1. admin@channeldurjoy.com : admin : Salahuddin Sagor
  2. news.channeldurjoy@gmail.com : Editor :
বামাক্ষ্যাপা বাবার সিদ্ধিলাভ - চ্যানেল দুর্জয়
বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০৩:২৮ পূর্বাহ্ন

বামাক্ষ্যাপা বাবার সিদ্ধিলাভ

  • প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ১৮ আগস্ট, ২০২০


উজ্জ্বল রায় (নড়াইল জেলা) প্রতিনিধিঃ
দীক্ষা গ্রহণের জন্য মায়ের অনুমতি প্রয়োজন। পাগল বামা তাঁর মায়ের নিকট থেকে অনুমতি লাভ করে তারাপীঠে ছুটে এসে তারা মাকে বললেন, “আমি এসেছি মা, মায়ের অনুমতি নিয়েই এসেছি। এবার তোর পদতলে স্থান দে মা। জয় তারা! জয় তারা! জয় মা তারা!”

মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন কৈলাসপতি বাবা। দূর থেকে ভেসে আসছে ” জয় তারা জয় মা তারা ” ধ্বনি। তিনি বুঝতে পারলেন কে আসছে। অনুমান মিথ্যা নয় কৈলাসপতি বাবার। একটু পরেই তিনি দেখতে পেলেন বামাচরণকে। বামাচরণকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন কৈলাসপতি বাবা। তারপর তিনি বামাচরণকে নিয়ে গেলেন আপন কুটিরের সামনে। কুঠিরের অভ্যন্তরে স্থাপিত মাতৃ- মূর্তির দিকে তাকিয়ে গভীর বিস্ময়ে হতবাক হয়ে পরলেন বামাচরণ। চারদিকে এতো অন্ধকার, তাহলে কুটির মধ্যে এতো আলো কেন?

অপলক দৃষ্টিতে মাতৃ-মূর্তির দিকে তাকিয়ে আছেন বামাক্ষ্যাপা। তিনি দেখলো, পলকে পলকে রূপ পরিবর্তিত হচ্ছে মাতৃ মূর্তির। এ দৃশ্য ভাষায় প্রকাশ করা যায় না, কেবল উপলব্ধি করতে হয় অন্তর দিয়ে। মায়ের পরিবর্তিত রূপগুলো স্বচক্ষে দেখতে পেলন বামাচরণ। দেখলন মায়ের দশটি রূপঃ “কালী, তারা, ষোড়শী, ভৈরবী, ভুবনেশ্বরী, ধূমাবতী, ছিন্নমস্তা, বগলা, মাতঙ্গী ও কমলা।”

নয়ন সার্থক হলো বামাচরণের। অব্যক্ত আনন্দে সারা দেহ তাঁর দুলতে লাগলো। চেতনা হয়ে পড়লো আচ্ছন্ন। তারপর এক সময় জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেলন মাটিতে।
কৈলাসপতি বাবার কথায় মোক্ষদানন্দ বেদ পাঠ করে শোনাতে লাগলেন বামাচরণকে। বামাচরণের দীক্ষা সম্পন্ন হলো। বামাচরণ এক এক করে শিখে নিলো ধর্ম, শাস্ত্র ও নীতি। ভৈরব-তন্ত্রের ক্রিয়াকলাপ শিক্ষাও শেষ হলো বামাচরণের।

কৈলাসপতি বাবা এবার বামাচরণকে নিয়ে এলেন শ্বেত শিমুল বৃক্ষতলে পঞ্চমুন্ডির আসনে । বললেন “এ আসনে তুমি ধ্যানে বস। একাকী নির্ভয়ে জপ কর বীজমন্ত্র।” ব্রহ্মার মানসপুত্র বশিষ্ঠমুনি, এই আসনে বসে তারা মন্ত্রে সাধনা করেন ও সিদ্ধি লাভ করেন, তাঁরা মায়ের দর্শন করেন। তারপর আরও অনেক সাধক এখানে সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেন। তান্ত্রিক সাধক আনন্দ-নাথ,পণ্ডিত মোক্ষদানন্দ, নাটোরের রাজা রামকৃষ্ণ আরও অনেকে এই পঞ্চমুন্ডির আসনে বসে সিদ্ধি লাভ করেন।
বামাচরণ ধ্যানে বসলেন। ধীরে ধীরে লোপ পেলো বিশ্ব-চরাচরের যাবতীয় অনুভূতি। দিন শেষ হয়ে নামে সন্ধ্যা। তারপর আসে রাত্রি। পৃথিবীতে কোথাও কোন কোলাহল নেই। যেন অস্তিত্ব লোপ পেয়েছে পৃথিবীর। বামাচরণ তখন বাহ্যজ্ঞানহীন। জাগতিক সমস্ত সত্তা তার তখন বিলুপ্ত হয়েছে। অবশেষে দিনমণি উদয় হয়। দিগন্ত হয়ে ওঠে রঞ্জিত। এমন সময় বামাচরণ শুনতে পেলেন এক নারীকন্ঠের ডাক, “বামা! তুই সিদ্ধিলাভ করেছিস। পূর্ণ হয়েছে তোর প্রার্থনা। এই বৃক্ষমূলে আমি শিলাময়ীরূপে অধিষ্ঠিত রয়েছি। তোর সিদ্ধিলাভের প্রমাণস্বরূপ আগামী এক প্রহরের মধ্যে ধরাশায়ী হবে এই শ্বেত শিমুল বৃক্ষ।”

চমকে উঠলো বামাচরণ। সভয়ে বললেন— “সেকি মা, এই শ্বেত শিমুল বৃক্ষ ধরাশায়ী হবে? “

হেসে উঠলো তারা-মা। বললে— “হ্যাঁ ধরাশায়ী হবে। আর এখন থেকে এই বৃক্ষের বদলে মহাজ্যোতিঃরূপে আমি স্বয়ং এখানে বিরাজ করবো। তোর সিদ্ধিলাভের পর মাত্র তিন লক্ষবার মন্ত্রজপ করে এই কলিযুগে এখানে সিদ্ধিলাভ করবে একাদশ সহস্র সাধক।”

তারা-মায়ের কথা কি মিথ্যা হতে পারে? ঠিক এক প্রহর মধ্যে ধরাশায়ী হলো শ্বেত শিমুল বৃক্ষ। আর তৎক্ষণাৎ সেই স্থান অত্যুজ্জ্বল আলোকে উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো।

সেই অত্যুজ্জ্বল আলোয় প্রকাশিত হলো এক নীলবর্ণ নারীমূর্তি। সেই মূর্তির বামপদ শবের উপর স্থাপিত, বামহস্তে নীলপদ্ম ও কপাল-পাত্র, ডান-হস্তে খড়্গ। দেবীর পরনে ব্যাঘ্রচর্ম, গলায় মহাশঙ্খমালা, মস্তকে পিঙ্গল বর্ণের জটাজাল, সর্বাঙ্গে স্বর্ণালঙ্কার। বামাচরণ চিনতে পারলো এই মূর্তিকে। ইনিই তাঁর আরাধ্যা দেবী- তারা-মা।

তারা–মা সস্নেহে দু’হাত প্রসারিত করলেন। বুকে টেনে নিলেন পাগল সন্তান বামাচরণকে। আত্মার সংগে পরমাত্মার সংযোগ স্থাপিত হলো। জগতে বামাচরণ সুপরিচিত হলেন ‘বামাক্ষ্যাপা’ নামে।

১২৭৪ বঙ্গাব্দের কৌশিকী অমাবস্যা তিথিতে তারাপীঠ মহাশ্মশানে শ্বেত-শিমূল বৃক্ষের নীচে তারা মায়ের প্রিয় পুত্র সাধক বামদেব পরম সিদ্ধি লাভ করেন এবং তারা মা বামাচরণকে চিরদিনের জন্য স্থান দিলেন তাঁর শ্রীচরণকমলে। শিষ্যের সিদ্ধিলাভে খুশী হলেন গুরু কৈলাসপতি বাবা।

এই বিভাগের আরো সংবাদ

আজকের দিন-তারিখ

  • বৃহস্পতিবার (রাত ৩:২৮)
  • ১৬ই মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ৮ই জিলকদ ১৪৪৫ হিজরি
  • ২রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)

এই মুহুর্তে সরাসরি সংযুক্ত আছেন

Live visitors
206
3734284
Total Visitors