উপ-সম্পাদকীয় : ৮ ডিসেম্বর, ১৯৭১, ভোর ছ,টা। যশোরের উদ্দেশ্যে মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ কিছুবিদেশি সাংবাদিক নিয়ে রওয়ানা দিলেন।
বেলা আটটা নাগাদ বাংলাদেশ সীমান্তে এসে হাজির হলেন। ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর কয়েকজন
উচ্চপদস্থ অফিসার ছাড়াও বেসামরিক প্রশাসক কামাল সিদ্দিকী (বীর বিক্রম) তাদেরকে স্বাধীন
বাংলাদেশের মাটিতে অর্ভ্যথনা জানালেন।
সার্কিট হাউসে তাদেরকে বিশ্রামের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তুপ্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ
র্সাকিট হাউসে না গিয়ে সরাসরি জেলখানায় হাজির হয়ে জেলের দরজা খুলে দেয়ার র্নিদেশ দিলেন।
একজন ডেপুটি জেলারকে সঙ্গে নিয়ে তাজউদ্দিন আহমেদ হুড়মুড় করে জেলের মধ্যে ঢুকলেন। চি কার
করে বললেন মশিউর সাহেব কোন সেলে..? ডেপুটি জেলার অনক কষ্টে খবরটা দিলেন, ওনাকে তো অনেক আগেই হত্যা করা হয়েছে। শুনেছি খুব কষ্টে ওনাকে মারা হয়েছে। বাষ্পরুদ্ধ কন্ঠে তাজউদ্দিন আহমেদ বললেন, ওনি যে সেলটাই ছিলেন সেই সেলটা আমি দেখতে চাই। একটুপরে সেই সেলের সামনে গিয়ে হাজির হলেন। হটাৎ কান্নার আওয়াজে সবাই চমকে উঠলেন। সুর্দীঘ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের পরিচালনার সময় যে ব্যক্তিকে সব সময় মনে হয়েছে
আল্লাহ বোধহয় ওনার হৃদয়টাকে পাথর দিয়ে বানিয়েছেন। একাত্তর ৮ ডিসেম্বর সেই মানুষটি যশোর
জেলখানায় অঝোরে কেঁদেছিলেন।
হ্যাঁ, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম নায়ক, দক্ষিণ- পশ্চিমাঞ্চলের বিপ্লবী নেতা, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠজন ও মন্ত্রী শহীদ মশিয়ূর রহমানের কথায় বলছি। তিনি ছিলেন শিক্ষিত ও সজ্জন। অমায়িক ব্যবহারের জন্য তিনি বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের চোখেও ছিলেন শ্রদ্ধাভাজন। এই নেতার স্মরণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২, ২৬শে ডিসেম্বর যশোর পৌর র্পাকে স্মৃতিফলক উন্মোচন করেন।
১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুশেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ” বাংলাদেশের জনগণের জীবন-মরণ সংগ্রামের
পুরোভাগে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে মশিয়ূর রহমান ছিলেন অগ্রসৈনিক। তার গৌরবোজ্জ্বল আত্মত্যাগ
বাংলাদেশের জনগণের জন্য যুগ যুগ ধরে এক উজ্জ্বল আর্দশ হয়ে থাকবে।” তরুণ প্রজন্মের কাছে
মুক্তিযুদ্ধের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস, জাতির র্সূয সন্তানদের দেশের জন্য গৌরবোজ্জ্বল
আত্মত্যাগগুলি তুলে ধরতে হবে।
শহীদ মশিয়ূর রহমানরা বারবার জন্মায় না। শহীদ মশিয়ূর রহমান সারা জীবন যে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন তা ইতিহাসের র্স্বণঅক্ষরে চিরকাল লেখা থাকবে ।
তথ্যসূত্রঃ আমি বিজয় দেখেছি – এম আর আখতার মুকুল।
লেখকঃ
মোঃ মামুন হাসান বিদ্যুৎ
এমবিএ (অধ্যায়নরত)
ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।