1. admin@channeldurjoy.com : admin : Salahuddin Sagor
  2. news.channeldurjoy@gmail.com : Editor :
আজারবাইজান-আর্মেনিয়া যুদ্ধ: ককেশাসে ভূরাজনৈতিক জাদু : বিদ্যুৎ। - চ্যানেল দুর্জয়
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ১১:২৪ অপরাহ্ন

আজারবাইজান-আর্মেনিয়া যুদ্ধ: ককেশাসে ভূরাজনৈতিক জাদু : বিদ্যুৎ।

  • প্রকাশিত : বুধবার, ৭ অক্টোবর, ২০২০

সম্পাদকীয় ।। নিষ্ঠুরতা , নরহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের এক বড় অনুষঙ্গ হচ্ছে যুদ্ধ বা ওয়্যার। চারিত্রিক দিক দিয়ে এটি প্রচণ্ড সহিংস এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ। পূর্ব ইউরোপে দক্ষিণ ককেশাসের বিরোধপূর্ণ এলাকা নাগোর্নো-কারাবাখকে কেন্দ্র করে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে কয়েকদিন ধরে তীব্র লড়াই চলছে। এই অঞ্চল নিয়ে দুটো দেশের মধ্যে এর আগেও থেকে থেকে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, সামরিক সংঘাতও হয়েছে, কিন্তু সেগুলো সবই ছিল সীমিত পরিসরে।
নাগোর্নো-কারাবাখ পাহাড়ী এবং ভারী-বনাঞ্চলের পরিপূর্ণ ৪৪০০ বর্গ কিলোমিটারের একটি ছিটমহল। নাগোর্নো-কারাবাখ প্রতিবেশী আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানদের মধ্যে কয়েক দশক ধরে সশস্ত্র লড়াইয়ের কেন্দ্রস্থল। এটি একটি সমৃদ্ধ অঞ্চল। আজারবাইজান জ্বালানি সম্পদ সমৃদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ দেশ। বিশ্বের প্রথম তেল কূপ তারাই চালু করে বাকুর দক্ষিণে ১৮৪৮ সালে। আর্মেনিয়া সামরিক ভাবে একগুঁয়ে হলেও অর্থনৈতিক ভাবে আজারবাইজানের চেয়ে কম প্রভাবশালী। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের ২০২০ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সামরিক শক্তির দিক থেকে বিশ্বের ১৩৮টি দেশের মধ্যে আজারবাইজানের অবস্থান ৬৪, অন্যদিকে আর্মেনিয়ার অবস্থান ১১১-এ। আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে নাগর্নো-কারাবাখ আজারবাইজানের অংশ হিসাবে স্বীকৃত হলেও বিগত ৩ দশক ধরে এটি আর্মেনিয়ার দখলে। সেখানে মূলত জাতিগত আর্মেনিয়ানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।
আজেরবাইজানে স্বাধীনতার পর থেকেই ইলহাম পরিবার ক্ষমতায়, যদিও সাংবিধানিকভাবে গণতন্ত্র উল্লিখিত, তবে প্রকৃত অর্থে তা বলতে সে দেশে কিছু নেই। বরং কমিউনিস্ট ধাঁচের একদলীয় শাসনব্যবস্থাই সে দেশে পোক্ত। এই শাসন ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে এবং নিজেকে একচ্ছত্র শাসক হিসেবে বজায় রাখতে ইলহামের রাজনৈতিক দল নিউ আজেরবাইজান পার্টি সবসময়ই নাগর্নো কারাবাখ অঞ্চলকে তাদের রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে তুলে ধরে। অন্যদিকে, আর্মেনিয়ায় বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত। ২০১৮ সালে বিরোধী দলীয় নেতা নিকোল পাশিয়ান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তবে, টি আই বি এর মতে, গণতন্ত্র থাকলেও দুর্নীতি সে দেশের একটি বড় সমস্যা।

দীর্ঘকাল ধরে চলমান এই উত্তেজনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে কিছুটা উদ্বেগের কারণ। কারণ এটি জ্বলানি সমৃদ্ধ অঞ্চল। এবং এই অঞ্চল বিশ্ব বাজারে তেল ও গ্যাস পাইপলাইনগুলির করিডোর হিসাবে কাজ করে। ককেশাসে নিজের প্রাধান্য বজায় রাখতে, নাগার্নো-কারাবাখ ইস্যুতে রাশিয়ার বরাবরই আর্মেনিয়ার পক্ষে। তুরস্ক প্রকাশ্যে আজারবাইজানের পক্ষে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। রাশিয়ার সাথে ঐতিহাসিক বিরোধের সাপেক্ষে আমেরিকা আজারবাইজানকে সমর্থন দেয়। আমেরিকার ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েল আজারবাইজানী আর্মির বড় অস্ত্র সাপ্লাইয়ার।
ইরান এবং আজেরবাইজানের জনগণ জাতিগতভাবে ভিন্ন কিন্তু ধর্মীয় বিশ্বাসে এক। দুদেশেরই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইসলামের শাখা শিয়া মতাবলম্বী। মজার ব্যাপার, পৃথিবীর সর্বত্র ইরান শিয়াদের পাশে উচ্চকণ্ঠ হলেও ঘরের পাশের এই প্রতিবেশীর নাগর্নো অধিকার নিয়ে তারা নীরব। এর কারণ কয়েকটি- তেল ও গ্যাসে কাস্পিয়ান সাগরে সমৃদ্ধ সমুদ্র মালিকানা নিয়ে দুদেশের বিরোধ। ইরানের উত্তরাঞ্চলে আজেরবাইজান সীমানা ঘেঁষে ইরানের অঞ্চল ইরানি আজেরবাইজান, যা জাতিগতভাবে আজেরবাইনি অধ্যুষিত, এই অঞ্চল কোন এক সময় আজেরবাইজান তার জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, শক্তিমত্তা ও সংখ্যাগরিষ্ঠতার জেরে দাবি করতে পারে, এই ভয় তেহরানের। আজেরবাইজানের ৬০% অস্ত্র সরবরাহকারী ইসরায়েল, বিনিময়ে আজেরবাইজানের তেল নেয় তেল আবিব। আবার, দু দেশই একে অপরকে স্বীকৃতি দিয়েছে, আজেরবাইজানকে স্বীকৃতিদানকারী দ্বিতীয় দেশ ইসরায়েল। দুদেশের এই সুসম্পর্ক তেহরান ভাল চোখে দেখছে না। তেহরানের ইচ্ছে, বাকুতে ইরানের মতই ইসলামিক সরকার প্রতিষ্ঠা, কিন্তু এ নিয়ে আপাতত আজেরবাইজানের জনগণ বা সরকার, কারোরই মাথাব্যথা নেই।
তুরস্ক সুন্নি এবং আজেরবাইজান শিয়া হলেও কিছু কারণে এই দুইটি দেশ মিত্র, কারণ জাতিগতভাবে তারা তুর্কি জনগোষ্ঠীর, যা দুদেশের মধ্যে এনে দিয়েছে ঐক্য। ভৌগলিক কৌশলগত কারণে আজারবাইজান তুরস্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। এ কারণে তুরস্ক বিভিন্ন সময়ে আজারবাইজানকে নৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থন দিয়ে আসছে। নব্বই-এর দশকের শুরুর দিকে নাগোর্নো-কারাবাখকে কেন্দ্র করে আর্মেনিয়ার সাথে আজারবাইজানের যুদ্ধের সময় আজারবাইজানে অস্ত্র ও সামরিক বিশেষজ্ঞ পাঠিয়েছিল তুরস্ক। ২০১০ সালে দুটো দেশ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বিষয়ক চুক্তিতেও সই করেছে। এবছরের জুলাই মাসেও আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে ছোটখাটো একটি যুদ্ধ হয়েছিল। এর পর থেকে তুরস্কের সঙ্গে আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা বিষয়ক যোগাযোগ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। দুটো দেশ মিলে যৌথ সামরিক মহড়াও চালিয়েছে। এবারের সংঘাত শুরু হওয়ার পর আজারবাইজানের প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন প্রকাশ করেছে তুরস্ক। তুর্কী প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, আজারবাইজানকে তারা সব ধরনের সহায়তা দেবেন।
রাশিয়ার সাথে আর্মেনিয়ার ভাল সম্পর্ক থাকলেও এখন আজেরবাইজানের সাথেও তারা সুস্পম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। কারণ আজেরবাইজানের সাথে ভাল সম্পর্ক রাখা তুরস্কের সাথে সুসম্পর্ক রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর তুরস্কের মাধ্যমে গ্যাস রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডে সরবরাহের একটি প্রকল্প বর্তমানে চলমান। তাছাড়া, রাশিয়া তুরস্ককে বিভিন্ন সামরিক সহায়তা দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটোবিরোধী অবস্থানের জন্যও তুরস্কের সাথে ভাল সম্পর্ক রাখা রাশিয়ার জন্য দরকার। মধ্যপ্রাচ্য ও পরমাণু ইস্যুতে কোণঠাসা ইরান এখন সৌদিবিরোধী কাতার এবং ইসরায়েল বিরোধী তুরস্ক এর সাথে এক ধরণের অঘোষিত ঐক্য তৈরি করেছে। এ কারণে নাগর্নো বিরোধে তুরস্ককে চটাতে চায় না তেহরান। তাই ইরান দুইদেশের মধ্যে সংলাপের আহবান জানিয়েছে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকেই নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে দুদেশের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। ৩০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। ফলে নতুন করে সমঝোতা করতে হলে দুদেশকে নিজেদের স্বার্থের সঙ্গে আপস করতে হবে। নাগর্নো-কারাবাখের স্বাধীন সরকারের বক্তব্যও এ ক্ষেত্রে জরুরি। তবে বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, যুদ্ধ থামাতে হলে সমঝোতার রাস্তায় যেতেই হবে দুটি দেশকে। এবং যেভাবে যুদ্ধের বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের ওপর চাপ তৈরি করেছে, তাতে এ ছাড়া আপাতত তাদের আর কোনো উপায়ও নেই।

লেখক, মোঃ মামুন হাসান বিদ্যুৎ, শিক্ষার্থী, ঢাবি

এই বিভাগের আরো সংবাদ

আজকের দিন-তারিখ

  • শুক্রবার (রাত ১১:২৪)
  • ৩রা মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ২৪শে শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরি
  • ২০শে বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)

এই মুহুর্তে সরাসরি সংযুক্ত আছেন

Live visitors
235
3386971
Total Visitors