নিজস্ব প্রতিবেদক : আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। মনোনয়নপত্র হাতে নেওয়া তার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ওই ছবিতে দেখা যায়, উপজেলার হরিহরনগর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক ও জমিয়াতে ইসলামীর ইউনিয়ন নেতা এবং খানপুর ইউপির চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামসহ কয়েকজন নেতাকর্মী প্রতিমন্ত্রী স্বপনের পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন।
ভিডিও দেখুন এখানে ক্লিক করুন
এর মধ্যে ইউপি চেয়ারম্যান রাজ্জাক ও সিরাজের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা রয়েছে। একইসঙ্গে তারা দু’জনই নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এদিকে উপজেলার শীর্ষনেতাদের বাদ দিয়ে বিএনপির নেতা ও নাশকতার মামলার আসামিদের নিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র কেনা নিয়ে বইছে সমালোচনার ঝড়।
গত ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় থেকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনে দলীয় মনোনয়ন ফরম কেনেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য। সেদিন ঢাকার বাসার সামনে মনোনয়ন হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন স্বপন ভট্টাচার্য্য, তার পাশে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ মাহমুদুল হাসানসহ কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যানও রয়েছেন। প্রতিমন্ত্রীর পেছনে রয়েছেন, উপজেলার হরিহরনগর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক, যার বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে মণিরামপুরে নাশকতা মামলায় ১৪ নম্বর আসামি ছিলেন। সেই মামলায় দণ্ডিত হয়ে তিনি কারাগারেও ছিলেন।
চলতি বছরের ১৭ জুলাই অনুষ্ঠিত হরিহরন নগর ইউনিয়ন পরিষদের নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। এছাড়া প্রতিমন্ত্রীর পেছনে থাকা জমিয়াতে ইসলামীর ইউনিয়ন নেতা ও খানপুর ইউপির চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামকে দেখা গেছে। তার বিরুদ্ধে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নাশকতার মামলা রয়েছে। এছাড়া সবশেষ ইউপি নির্বাচনে তিনি নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে বিজয়ী হন।
নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, দলীয় মনোনয়ন কেনার ওই ছবিতে আরও পাঁচজন ইউপি চেয়ারম্যান থাকলেও তাদের মধ্যে তিনজন নৌকার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছিলেন।
নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ২০১৪ সালে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচিত হন স্বপন। এরপর দলের টিকিটে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর প্রতিমন্ত্রী হন। এরপর থেকে তার বিপক্ষে আওয়ামী লীগের একটি বলয় সৃষ্টি হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ মাহামুদুল হাসান প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে রাজনীতি করলেও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদকসহ বড় একটি পক্ষ প্রতিমন্ত্রীর বিপক্ষে। ভবদহ অঞ্চল নিয়ে স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম ও দলীয় কোন্দলের কারণে উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। একইসঙ্গে সবশেষ ইউনিয়ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিমন্ত্রীর অনুসারীদের নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা করে নৌকার প্রার্থীদের পরাজিত করেছেন, যা নিয়ে উপজেলা নেতাকর্মীর মধ্যে সৃষ্টি হয় ক্ষোভ। এর ফলে উপজেলা ও তৃণমূল নেতাকর্মীর সঙ্গে এমপির দূরত্ব সৃষ্টি হয়।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক ফারুক হোসেন বলেন, প্রতিমন্ত্রী স্বপন সবসময় জামায়াত-বিএনপির লোকজন সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করেন। তার প্রমাণ হলো, দলীয় মনোনয়ন কেনার একটি ছবি। ছবিটির বেশিরভাগ নেতাকর্মী আওয়ামী লীগ বিরোধী। এছাড়া টানা দুইবারের সাংসদ ও বর্তমান প্রতিমন্ত্রীর পাশে উপজেলার নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে না থাকার কারণ হলো, তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের না। তিনি তৃণমূল নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করেন না।
প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে নাশকতা মামলার আসামিদের থাকা প্রসঙ্গে মণিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। কাগজপত্র দেখে বলতে পারব।
দলীয় নেতাদের আওয়ামী লীগের এমপির সঙ্গে মনোনয়ন ফরম কিনতে যাওয়া প্রসঙ্গে জেলা বা উপজেলা বিএনপির কোনো নেতাকে পাওয়া যায়নি। যশোর বিএনপির শীর্ষ নেতারা বর্তমানে আত্মগোপনে।
বিষয়টি স্বীকার করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য বলেন, অনেকেই আমার সঙ্গে মিশতে চায়। কিন্তু পারেনা। তবে মনোনয়ন ফরম কেনার সময় দলবল নির্বিশেষে বিভিন্ন সংগঠনের লোকজন ছিল। কাছে আসলে তো কাউকে নিষেধ করতে পারিনা।
উল্লেখ্য, প্রতিমন্ত্রী স্বপনের আসনে ১২ নেতাকর্মী নৌকা চান। ইতোমধ্যে তারা দলীয় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তারা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা খানম, জেলা কৃষকলীগের সহ-সভাপতি ইয়াকুব আলী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন লাভলু, যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্য, আওয়ামী লীগ নেতা কামরুল হাসান বারী, আওয়ামী লীগ নেতা সুশান্ত কুমার মণ্ডল, নিতাই কুমার বৈরাগী ও সাবেক সংসদ টিপু সুলতানের ছেলে হুমায়ন সুলতান।