ে পরেন (১৯৮০-১৯৮৮)। ইরাক-ইরান যুদ্ধের পরে ১৯৯১-এ সাদ্দাম উপসাগরীয় যুদ্ধে জড়িয়ে পরেন। সাদ্দাম তার মতে ইরাকের স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধের সকল পক্ষকে নির্মুল করার উদ্যোগ নেন। এই বিরুদ্ধ পক্ষে ছিল উপজাতীয় ও ধর্মীয় গোত্র গুলো যারা স্বাধীনতা দাবি করছিল। যেমন, ইরাকি শিয়া মুসলমান, কুর্দি, ইরাকি তুর্কি জনগন। ২০০৩ সালে যুক্তরাজ্যের নেতৃত্বে কতিপয় আন্তর্জাতিক রাষ্ট্র ইরাক আক্রমণ করে। তারা এই যুক্তি দেখিয়ে আক্রমণ করে যে, সাদ্দাম ব্যাপক ধ্বংসাত্বক জীবাণু অস্ত্র তৈরি করছেন (যদিও যুদ্ধ পরবর্তি সময়ে এমন কোন অস্ত্রের হদিস পাওয়া যায় নাই)। ১৩ ডিসেম্বর ২০০৩ সালে সাদ্দাম হোসেন আমেরিকান সেনাদের কাছে ধরা পড়েন। পরবর্তিতে আমেরিকা ইরাকি সরকারের হাতে সাদ্দাম হোসেনের বিচার করে। সাদ্দামের বিরুদ্ধে ছিল মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। ২০০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর ইরাকি সময় সকাল ৬.০৬ মিনিটে ইরাকে সাদ্দাম হোসেনের ফাঁসি কার্যকর হয়। সেদিন ছিল ঈদের দিন।