1. admin@channeldurjoy.com : admin : Salahuddin Sagor
  2. news.channeldurjoy@gmail.com : Editor :
একটি হবুচন্দ্রীয় আইনের খসড়া ও বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচক - চ্যানেল দুর্জয়
সদ্যপ্রাপ্ত :

একটি হবুচন্দ্রীয় আইনের খসড়া ও বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচক

  • প্রকাশিত : শনিবার, ৭ মে, ২০২২

মোশতাক আহমেদ : ইতিহাসে থাকুক বা নাই থাকুক, গল্পে তো আছে! আর কে না জানে যে কখনো কখনো গল্পের কাহিনী ইতিহাসের চেয়েও বেশি গণ-মননকে নাড়া দেয়।

এমনই এক গল্প রাজা হবু চন্দ্র আর তার মন্ত্রী গবু চন্দ্রের। আমাদের এই বঙ্গদেশের ঢাকার অদূরস্থ সাভারে জন্ম নেওয়া প্রখ্যাত লোকসাহিত্যিক দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের বদৌলতে এ দেশের মানুষ অনেক আগে থেকেই হবুচন্দ্রের সঙ্গে পরিচিত। অবশ্য তারও আগে বঙ্কিমচন্দ্র এবং পরে রবীন্দ্রনাথও তাদের সৃষ্টিকে সমৃদ্ধ করার জন্য হবুচন্দ্রের দ্বারস্থ হয়েছেন।

তবে এ ক্ষেত্রে আমার প্রজন্মের (ষাটোর্ধ বয়সের) মানুষ মনে হয় হবুচন্দ্র সম্ভারের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি পরিচিত হয়েছেন বিক্রমপুরের কবি সুনির্মল বসুর সেই বিখ্যাত কবিতাটির মাধ্যমে। ‘হবুচন্দ্র রাজা কহেন গবুচন্দ্র ডেকে/ আইন জারী করে দাও রাজ্যেতে আজ থেকে/ কাঁদতে কেহ পারবে নাকো যতই মরুক শোকে/ হাসবে আমার যতেক প্রজা হাসবে যত লোকে।’

সুনির্মল বসুর কবিতাটির কথা ভুলতেই বসেছিলাম। কিন্তু সম্প্রতি খবরের কাগজে একটা খবর দেখে প্রায় ৬ দশক আগের পড়া কবিতাটি মনে পড়ল।

গত ১৭ এপ্রিল বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত এক খবরে জানা যায়, ভবিষ্যতে ফেসবুকে ‘আজ আমার মন খারাপ’ এমন স্ট্যাটাস দিলেও আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য সরকার আইন করতে যাচ্ছে। খবরে আরও বলা হয়েছে, ‘ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওটিটি প্লাটফর্মে’র জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন নতুন যে বিধিমালা প্রণয়ন করতে যাচ্ছে তাতে এ ব্যবস্থাই রাখা হয়েছে।

অর্থাৎ, সরকার চায় দেশের সব মানুষ হাসিখুশি থাকুক। কোনো অবস্থাতেই কেউ মন খারাপ করতে পারবে না। হোক তা প্রেমিক বা প্রেমিকার সঙ্গে বিচ্ছেদ কিংবা আপনজনের লোকান্তরগমন! কোথায় যেন শুনেছিলাম, হাসলে হৃদযন্ত্রের ব্যায়াম হয়। আমাদের সরকার মনে হয় সেই সূত্র ধরেই এগুচ্ছে। তাই যত কষ্টই থাকুক, সবাইকে হাসতে হবে। মন খারাপ করলে চলবে না।

গল্পের রাজা হবুচন্দ্র তার দেশকে খুব ভালোবাসতেন। তাই তো তিনি চাইতেন, সারা বিশ্বে তার দেশের সুনাম হোক এই বলে যে—তার দেশের সবাই সুখী। আমাদের কর্তাব্যক্তিরাও দেশকে ভালোবাসেন। তারাও চান দেশের সুনাম হোক। কেউ যেন বলতে না পারে যে এই দেশে কারো মন খারাপের অসুখ আছে। তাই তো তারা এমন একটা আইন তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছেন। তবে জানি না তারা হবুচন্দ্র দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই এমন একটা আইন তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছেন কিনা।

এ দিকে, সারা দেশ যখন তেল নিয়ে তেলেসমাতি কাণ্ডের মাঝেও ঈদ উদযাপনে ব্যস্ত, তখনই রিপোর্টারস উইদাউট বর্ডার (আরএসএফ) বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে তাদের ২০২২ সালের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

তাতে দেখা যায়, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের ১০ ধাপ অবনমন ঘটেছে। বাংলাদেশ গত বছরের তুলনায় ১০ ধাপ পিছিয়ে ১৮০ দেশের মধ্যে ১৬২তম স্থান দখল করেছে। দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র মিয়ানমার ছাড়া সব দেশই, এমনকি আফগানিস্তানও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের উপরে রয়েছে।

উল্লেখ্য, ইউনেস্কোর উদ্যোগে প্রতি বছর ৩ মে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস পালন করা হয়। সেই সূত্রেই প্যারিসভিত্তিক আরএসএফ প্রতি বছর এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

২০২২ সালের জন্য দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘ডিজিটাল অবরোধে সাংবাদিকতা’ (জার্নালিজম আন্ডার ডিজিটাল সিজ)। বিশ্বাস করতে পারি, আরএসএফ বিভিন্ন দেশের এ সংক্রান্ত তথ্যাদি যাচাই-বাছাই করেই তাদের সূচক প্রতিবেদন তৈরি করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে ‘ডিজিটাল’ শব্দটা উচ্চারণ করলেই যে একধরনের আতঙ্কে মানুষ শিউরে ওঠে, তা তারা কতটুকু বিবেচনায় নিয়েছে তা আমার জানা নেই।

২০১৮ সারের নির্বাচনের আগে সরকার যখন এই দেশে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ নামে নতুন আইনটি করে, তখন সরকারের কর্তাব্যক্তিরা এর পক্ষে যা-ই বলে থাকুন না কেন, জনগণের কাছে যে এটি বিরোধী মত দমনের এক নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা বলেই খ্যাতি অর্জন করেছে তাতে কোনোই সন্দেহ নেই। তাই, ইউনেস্কোর এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়টি যে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে খুবই প্রাসঙ্গিক তা বলাই বাহুল্য।

ঘটনাক্রমে এবারের প্রতিবেদন প্রকাশের দিনটির সঙ্গে বাংলাদেশে ঈদ উদযাপনের দিনটিও মিলে গেছে। হতে পারে এটি নিতান্তই কাকতালীয় ব্যাপার। কিন্তু ধীমান ব্যক্তিদের জন্য এই খবরটি কিছুটা হলেও যে ‘মন খারাপের’ কারণ হতে পারে, তা তো বলাই বাহুল্য। কিন্তু তারপরও বলা যাবে না, মন খারাপ। বললেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ধরা খেতে হবে।

তাই আসুন, সবাই আমরা হাসি। হাসতে হাসতে বলি, আমার মন খুব ভালো। মনে রাখবেন গবুচন্দ্ররা আশপাশেই আছে এবং সবসময় আশপাশেই থাকে।

মোশতাক আহমেদ: সাবেক জাতিসংঘ কর্মকর্তা
moshtaque@gmail.com

(চ্যানেল দুর্জয়ের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, চ্যানেল দুর্জয় কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার চ্যানেল দুর্জয় নেবে না।)

‘বাণী চিরন্তন’

তোমার এক বন্ধুর সাথে অন্য কোনো বন্ধুকে পরিচয় বা বন্ধুত্ব করিয়ে দিলে মানে দুই বন্ধুকেই হারিয়ে ফেললে। একসময় দেখা যাবে তোমার ঐ দুই বন্ধু একে অপরের ঘনিষ্ট বন্ধু হয়ে গেছে আর তুমি দুজনেরই শত্রু হয়ে গেছ।

-রেদোয়ান মাসুদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো সংবাদ
01 যে ব্যক্তি একজন মুসলমানের দোষ গোপন করবে , আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন করবেন। - হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)।

02`একবার আপনি ভয়কে প্রত্যাখ্যান করলে, আপনি সত্যকে গ্রহণ এবং প্রতিফলিত করার জন্য নিখুঁত প্রার্থী হয়ে উঠবেন।-সুজি কাসেম।

আজকের দিন তারিখ

  • শুক্রবার (রাত ২:৫৫)
  • ২১শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • ২১শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি
  • ৭ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (বসন্তকাল)

এই মুহুর্তে সরাসরি সংযুক্ত আছেন

120
Live
visitors
©All rights reserved © 2020 Channel Durjoy চ্যানেল দুর্জয় মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লালিত একটি অনলাইন স্বাধীন গণমাধ্যাম, দুর্জয়ের প্রতিনিধির নিকট থেকে শুধু তার প্রেরিত সংবাদ গ্রহণ করা হয়, সংশ্লিষ্ঠ প্রতিনিধি যদি সমাজ/রাষ্ট্রবিরোধী কোন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়, তাঁর দায় দুর্জয় কর্তৃপক্ষ বহণ করবেনা
Customized BY NewsTheme