1. admin@channeldurjoy.com : admin : Salahuddin Sagor
  2. news.channeldurjoy@gmail.com : Editor :
৪২ নাগরিকের চিঠি পাঠানো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত : ইসি শাহাদাত - চ্যানেল দুর্জয়
বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০৭:২৩ অপরাহ্ন

৪২ নাগরিকের চিঠি পাঠানো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত : ইসি শাহাদাত

  • প্রকাশিত : সোমবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক : গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে রাষ্ট্রপতির কাছে ৪২ নাগরিকের চিঠি পাঠানোকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। আজ রোববার বিকেলে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। শাহাদাত হোসেন বলেন, এই অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।

নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘যেহেতু বিষয়টা মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপন করেছে, ‘এ বিষয়ে এর বাইরে আমি আর বক্তব্য রাখতে চাই না। শুধু এটুকু বলে শেষ করতে চাই, যে হয়তো বা কোনো উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এগুলোর কোনোটার ভিত্তি আছে বলে আমি মনে করি না। এ রকম একটা বিষয়টা উপস্থাপন করা, আমি মনে করি যে এটা সুধীজনদের জন্য বিবেচনাপ্রসূত নয়।’

শাহাদাত হোসেন বলেন, সবচেয়ে যে বিষয়টা পীড়াদায়ক তা হলো, উনারা আমাদের অভিযুক্তও করে ফেললেন। একসঙ্গে উনারা মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগ উপস্থাপন করলেন, আবার আমাদেরকেও অভিযুক্ত করে ফেললেন। শুধু সেটা নয়, আমাদের করণীয় কী, দণ্ড- সেটাও এক অর্থে দিয়ে দিলেন।

শাহাদাত হোসেন বলেন, এটা আমার ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়া, কমিশনের প্রতিক্রিয়া নয়। বিশিষ্ট নাগরিকদের বিষয়ে কিছু বলতে গেলে কিছু শালীনতা রাখা উচিত বলে মনে করি। এটা থেকে উনারা উনাদের বার্তা নেবেন আশা করি। একই সঙ্গে দেশবাসীও বার্তা নিবেন। আমার বক্তব্যটা শালীন রাখতে চাই, এটাই যথেষ্ট। বিশিষ্টজনদের কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য অত্যন্ত পীড়াদায়ক বলেও জানান তিনি।

গত ১৪ ডিসেম্বর বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন বিষয়ে অসদাচরণ, অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতি তদন্ত করতে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠনের দাবি জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে চিঠি দেন দেশের বিশিষ্ট ৪২ নাগরিক। রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠিটির সাংবিধানিক ও আইনগত নানা দিক গণমাধ্যমে তুলে ধরা হয় গতকাল ভার্চুয়াল সংবাদ সংম্মেলনে। এ সময় দেশের বিশিষ্টজনরা ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংঘটিত অনিয়মসহ তুলে ধরেন বর্তমান নুরুল হুদা কমিশনের নানা অসদাচরণ।

সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, ‘আমরা সবাই মনে করেছি দায়িত্ব গ্রহণ করার পর নির্বাচন কমিশন যেসব কার্যকলাপ করেছে, সেগুলো গুরুতর অসদাচরণ। সাংবিধানিক পদে যারা আছেন তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করার ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের। দুদক বা পুলিশ এটা করতে পারবে না। রাষ্ট্রপতি এ নির্দেশ দিতে পারেন। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপতিকে অভিযোগ জানিয়েছি।’

শাহদীন মালিক বলেন, সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠন করে তদন্ত হওয়া উচিত। আমরা আশা করছি, গুরুতর অসদাচরণের দায়ে তারা দোষী হবেন। সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের সুপারিশ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি তাদের পদ থেকে অপসারণ করবেন।

চিঠিতে সই করা বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত সচিব আকবর আলি খান, অবসরপ্রাপ্ত মহা হিসাব-নিরীক্ষক এম হাফিজউদ্দিন খান, মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী, মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেন, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম, মানবাধিকারকর্মী খুশি কবির, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির উপাচার্য পারভীন হাসান, সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আহমেদ কামাল, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না, শাহদীন মালিক, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অর্থনীতিবিদ আহসান মনসুর, সাবেক সচিব আবদুল লতিফ মন্ডল, স্থপতি মোবাশ্বের হাসান, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, অধ্যাপক সি আর আবরার, আইনজীবী সারা হোসেন, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ, লুবনা মরিয়ম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আকমল হোসেন, সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অধ্যাপক স্বপন আদনান, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফিরদৌস আজিম, সাবেক ব্যাংকার সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, গোলাম মোর্তুজা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, ক্লিনিক্যাল নিউরোসাইন্স সেন্টার, বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের পরিচালক অধ্যাপক নায়লা জামান খান, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন ও মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন।

চিঠিতে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘বিশেষ বক্তা’ হিসেবে বক্তৃতা দেওয়ার নামে দুই কোটি টাকার অনিয়ম, নির্বাচন কমিশনের কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চার কোটি আট লাখ টাকার অসদাচরণ ও অনিয়ম,  নিয়মবহির্ভূতভাবে তিনজন কমিশনারের তিনটি গাড়ি ব্যবহারজনিত আর্থিক অসদাচরণ ও অনিয়ম।

এ ছাড়াও অন্যান্য গুরুতর অভিযোগের মধ্যে রয়েছে- ইভিএম কেনা ও ব্যবহারে গুরুতর অসদাচরণ ও অনিয়ম, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে গুরুতর অসদাচরণ ও অনিয়ম, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে গুরুতর অসদাচরণ ও অনিয়ম, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গুরুতর অসদাচরণ ও অনিয়ম, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গুরুতর অসদাচরণ ও অনিয়ম, সিলেট, বরিশাল ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গুরুতর অসদাচরণ ও অনিয়ম।

নির্বাচন কমিশনারদের অপসারণ করা হবে এমন আশা প্রকাশ করা বাস্তবসম্মত কি না- জানতে চাইলে শাহদীন মালিক বলেন, অতীতেও কিছু খারাপ নির্বাচন হয়েছে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন সম্ভবত সবচেয়ে খারাপ নির্বাচন। এখন যেগুলো হচ্ছে, এগুলোও সেরকম। এ ধরনের নির্বাচন কাম্য নয়।

ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘আমরা মনে করি দেশ গভীর সংকটে রয়েছে। গভীর সংকটে পড়লে জাতি মহামান্য রাষ্ট্রপতির দিকে তাকিয়ে থাকে। তাঁর একটি নৈতিক ক্ষমতা রয়েছে। আমরা নিঃসন্দেহে আশাবাদী। আমরা আশাবাদী রাষ্ট্রপতি এ অভিযোগের ইতিবাচক সাড়া দেবেন। রাষ্ট্রপতি দেশের অভিভাবক হিসেবে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য যেটা ভালো হয় করবেন। সেজন্য আমরা চিঠি দিয়েছি।’

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘যারা কমিশনারগণ এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার, তাঁরা স্বেচ্ছায় দায়িত্ব থেকে অপসারণের একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন নিজেরা। এবং কেউ কেউ হয়তো নৈতিক অবস্থান থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন বলে আমরা মনে করি। এই ধরনের পরিস্থিতিতে সেটি অন্তত আত্মসম্মানবিশিষ্ট-সম্পর্কিত মানুষের কাছে এই ধরনের আচরণই আমরা আশা করব।’

ইফতেখারুজ্জামান আরো বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন যেভাবে আর্থিক অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছে, আগে কখনও দেখা যায়নি। আগের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। নির্বাচন কমিশনের নাম অবমাননা ও কলঙ্কিত করেছে।

নির্বাচন কমিশনের অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কাছেও আবেদন করা হবে জানিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছি। একইসঙ্গে সরকার প্রধানের কাছেও যাব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছেও আবেদন করব।

ভার্চুয়াল এই সংবাদ সম্মেলন অংশ নিয়ে বক্তারা অভিযোগ করেন, বর্তমান কমিশন শুধু জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনকেই তামাশায় পরিণত করেনি, তারা ইভিএম কেনা, নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন খাতে কোটি কোটি টাকার আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘যেদিনই নির্বাচন সেটা যদি আগের রাতে হয়, আর ভোটবাক্স যদি আগেই ভরে রাখা হয়, যেটা আমরা বিবিসির প্রতিবেদনে দেখেছি বা ইফতেখারুজ্জামান ভাইদের (টিআইবি) প্রতিবেদনে দেখেছি, এগুলো বিবেচনায় নিলে তো নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন তোলা যায় এবং আইনগত প্রশ্ন তোলা যায়।  জানি হয়তো আলটিমেটলি কিছু হবে না। কিন্তু তাগিদ দিলাম। সংবিধানে আছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘ইফতেখারুজ্জামানের সাথে একমত, আমাদের নির্বাচন কমিশনারদের স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ানো দরকার, তাদের এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে। একইসাথে আমি বলতে চাই, আমাদের নির্বাচন কমিশন এই বিজয়ের মাসে তারা আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। বঙ্গবন্ধুর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তাদের এখন সরে দাঁড়ানোই ভালো হবে।’

ভোটের ওপর দেশের বেশির ভাগ নাগরিক আস্থাহীন হয়ে পড়েছে দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা আশা করেন, দেশের সর্বোচ্চ অভিভাবক হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেবেন।

এই বিভাগের আরো সংবাদ

আজকের দিন-তারিখ

  • বুধবার (সন্ধ্যা ৭:২৩)
  • ১৫ই মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ৭ই জিলকদ ১৪৪৫ হিজরি
  • ১লা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)

এই মুহুর্তে সরাসরি সংযুক্ত আছেন

Live visitors
263
3724433
Total Visitors