1. admin@channeldurjoy.com : admin : Salahuddin Sagor
  2. news.channeldurjoy@gmail.com : Editor :
ঘি-মাখন তৈরি শিখতে বিদেশ যেতে ৭৫ লাখ টাকার আবদার! - চ্যানেল দুর্জয়
সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৭:৪৭ পূর্বাহ্ন

ঘি-মাখন তৈরি শিখতে বিদেশ যেতে ৭৫ লাখ টাকার আবদার!

  • প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদ।।কদুগ্ধজাত পণ্য তৈরি শিখতে বিদেশে প্রশিক্ষণ বাবদ অস্বাভাবিক খরচের আবদার করেছে বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড (মিল্কভিটা)। মূল প্রকল্পে ৩০ লাখ টাকা ধরা হলেও সংশোধিত প্রস্তাবিত প্রকল্পে তা বাড়িয়ে ৭৫ লাখ টাকা করা হয়। প্রশিক্ষণ খাতে ব্যয় বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পায়নি পরিকল্পনা কমিশন। এ ব্যয় অস্বাভাবিক গণ্য করে প্রশিক্ষণের জন্য শেষমেশ ২০ লাখ টাকা রাখতে সম্মত হয়েছে।

বৃহত্তর ফরিদপুরের চরাঞ্চল ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন এবং দুগ্ধের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিতকরণে কারখানা স্থাপন প্রকল্পে এ প্রস্তাব করা হয়।

গত ২৬ জানুয়ারি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. মামুন-আল-রশীদের সভাপতিত্বে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মিল্কভিটার দাবি করা বাড়তি বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ব্যয় কমানো হয়। মূল প্রকল্পে কর্মকর্তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণ বাবদ ৩০ লাখ টাকা ধরা হয়েছিল। প্রস্তাবিত প্রকল্পে এটা বাড়িয়ে ৭৫ লাখ টাকা করা হয়। তবে এ আবেদনে সায় দেয়নি কমিশন।

করোনা সংকটের কথা বিবেচনা করে প্রকল্পের আওতায় কর্মকর্তাদের বৈদেশিক প্রশিক্ষণের জন্য সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখার বিষয়ে একমত পোষণ করে কমিশন। নতুন প্রস্তাবে কর্মকর্তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণ বাবদ ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ের কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পায়নি তারা।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. মামুন-আল-রশীদ জাগো নিউজকে বলেন, আমরা জানি মিল্কভিটা সমবায়ের মাধ্যমে দুগ্ধ আহরণ করে। এটার জন্য ৭৫ লাখ টাকা খরচ করে কর্মকর্তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণের কোনো যৌক্তিকতা দেখছি না। এখানে সরকারি কোষাগারের ৭৫ লাখ টাকা খরচের অনুমতি দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই ৭৫ লাখ থেকে কমিয়ে ২০ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। কীভাবে উন্নতমানের দুগ্ধজাত পণ্য তৈরি করা যায় সেই টেকনোলজি দেখার জন্যই মূলত ২০ লাখ টাকা রেখেছি।

প্রকল্পের নানা গুরুত্বপূর্ণ খাতের ব্যয় ইন্টারনেট দেখে নির্ধারণ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। একই সঙ্গে ইন্টারনেটের তথ্য বাদ দিয়ে কারিগরি কমিটির মাধ্যমে দাম নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে।

প্রস্তাবিত প্রকল্পে ফ্রিজিং রুম, কোল্ড রুম ও প্যাকেজিং এবং ঘি, বাটার (মাখন) ও চিজ প্রোডাকশন সেকশনের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিল্কভিটার এক প্রতিনিধি বলেন, ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক এসব খাতের রেট নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কারিগরি বিবেচনায় ফ্রিজিং রুম, কোল্ড রুম ও প্যাকেজিং এবং ঘি, বাটার ও চিজ প্রোডাকশন সেকশনের প্রাক্কলিত ব্যয় একটি কমিটির মাধ্যমে নির্ধারণ করে নতুন প্রকল্পে সংযোজনের বিষয়ে পিইসি সভায় সবাই একমত পোষণ করেন।

প্রকল্পে ইউএইচটি (উচ্চ তাপমাত্রা বা আলট্রা হাই টেম্পারেচার) মিল্কপ্ল্যান্ট খাতের মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে মিল্কভিটার প্রতিনিধি জানান, এ খাতের মূল্যও ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) সংযোজন করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার পরে ইউএইচটি মিল্কপ্ল্যান্টের মূল্য একটি কমিটির মাধ্যমে নির্ধারণ করে রেফারেন্সসহ নতুন প্রস্তাবিত প্রকল্পে সংযোজনের বিষয়ে পিইসি সভায় সবাই একমত পোষণ করেন।

ইন্টারনেট দেখে প্রকল্পের ব্যয় প্রাক্কলন করা প্রসঙ্গে মামুন-আল-রশীদ বলেন, অনেক কম্পোনেন্টের ব্যবহার দেশে নেই। ফলে ইন্টারনেট দেখে একটা দাম নির্ধারণ করা হয়। অনেক সাইট আছে যেগুলো বিশ্বাসযোগ্য। তবে এটা চূড়ান্ত নয়, প্রাক্কলন মাত্র। তারপরও ব্যয় প্রাক্কলনে কমিটি তৈরি করতে বলা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, শুধু বৈদেশিক ভ্রমণ নয়, অন্যান্য ব্যয় ও সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। প্রকল্পের মূল কারখানাটি ফরিদপুর সদর থেকে মাদারীপুরের টেকেরহাটে স্থানান্তরের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, মাদারীপুরে মিল্কভিটার নিজস্ব জমিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) সভায় সুপারিশ করা হয়। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ফরিদপুর সদরে অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাবিত জমির মূল্য প্রায় ২৮ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল, যা নতুন স্থানে সাশ্রয় হবে।

প্রকল্প সংশোধন প্রস্তাবে ব্রিডিং বুল কেনার জন্য দেড় কোটি টাকার সংস্থান রেখে নতুন খাত সংযোজনের বিষয়ে জানতে চাইলে মিল্কভিটার পক্ষ থেকে জানানো হয়, গাভির জাত উন্নয়নের জন্য অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা থেকে পাঁচটি বুল (ষাঁড়) আনা প্রয়োজন। ব্রিডিং বুল কেনা বাবদ ব্যয় একটি কমিটির মাধ্যমে নির্ধারণ করে প্রকল্পে সংযোজন করা হবে।

এ প্রকল্পের ভবন নির্মাণ খাতে একক ও পরিমাণের কোনো উল্লেখ নেই। ফলে কারখানা, অফিসার্স এবং স্টাফ কোয়ার্টার, অফিস বিল্ডিং, বুল শেড, দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্র ও মিনি ডেইরি প্ল্যান্ট স্থাপন খাতে সুনির্দিষ্টভাবে একক ও পরিমাণ উল্লেখ করা প্রয়োজন বলে অভিমত ব্যক্ত করে কমিশন।

বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেডের অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক (সমিতি ও পরিকল্পনা) মো. মুস্তাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, উন্নতমানের দুগ্ধজাত পণ্য তৈরি ও গাভির জাত উন্নয়নে কিছু কর্মকর্তা বিদেশে যাবেন। এসব কারণে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছিল। তবে এটা কমিয়ে ২০ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। বিদেশ থেকে কিছু ফর্মুলেশন আনা হবে। বড় গাভির জাত উন্নয়নও দরকার। এজন্য বিদেশে প্রশিক্ষণে বাড়তি ব্যয় ধরা হয়েছিল।

মূল প্রকল্পটি ৩৪৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে জানুয়ারি ২০১৮ থেকে ডিসেম্বর ২০২১ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। এরপর প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। প্রকল্পটি ঢাকা ও খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় বাস্তবায়নাধীন। দুগ্ধপণ্য উৎপাদন কারখানা স্থাপন ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে আয়বর্ধনমূলক কর্মকাণ্ড ও সুযোগ সৃষ্টি করা প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য। বাস্তবায়ন পর্যায়ে কতিপয় নতুন খাতের ব্যয় বাড়ায় প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রাখতে এটি সংশোধন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ৩৮৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা হচ্ছে। জুন ২০২১ পর্যন্ত প্রকল্পটির ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় ৭১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা এবং বাস্তব অগ্রগতি ২০ দশমিক ৮২ শতাংশ। প্রকল্পটি ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে চলমান বিনিয়োগ প্রকল্প তালিকায় ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দসহ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। নতুন করে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন নাগাদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক নিয়োগে বিলম্ব ও করোনার পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে প্রকল্পের অগ্রগতি আশানুরূপ হয়নি। সে কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে আরও কিছুটা বেশি সময়ের প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

নানা কারণে দেশে প্রতি বছর দুধের ঘাটতি থেকে যায়। যে কারণে সরকার চার হাজার কোটি টাকার গুঁড়া দুধ আমদানি করে। নিজস্ব উৎপাদনে দুধের ঘাটতি মেটাতে বড় পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে ফরিদপুরকে কেন্দ্র করে ওই অঞ্চলে একটি ‘হাব’ (কেন্দ্রস্থল) গড়তে প্রকল্প নেওয়া হয়। ফরিদপুরে থাকবে বিশাল ইউএইচটি মিল্ক প্ল্যান্ট, অটোমেটিক আইসক্রিম প্ল্যান্ট, চকলেক ও ক্যান্ডি প্ল্যান্ট। আরও থাকবে পাস্তুরিত মিল্ক প্ল্যান্ট, ঘি, রসমালাই, মিষ্টিদই, লাবাং, বাটার, চিজ প্রোডাকশন বিভাগ। স্থাপিত হবে ফ্লেভার্স মিল্ক প্রসেসিং প্ল্যান্ট, কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র, মাইক্রো-বায়োলজিক্যাল ল্যাবরেটরি, ডেইরি বায়োটেকনোলজিক্যাল ল্যাবরেটরি ও মোবাইল ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি।

এই বিভাগের আরো সংবাদ

আজকের দিন-তারিখ

  • সোমবার (সকাল ৭:৪৭)
  • ২০শে মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১২ই জিলকদ ১৪৪৫ হিজরি
  • ৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)

এই মুহুর্তে সরাসরি সংযুক্ত আছেন

Live visitors
87
3869985
Total Visitors