1. admin@channeldurjoy.com : admin : Salahuddin Sagor
  2. news.channeldurjoy@gmail.com : Editor :
“অ্যাসাইনমেন্ট” শিক্ষার্থীদের কতটা আকৃষ্ট করছে ? কতটা উপকৃত হচ্ছে তারা ? - চ্যানেল দুর্জয়
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৩৬ পূর্বাহ্ন

“অ্যাসাইনমেন্ট” শিক্ষার্থীদের কতটা আকৃষ্ট করছে ? কতটা উপকৃত হচ্ছে তারা ?

  • প্রকাশিত : শনিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২০

সম্পাদকীয় : শিক্ষার্থীরা বিষয়টিকে ভালোভাবে নিয়েছে কারণ এতদিন তারা এক রকম বসেই ছিল। সংসদ টিভির ক্লাস তাদের সবার কাছে পৌঁছাতে পারেনি। এ অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিলে বসানো গেছে, বইয়ের সংস্পর্শে তারা আসতে পেরেছে, অভ্যাসটি কিছুটা হলেও বদলাতে শুরু করেছে।

শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করে সরকার প্রথাগতভাবে বার্ষিক পরীক্ষা না নিয়ে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে তিনটি করে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে বলেছে। তবে অ্যাসইনমেন্টের মাধ্যমে তাদের অর্জিত শিখনফল মূল্যায়ন করা হবে। পুনর্বিন্যাসকৃত পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে কোন সপ্তাহে শিক্ষার্থীর কী মূল্যায়ন করা হবে সেটি বিবেচনায় নিয়ে নির্ধারিত কাজ প্রণয়ন করা হয়েছে। সপ্তাহের শুরুতে ওই সপ্তাহের জন্য নির্ধারিত অ্যাসাইনমেন্টগুলো দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সপ্তাহ শেষে শিক্ষার্থীরা তাদের অ্যাসইনমেন্ট শেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জমা দিয়ে নতুন কাজ বুঝে নিচ্ছে অভিভাবকদের মাধ্যমে কিংবা অনলাইনেও জমা দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত বিষয়গুলোর প্রস্তাবিত অ্যাসাইনমেন্ট জমা নেওয়া, মূল্যায়ন করা, পরীক্ষকের মন্তব্যসহ শিক্ষার্থীদের তা দেখানো এবং প্রতিষ্ঠানে সেটি সংরক্ষণ করার কাজ আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। এ ছাড়া ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির প্রতিটি শিক্ষার্থীকে এ অ্যাসাইনমেন্ট গ্রহণ, লেখা ও জমা দেওয়ার কাজটিতে অংশগ্রহণ করতে হবে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সব মূল্যায়ন রেকর্ড যথাযথভাবে সংরক্ষণ করার কথা বলা হয়েছে। অ্যাসাইনমেন্টের আওতায় ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন, সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন, সৃজনশীল প্রশ্ন, প্রতিবেদন প্রণয়ন ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। শিক্ষার্থীদের এটি সাদা কাগজে নিজের হাতে লিখে জমা দিতে হচ্ছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কিশোর বাতায়নের মতো কিছু পস্নাটফর্মে ডিজিটাল ক্লাসগুলোকে এমনভাবে আপলোড করা হয়েছে যাতে শিক্ষার্থীরা দেশের যে কোনো জায়গা থেকে ক্লাসগুলো দেখতে পায়। কিন্তু অনেকে এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত রয়ে গেছে। এ কারণে তাদের পাঠ্যসূচি পুনর্বিন্যাস ও অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অর্জিত শিখন ফলের দুর্বলতা চিহ্নিত করে পরে শ্রেণিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

তবে অ্যাসাইনমেন্ট বিষয়টিতে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। সব শিক্ষার্থী বা তাদের অভিভাবকদের ডেকে সহজেই অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। এমনকি মফস্বলের সব শিক্ষার্থীর অভিভাবকের ফোন নম্বর শিক্ষকদের সংরক্ষণে নেই। আবার অনেক নম্বরই বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। স্কুল বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থী কাজে যোগ দিয়েছে বলে অনেককে পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু কিছু বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছে যা আইনবিরোধী। পরে শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হবে না অর্থ না দিলে এমন খবরও প্রমাণসহ পত্রিকার পাতায় ছাপা হয়েছে। কোথাও কোথাও শিক্ষার্থীরা মিছিল করেছে তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের প্রতিবাদে। আবার কোনো কোনো দোকানে টাকার বিনিময়ে অ্যাসাইনমেন্ট পাওয়া যাচ্ছে। শত শত শিক্ষার্থী ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের মতো অর্থের বিনিময়ে অ্যাসাইনমেন্ট নেওয়ার জন্য ভিড় করছে ওই সব দোকানে। আবার কোথাও কোথাও বকেয়া বেতন নেওয়ার পরিবর্তে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। ‘অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে চলছে টাকার খেলা, বিপাকে শিক্ষার্থী অভিভাবক’ শিরোনামে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে অনেক পত্রিকায়। তার পরেই মাইসির আঞ্চলিক কার্যালয়গুলো থেকে নির্দেশনা জারি করা হয়, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অ্যাসাইনমেন্ট চলাকালে পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত কোনো অর্থ বা ফি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা যাবে না। করোনার কারণে এবার বার্ষিক পরীক্ষা না নিয়েই মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শ্রেণিতে উঠানো হবে। তাই শিক্ষার্থীদের ঘাটতি পূরণের জন্য ৩০ কর্মদিবসে শেষ করা যায় এমন একটি সিলেবাস প্রণয়ন করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। সিলেবাসের আলোকে শিক্ষার্থীদের প্রতি সপ্তাহে তিনটি করে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হচ্ছে, যেগুলোর উত্তর শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তক অনুসরণ করে লিখতে হবে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে যদি এমন ব্যবসা শুরু হয়ে যায় সেটি দুর্ভাগ্যজনক।

কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অ্যাসাইনমেন্ট নামক শিক্ষার্থীদের কাজ এবং সেটির ওপর মূল্যায়নের বিষয়টি চালু আছে। তা ছাড়া শিক্ষক প্রশিক্ষণ, ডিপিএড, বিএড, বিপিএড, এমএড ইত্যাদিতে অ্যাসাইনমেন্টের কিছুটা প্রয়োগ আছে। মাধ্যমিকের ইংরেজি মিডিয়াম কিংবা নামিদামি কিছু প্রতিষ্ঠানের দু’চারজন শিক্ষক এটি করে থাকেন। তবে ব্যাপকহারে এর প্রচলন নেই মাধ্যমিক পর্যায়ে। বলা যায়, মাধ্যমিক পর্যায়ে অ্যাসাইনমেন্ট চালু শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি নতুন সংযোজন। করোনা পরিস্থিতির কারণে বন্ধ থাকা শিক্ষা কার্যক্রমে কিছুটা গতি নিয়ে আসা ও বিকল্প উপায়ে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক টাচে রাখার এ প্রয়াসের বহুবিধ উপকারিতা রয়েছে।

শিক্ষার্থীরা বিষয়টিকে ভালোভাবে নিয়েছে কারণ এতদিন তারা এক রকম বসেই ছিল। সংসদ টিভির ক্লাস তাদের সবার কাছে পৌঁছাতে পারেনি। এ অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিলে বসানো গেছে, বইয়ের সংস্পর্শে তারা আসতে পেরেছে, অভ্যাসটি কিছুটা হলেও বদলাতে শুরু করেছে।

\হঅ্যাসাইনমেন্ট যদি সেভাবে গুরুত্বসহকারে শিক্ষার্থীদের দ্বারা করানো হয় তাহলে সেটি তাদের লেখার দক্ষতা বাড়াবে, সৃজনশীলতা প্রকাশ করবে, চিন্তার ও কল্পনার দিগন্ত প্রসারিত করবে। কোনো বিষয়ের গভীরে ঢুকতে পারার সুযোগও এটি। একটি বিষয়কে ভালোভাবে নিজের মতো করে জানার সুযোগ কিন্তু এ অ্যাসাইনমেন্ট। কিন্তু বিষয়টি যেনতেন প্রকারে হলে তা হবে আমাদের প্রাকটিকাল খাতা যেমন যুগের পর যুগ একজনের খাতা দেখে অন্যরা প্রাকটিকালের বিবরণ লিখতো- সেরকম। আমাদের মাধ্যমিকে যেহেতু অ্যাসাইনমেন্ট কালচার নেই, তাই শিক্ষকদের একটু সমস্যা হবে এবং হচ্ছেও। এ অ্যাসানইনমেন্ট দেখতে, কমেন্ট করতে এবং সৃজনশীল লেখা লিখতে বলতে। তবে এতে কিন্তু তারাও উপকৃত হচ্ছেন, তাদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি পাচ্ছে যদি তারা সেভাবে শিক্ষার্থীদের কাজগুলো দেখেন এবং মূল্যায়ন করার চেষ্টা করেন। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অটোপাসের যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল তার চেয়ে এ অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়াটা ঢের ভালো হয়েছে। তবে এর বাণিজ্যিক দিক, অপপ্রচার এবং শিক্ষকদের যথাযথ সম্পৃক্ততা এবং শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা গেলে এটি অনেকটাই বেসিক শিক্ষার পর্যায়ে পড়বে।

আমরা যে পরীক্ষা পরিচালনা করি তাতে একজন শিক্ষার্থীও পাস-ফেল এবং গ্রেড জানা যায়; কিন্তু সঠিকভাবে জানা যায় না ওই শিক্ষার্থী আসলে কি শিখেছে, কোন বিষয় কতটুকু শিখেছে। এ নিয়ে বহু কথাবার্তা, আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে কিন্তু বিকল্প কিংবা সমাধান কিন্তু আমরা বের করতে পারিনি। এ পরীক্ষা এক ধরনের মাপকাঠি কিন্তু এ দিয়ে আমরা যে পরিমাপ করছি তা নিয়ে রয়েছে অনেক প্রশ্ন, অনেক কথা। কিন্তু করোনার কারণে শিক্ষায় শিক্ষার্থীরা যে পরিমাণ পিছিয়ে গেছে তা অনেকটাই রোধ করা যেত যদি এ অ্যাসাইনমেন্ট প্রথমদিকেই শুরু করা হতো। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংসদ টিভিতে ক্লাস পরিচালনা করে ভেবেছিল, সবাই বোধ হয় এ ক্লাসের আওতায় আসবে। কিন্তু সেটি যাচাই করার, মনিটরিং করার কোনো উপায় বা পদ্ধতি সেভাবে ছিল না এবং নেই। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় দুটি কাজ করলে হয়তো বিষয়টি অনেকটা কাজে লাগত। এক, বিদ্যালয়কে দায়িত্ব দেওয়া, কজন শিক্ষার্থী ‘সংসদ টিভির’ ক্লাস দেখছে। স্কুল হয়তো ক্লাসটিচার পর্যন্ত কাজটি ভাগ করে দিত, তাহলে একটি হিসাব অন্তত পাওয়া যেত, কজন টিভির এ ক্লাস দেখতে পারছে এবং সত্যিকার অর্থে কজনের কাজে লাগছে। দ্বিতীয়ত, কিছু বেসরকারি সংস্থাকে কাজটি ভাগ করে দিলেও তারা যত্নসহকারে বিষয়টি দেখতে পারত। শুধু ক্লাস ভিডিও করে আকাশে ছেড়ে দিলে কজন দেখবে, কজন দেখবে না সেই হিসাব আমাদের থাকা উচিত। আর সংসদ টিভি যেহেতু ডিসলাইন ছাড়া দেখা যায় না, তাই বিটিভির মাধ্যমে কিছুটা কাভারেজ বাড়ানো যেত যদিও বিটিভি সময় দিতে পারেনি। রেডিওর মাধ্যমেও ক্লাস হওয়ার কথা ছিল ক্লাস কিন্তু সেটিও সেভাবে হয়নি। তবে এগুলো চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি যদি অ্যসাইনমেন্টের বিষয়টি যোগ করা যেত তাহলে অনেকটাই উপকৃত হতো শিক্ষার্থীরা। তাদের লার্নিং লস এত বেশি হতো না।

এই বিভাগের আরো সংবাদ

আজকের দিন-তারিখ

  • শুক্রবার (সকাল ১১:৩৬)
  • ২৬শে এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৭ই শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরি
  • ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)

এই মুহুর্তে সরাসরি সংযুক্ত আছেন

Live visitors
126
3273750
Total Visitors