ছেলের শোকে কাতর নারায়ণগঞ্জ তল্লা মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ শেখ ফরিদের মা আকলিমা বেগম। কিছু খেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বললেন, বাবা, ছেলেকে ছাড়া কিভাবে খাই। আমার পেটতো ভরা। ছেলেকে ফিরে না পেলে আর কখনোই হয়তো ক্ষুধার্ত হবো না।
উচ্ছল, প্রাণবন্ত তরুণ শেখ ফরিদ। প্রাচুর্য আর বাবার অঢেল সম্পদ নেই, তবে ফরিদের আছে স্বপ্নজয়ের ইচ্ছা। তাই উন্নত ভবিষত-স্বপ্নপূরণে পড়াশোনার পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জে একটি কোম্পানিতে জব করতেন স্বপ্নবাজ এ তরুণ। থাকতেন মেস ভাড়া নিয়ে। তিন ভাই ও দুই বোনের সংসার কিছুটা নির্ভর করতো পরিবারের বড় ছেলে ফরিদের উপার্জনের উপর। টানাপোড়েনের সংসারে নিজের স্বপ্নপূরণের পাশাপাশি পরিবারের ভার কিছুটা নিজের কাধে তুলে নিতে পেরে নিজেও বেজায় খুশি কিশোরগঞ্জের এ তরুণ। বাবা মঈনুল ইসলামও খুশি ছিলেন ছেলের প্রতি। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের তল্লা মসজিদে গ্যাস লাইন বিস্ফোণের ঘটনা উলট পালট করে দিতে চলেছে বুঝি এ পরিবারটির গল্প।
২২ বছরের উদ্যমী এ তরুণের মা আকলিমা সামলাতে পারছেন না নিজেকে। রবিবার (৬ সেপ্টেম্বর) একটু পরপর তার আহাজারি মৌনতা ভেঙে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা করছিল জাতীয় বার্ন ইউনিটের পাঁচ তালার অভ্যর্থনা কক্ষটিতে। বিস্ফোরণে ছেলের ঝলসে যাওয়া মুখ মায়ের মনের ক্ষত যেন বাড়িয়ে দিয়েছে শতগুণে।
বার্ন ইউনিটে ফরিদের মায়ের মতো এমন অনেকেই কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন একান্ত আপন মানুষটিকে ফিরে পেতে। এখন পর্যন্ত দুর্ঘটনায় শহীদ হওয়া ২৫ জনের সংখ্যা বেড়ে যেন আর কাউকে আপনজন হারানোর বেদনা না পোড়ায়, জাতীয় বার্ন ইউনিটে স্বজনের অপেক্ষায় থাকা প্রতিটি মানুষ এমন দোয়ায় চাইছেন সবার কাছে। তাদের সবার কামনা আর কোন অবহেলায় যেন প্রিয়জনকে হারানোর শঙ্কায় দিন কাটাতে না হয় কাউকে। বার্ন ইউনিটে দেশের প্রতিটি মানুষের জীবনের নিরাপত্তার কামনা করা ফরিদের মা ও অগ্নিদগ্ধ অনান্য মুসল্লিদের স্বজনদের এ চাওয়া কি পূরণ হবে আদৌ? ২৫টি তাজা প্রাণের দুঃসহ যন্ত্রণা কি এবার দায়িত্বশীলদের ব্যক্তিস্বার্থের বাইরে জনস্বার্থে কিছু করতে উদ্বুদ্ধ করবে? নাকি এই শোক কাটিয়ে নতুন কোন শোকের প্রহর গুনবে দেশের অসহায় মানুষ- এমন কিছু প্রশ্ন আকজাল ভেসে বেড়াচ্ছে সোস্যাল মিডিয়ায়।
উল্লেখ্য নারায়ণগঞ্জ তল্লা বায়তুল সালাহ জামে মসজিদের ভয়াবহ বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত ২৫ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ২০ জনের দাফন হয়েছে। এরমধ্যে ১৩ জন নারায়ণগঞ্জের ।
জাতীয় বার্ন ইউনিট থেকে