1. admin@channeldurjoy.com : admin : Salahuddin Sagor
  2. news.channeldurjoy@gmail.com : Editor :
পুরুষশূন্য সালথায় নারীদের আর্তনাদ - চ্যানেল দুর্জয়
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০৯:০৮ অপরাহ্ন
সদ্যপ্রাপ্ত :
চৌগাছায় এমপি তুহিনের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প: বিশুদ্ধ পানি-স্যালাইন ও ছাতা বিতরণ চৌগাছায় দুর্বৃত্তের আগুনে পুড়ল কৃষকের ১ বিঘা জমির পানের বরজ চৌগাছায় শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক হলেন আজম আশরাফুল সাবেক এমপি বদির বিরুদ্ধে উপজেলা চেয়ারম্যানের উঠান বৈঠকে গুলি ছোড়ার অভিযোগ উপজেলা ভোট: নেতাকর্মীদের বহিষ্কারে বিএনপি কি আরও দুর্বল হবে? গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনা: লাইনচ্যুত ৫ বগি, আহত অর্ধশতাধিক বৃষ্টির দেখা না মিললেও কুয়াশায় আচ্ছন্ন পাবনার জনপদ বিএনপি এখন নিজেরাই বিভক্ত: কাদের রাজধানীসহ চার বিভাগে বৃষ্টির সম্ভাবনা, কমে আসবে তাপপ্রবাহ ১০ টাকায় চোখ পরীক্ষা করালেন প্রধানমন্ত্রী

পুরুষশূন্য সালথায় নারীদের আর্তনাদ

  • প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২১

ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুরের সালথায় লকডাউনকে কেন্দ্র করে তাণ্ডবের পর থেকে বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ, র‍্যাব ও ডিবির অভিযান অব্যাহত থাকায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে উপজেলা সদরসহ ৮ট ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি গ্রাম পুরুষশূন্য। গ্রেপ্তারের ভয়ে এখন পুরুষেরা রাতের বেলায় বাড়িতে থাকতে পারছেন না। দিনের বেলায় হাতেগোনা কয়েকজন পুরুষকে দেখা গেলেও রাতে সে সংখ্যা নেমে আসে শূন্যের কোঠায়। এদিকে হাটবাজারের দোকানপাট বন্ধ। তবে কিছু দোকান খোলা থাকলেও সেখানে নারী-শিশু ছাড়া পুরুষের দেখা মিলছে না।

সরেজমিনে এসব গ্রামগুলো ঘুরে নারী-শিশু ছাড়া কাউকে দেখা যায়নি। তবে কোনো কোনো গ্রামে বয়স্ক ও বৃদ্ধদের দেখা গেলেও তা সামান্য। বেশকিছু গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, পুরুষ না থাকায় কৃষি ক্ষেত পরিচর্যার কাজ করছেন নারীরা।

জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা পাট ও পেঁয়াজের ওপর নির্ভরশীল। এটি পাটের মৌসুম। পাটের মধ্যে অনেক ঘাস হয়ে গেছে। এগুলো পরিষ্কার করতে হবে, নাহলে পাট বড় হবে না। এরপর ক্ষেতে পানি, সার ও ঔষধ দিতে হবে। আমাদের পুরুষরা বাড়িতে থাকতে পারছে না। পুলিশ ঘোরাঘুরি করছে। বাধ্য হয়ে এই কাজ আমাদের করতে হচ্ছে। তা নাহলেতো এই ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। আমরা কি খেয়ে বাঁচবো?

পাট-পেঁয়াজের রাজধানী খ্যাত সালথা উপজেলায় এ বছর পাটচাষিরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক নারী বলেন, বাবা, আমার দুটি ছেলে ঢাকা থাকে। স্বামী অসুস্থ, আমরা সেদিনের ঘটনার কিছুই জানি না। তবুও তাকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। কারণ, শুনেছি যাকে ধরছে সেই আসামি হয়েছে। সেই ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমাদের মসজিদে আজ ৫ দিন ধরে কোনো আজান হয় না। মসজিদের দিকে তাকালে চোখের পানি চলে আসে। কাল রোজা, ঘরে বাজার নেই। এখন আল্লাহই আমাদের ভরসা।

তিনি আরও বলেন, আমাদের ক্ষেত এখানে সার, পানি, ঔষধ, নিড়ানি দিতে হবে। তাই সরকারের কাছে আমার চাওয়া, যারা অপরাধী তাদের বিচার করুক। আর যারা নিরীহ তাদেরকে সুযোগ দেয়া হোক যেন আমরা কাজকর্ম করে খেয়ে বেঁচে থাকতে পারি।

আরেক নারী বলেন, আমার স্বামী পঙ্গু। সবসময় তার শরীর কাঁপে। তাকে ধরলেই তার জীবন চলে যাবে। তাই সে ভয়ে কোথায় চলে গেছে কোনো খোঁজ নেই। যাওয়ার সময় বলে গেছে আমাকে এই মুহূর্তে একটি বারি দিলে আমি বাঁচব না।

তিনি আরো বলেন, তার কিডনি সমস্যা আছে। শুনেছি তাকেও আসামি দেয়া হয়েছে। অথচ সে এসবের কিছুই জানে না। বাসায় চাল নে,ই খেয়ে বাঁচার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই ক্ষেতে কাজ করতে হচ্ছে। আমরা এখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাই। আমরা বাঁচতে চাই।

অপর আরেক নারী বলেন, যারা অপরাধ করেছে, তাদের বিচার আমরা চাই। এত বড় ক্ষতি তারা করেছে, এগুলাতো আমাদেরই সম্পদ, আমার এলাকা, আমাদের উপজেলা ক্ষতি করেছি আমরাই। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার অনুরোধ, সরকারের কাছে অনেক যন্ত্র আছে, সেগুলো ব্যবহার করে যারা প্রকৃত দোষী তাদের বের করে কঠিন শাস্তি দিক।

‘কিন্তু আমরা যে নিরীহ মানুষ, আমাদের মসজিদে আজান হচ্ছে না, রাত পোহালেই রোজা কিছুই কিনতে পারিনি, কি খেয়ে রোজা থাকব?’

তিনি আরও বলেন, একদিকে আমাদের ধান মাইরা গেছে, আবার পাটও মাইরা যাচ্ছে, আমরা কিভাবে চলব? আমার স্বামী নসিমন চালায়, কোথায় গেছে কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। আমরা ভাতে মরছি। আল্লাহর কাছে মাফ চাইলেও মাফ পাওয়া যায়। আমরা অপরাধ না করেও প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাই, কারণ আমাদের প্রধানমন্ত্রী অনেক সহায়তা করছে। বিধবা, বয়স্ক ভাতা থেকে শুরু করে ঘর দেওয়া, সব ধরনের সুবিধা সে আমাদের দিচ্ছে। তবুও আমরা আমাদের সম্পদ নষ্ট করেছি। সেজন্য সবাই এখন দোষী। তাই আমার দাবি, নিরীহ মানুষদের নিরাপদে থাকারাসুযোগ করে দিয়ে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিক।

আরেক নারী বলেন, আমাদের উপজেলায় যারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে, তারা দূরে চলে গেছে। কিন্তু এজন্য নিরীহ মানুষগুলোকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। কারণ যাকে ধরছে সেই আসামি। তাই এখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার অনুরোধ, আমরা গ্রামের মানুষ, আমরা এসবের ভেতর যাইনি, আমরা তার কাছে ক্ষমা চাই।

তিনি বলেন, রাত পোহালেই রোজা, কিন্তু একটি মসজিদে আজান নেই। আর মসজিদে আজান দিয়ে মানুষকে না ডাকলে আমরা কিভাবে রোজা থাকব?

আরেকজন নারী বলেন, আমরা গরিব মানুষ। অভাবের সংসার কিস্তি চালাতে হয়। পুরুষ মানুষ বাড়িতে নেই। কিস্তি নেয়ার জন্য লোকেরা বাড়িতে এসে বসে থাকে খারাপ ব্যবহার করে।

সোনাপুর বাজারের এক মুদিখানার দোকানদার বলেন, গত ৬ তারিখ থেকে দোকান করতে পারছি না। রাতের বেলা ঘুমাতে গেলে ভয় লাগে, কখন এসে ধরে নিয়ে যায়।

এছাড়া বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, এখানকার মানুষরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছে। বেশিভাগ যুবকেরা গ্রেপ্তারের ভয়ে বাড়িতে নেই। আতঙ্কে অনেক দোকানপাটও বন্ধ আছে।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল পাশা বলেন, সালথার সহিংসতার ঘটনার পর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মামলার আসামিদের ধরতে পুলিশ দিনরাত অভিযান চালাচ্ছে। তবে নিরীহ কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।

তিনি বলেন, আমরা চাই না কোনো নিরীহ লোক হয়রানির শিকার হোক। আমরা ঘটনার দিনের সংগৃহীত বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ ও বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে গ্রেপ্তার করছি। তবে নিরীহ কাউকে যদি আটক করা হয়ই, তবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। আতঙ্কের কিছু নেই।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি (৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় করোনা মোকাবিলায় বিধিনিষেধ কার্যকর করতে লোকজনকে পেটানো হয়েছে- এমন গুজব ছড়িয়ে সালথা থানা ও উপজেলা কমপ্লেক্সে ঘেরাও করে তাণ্ডব চালায় স্থানীয়রা। ওই তাণ্ডবের ঘটনায় ৫টি মামলা হয়েছে। এতে ২৬১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত প্রায় চার হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরো সংবাদ

আজকের দিন-তারিখ

  • মঙ্গলবার (রাত ৯:০৮)
  • ৭ই মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ২৮শে শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরি
  • ২৪শে বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)

এই মুহুর্তে সরাসরি সংযুক্ত আছেন

Live visitors
210
3496855
Total Visitors