এম এইচ নয়ন।।করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে কঠোর বিধিনিষেধের তৃতীয় দিনেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থান অব্যাহত ছিল। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার বাহিনীর সদস্যসহ ভ্রাম্যমাণ আদালতকে বেশ সক্রিয় দেখা গেছে।
এর মধ্যেও সড়ক, মহাসড়ক ও অগিগলিতে মানুষ ও যানবাহন চলাচল আগের দুই দিনের তুলনায় বেড়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন মহল্লার অলিগলিতে ছোটো দোকানপাট খোলা থাকায় সব বয়সি মানষের জটলা চোখে পড়েছে। এ ব্যাপারে পাড়া-মহল্লায়ও কঠোর অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে র্যাব।
জরুরি প্রয়োজনের অজুহাতে বিভিন্ন যানবাহন ও মানুষ ঘরের বাইরে বের হয়েছে বলে দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে দাবি করেছেন। যদিও এসব অজুহাত যৌক্তিক না হওয়ায় তাদের অনেককেই গ্রেফতার, আটক, মামলা ও জরিমানা দেওয়া হয়েছে।
র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গতকাল সারা দেশে ১৭২টি টহল ও ১৮১টি চেকপোস্ট পরিচালনা করেছে। এ সময় ৩১টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ২৭৭ জনকে ১ লাখ ৯৮ হাজার ১৭৫ টাকা জরিমানা করা হয়।
আর ঢাকা মহানগর পুলিশ সড়ক পরিবহণ আইন অনুযায়ী বিধিনিষেধ ভেঙে চলাচল করায় ১৯ লাখ ২২ হাজার ৫৫০ টাকা জরিমানা ও ৬২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া সারা দেশ থেকে যুগান্তরের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য মতে, আইন ভঙের অভিযোগে গতকাল ঢাকার বাইরে ৫৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং ৩ লাখ ১৭ হাজার ৪৫০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আর সৈয়দপুরে ১৪ জনকে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
রাজধানীতে সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর বছিলা ব্রিজের প্রবেশ গেটে শনিবার সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। কেরানীগঞ্জের ওয়াশপুর, ঘাটারচর, আরশিনগর, মধুসিটি, আটিবাজার ও কলাতিয়া এলাকার কোনো মানুষ দেদার ঢাকায় ঢুকলেও তেমন কোনো বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে না।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ইচ্ছে হলে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে, নইলে করছেন না। একই চিত্র দেখা গেছে, রাজধানীর বনশ্রী এলাকায়। ওই এলাকার প্রধান ও অলিগলি সড়কে মানুষের জটলা ছিল। সড়কে বসে অনেক মানুষকে আড্ডা দিতে দেখা গেছে। আশপাশের পুলিশের টহল থাকলেও কাউকে বাধা দিতে দেখা যায়নি।
দিনভর এমন চিত্র দেখা গেছে মিরপুর, বছিলা, হাজারীবাগ, মিরপুর, কুড়িল, বসুন্ধরা, বাড্ডা, ভাটারা, খিলগাঁও, পুরান ঢাকাসহ মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায়। তবে ভিন্ন চিত্রও ছিল সব এলাকায়। ঠুনকে অজুহাতে যারা সড়কে নেমেছেন তারা পুলিশের কঠোরতা, গ্রেফতার, মামলা ও জরিমানার মুখোমুখি হয়েছেন অনেক মানুষ। কাউকে দাঁড় করিয়ে রেখে শাস্তি দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। কাউকে শুধু অর্থদণ্ড দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বনশ্রীর বাসিন্দা মো. ইমন হোসেন চ্যানেল দূর্জয়কে বলেন, বেলা সাড়ে ১১টায় আমার মেরাদিয়ার বাসা থেকে বের হয়ে বাংলামোটর গিয়েছিলাম। আমার মোটরবাইকে জরুরি সেবার বিষয় উল্লেখ থাকায় কোথাও পুলিশ কিছু বলেনি। আসা-যাওয়ার পথে বনশ্রীর বিভিন্ন সড়ক, রামপুরা, হাতিরঝিল, মগবাবাজার, ইস্কাটন, বাংলামোটর এলাকায় মানুষের জটলা লক্ষ্য করেছি।
তিনি বলেন, দেদারছে এসব মানুষ চলাচল করলেও পুলিশকে তেমন কিছু বলতে দেখিনি। বনশ্রী এলাকার সড়কে যুবক ও নিুআয়ের মানুষের আড্ডা দিতে দেখা গেছে। আশপাশে পুলিশের গাড়ি চলাচল করলেও এসব মানুষকে কিছু বলতেও দেখা যায়নি।
মালিবাগের বাসিন্দা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো. সোহেল মামুন যুগান্তরকে বলেন, সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ ভালোভাবে পালিত হচ্ছে। তবে গত দুদিনের চেয়ে শনিবার বাইরে মানুষের উপস্থিতি কিছুটা বেড়েছে বলে মনে হয়েছে। করোনার উর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে সপ্তাহব্যাপী এ কর্মসূচি আরও কঠোরভাবে পালন করা উচিত।
ডেমরা বাসিন্দা ও গণমাধ্যম কর্মী জাহাঙ্গীর খান বাবু যুগান্তরকে বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকার ঘোষিত কর্মসূচি কঠোরভাবে পালন করছে সরকার। এর সফলতা পাওয়া যাবে বলে বিশ্বাস করি। তবে অন্যান্য বিধিনিষেধ কর্মসূচির মতো যেন নামকাওয়াস্ত কর্মসূচিতে পরিণত না হয়, এবারের কর্মসূচি। কেননা, প্রথম দুদিনের চেয়ে তৃতীয় দিন বাইরে মানুষের চলাচল অনেকাংশে বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
শনিবার রাজধানীর প্রবেশ ও বহির্গমন পথ গাবতলী-আমিনবাজার, আব্দুল্লাহপুর-টঙ্গী, সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী এলাকা দিয়ে অনেককে ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে। পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপ ও অ্যাম্বুলেন্সে চড়ে মানুষ ঢাকা ছাড়ছে। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব মানুষ ঢাকা ছাড়ছেন।
ইমরান হোসেন বাদল যুগান্তরকে বলেন, গতকাল রাত সাড়ে নয়টা থেকে ঢাকায় ঘুরতেছি।
বাড়ি যাওয়ার কিছুই পাইনি। এখন একটি পিকআপ পেয়েছি, কিছুক্ষণের মধ্যে পিকআপে চড়ে পাবনার সাঁথিয়ার উদ্দেশে রওনা হব। রাসেল আহমেদ নামের এ য্বুক বলেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে ভেঙে ভেঙে ঢাকায় আসতে তার ১ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হয়েছে। জরুরি কাজে ঢাকা এসেছেন, আবারও তাকে ফিরে যেতে হবে। যাওয়ার সময় তার একই রকম টাকা খরচ হবে বলে মনে করছেন তিনি। আরও বলেন, এক আত্মীয় গুরুতর অসুস্থ, তাকে দেখা জরুরি ছিল বলে এসেছি।
গতকাল রাজধানীর শনির আখড়া-কাজলা সড়ক ঘুরে দেখেছে যুগান্তর প্রতিবেদক। পরিদর্শনকালে চেকপোস্টের কারণে সড়কে গাড়ির চাপ কিছুটা কম দেখা গেছে। কিন্তু রিকশার চাপে কিছু কিছু জায়গায় জটলা বেঁধে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। অনেককে ভ্যানযোগেও চলাচল করতে দেখা গেছে। মাঝে মাঝে বাইক-সিএনজি এলেও নানা অজুহাতে তারা যেতে পারছেন না। কাজলা থেকে যাত্রাবাড়ী নিচের সড়ক ভাঙা থাকায় যানজট লক্ষ্য করা গেছে।
চালকরা জানান, যাত্রাবাড়ীতে যাওয়ার এ সড়কটির এমন বেহালদশা অনেক দিন ধরেই। যত দিন যাচ্ছে তত গর্ত বাড়ছে। এভাবে চলাচল করা একদিকে যেমন ঝুঁকির অন্যদিকে যানজটেরও সৃষ্টি হচ্ছে। পুলিশ সদস্যরা জানান, আজ (শনিবার) সকাল থেকে রাস্তা অনেকটাই ফাঁকা। যারা বের হচ্ছেন নানা অজুহাত দেখাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে যৌক্তিক কারণ পেলেই ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। অন্যথায় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কিছু যানবাহনে থাকা যাত্রী ও চালক যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পরায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে দেখা গেছে।