1. admin@channeldurjoy.com : admin : Salahuddin Sagor
  2. news.channeldurjoy@gmail.com : Editor :
“যখন প্রয়োজন লড়াই” তখন প্রতিবাদ আত্মঘাতী : বিদ্যুৎ। - চ্যানেল দুর্জয়
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৬:৩১ পূর্বাহ্ন

“যখন প্রয়োজন লড়াই” তখন প্রতিবাদ আত্মঘাতী : বিদ্যুৎ।

  • প্রকাশিত : শুক্রবার, ৯ অক্টোবর, ২০২০

সম্পাদকীয় ।। সম্প্রতি ভয়াবহ মাত্রায় নারী ও শিশুর প্রতি যৌন নির্যাতেনর ঘটনায় সারা দেশ বিষ্ময়ে হতবাক; ঘৃণা ও ক্ষোভে ফুঁসছে সারাদেশের মানুষ।আলোচনা চলছে সর্বত্র। মানুষ যত শিক্ষিত, সচেতন এবং সংবেদনশীল হবে সে তত সভ্য ও মানবিক হয়ে উঠবে এমনটা ধারনা করাই যুক্তিযুক্ত ছিলো।কিন্তু বিশ্বব্যাপী নারী ও শিশুদের প্রতি যৌন সহিংসতার মাত্রা সে ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করছে না।গ্রামে কিংবা শহরে,শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত সমাজে এবং অনুন্নত কিংবা উন্নত বিশ্বে নারী ও শিশুদের প্রতি যৌন সহিংসতার উচ্চ হার প্রমাণ করে দেয় এ ধরনের অপরাধের পিছনে অন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে।
একটি স্বাধীন দেশের ৫০ বছর পরে এসে যখন দেখি গোটা দেশ ধর্ষকদের উল্লাসমঞ্চে পরিণত তখন মনে হয় সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ে পতিত দেশে অপরাধপ্রবণ যৌন বিকৃত একদল পুরুষ অবলীলায় ভুলে গেছে ’৭১-এ তার মা-বোনেরা হানাদার বাহিনীর ধর্ষণের শিকার হয়ে কি অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করেছে। আমরা কথায় কথায় মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মহান আদর্শের কথা বলি, জাতীয় বীরদের সাহসী অভিযানের গল্প বলি। কিন্তু সেসব আদর্শ কারও হৃদয় ও চেতনায় সমাজ-জীবনে বাস্তবায়ন করি না বলে, অনুসরণ করি না বলে যখন যারা ক্ষমতায় থাকি এতটাই অন্ধ হয়ে যাই যে যৌন বিকৃতদেরও রাজনীতিতে আশ্রয় দিই।
“আইনের ক্ষেত্রে একটা দর্শন আছে, প্রয়োজনে একজন অপরাধী বেকসুর খালাস পেয়ে যাবে, কিন্তু কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন সাজা না পায়।”বিশেষক্ষেত্রে ব্যবহৃত এই দর্শন যেন এখন পাকাপকি ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে আমাদের বিচার ব্যবস্থায়। প্রভাবশালীদের প্রয়োজনে বা হস্তক্ষেপে ধর্ষক পাচ্ছে খালাস! কিন্তু ঠিক থাকছে না নিরপরাধ ধর্ষিতার সাজা না পাওয়ার ব্যাপারটা। সে তো ঠিকই লজ্জা আর ঘৃণায় করছে আত্মহত্যা অথবা বেঁচে থাকলেও বয়ে বেড়াচ্ছে চিরগ্লানি! বিচার ব্যবস্থার এখানে কি কোন দায় নেই? এখানে না থাকল আইনের দর্শন ঠিক না থাকল সামাজিক দর্শন ঠিক। আইনের এই দর্শন অনুযায়ী তো ধর্ষিতা নারীর এই পরিণতি হবার কথা নয়। তার সামাজিক মর্যাদা কেন ক্ষুন্ন হবে? কেন সে লজ্জায় ঘৃণায় আত্মহত্যা করবে? তার জবাব কি?

একটি সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, প্রতি চারটি ধর্ষণের একটি হচ্ছে গণধর্ষণ। শিশু থেকে শতবর্ষী বৃদ্ধা নারীও ধর্ষণের শিকার। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ১৪১৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ৭৩২। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে দ্বিগুণ। পুলিশ সদর দপ্তর ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে বিচারের জন্য ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের দেড় লক্ষাধিক মামলা ঝুলে আছে। এসব মামলার বিচার চলছে ঢিমেতালে। বছরে নিষ্পত্তি হচ্ছে মাত্র ৩.৬৬ শতাংশ মামলা। আর সাজা পাচ্ছে হাজারে মাত্র সাড়ে চারজন। সাজার হার ০.৪৫ শতাংশ। আইনে ত্রুটি, পুলিশি তদন্তে ত্রুটি এবং অবহেলা, ফরেনসিক টেস্টের সীমাবদ্ধতা, প্রভাবশালীদের চাপ এবং সামাজিক কারণে এ রকম হচ্ছে বলে মনে করে ধর্ষণের শিকার নারী ও তার পরিবারকে আইনি সহায়তা দেওয়া মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
ধর্ষক যখন ধর্ষণ করে, তখন সে তার ভিক্টিমকে মানুষ হিসাবে দেখে না, দেখে পণ্য হিসাবে, বিকৃত আনন্দের উৎস হিসাবে। মানুষে মানুষে সহমর্মীতার শিক্ষা যদি তাদের ছোটবেলা থেকে দেয়া হত তাহলে সে ধর্ষণ করার আগে ভিক্টিমের মানসিক অবস্থা সম্পর্কে একবার হলেও চিন্তা করত। নিজেকে ভিক্টিমের জায়গায় কল্পনা করত। এরপর আর কোনভাবেই তার ধর্ষণের ইচ্ছা থাকত বলে আমার মনে হয় না। অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রেও একই কথা। শুধু ধর্ষণ নয়, প্রতিটি অপরাধেই কেউ না কেউ ভিক্টিমে পরিণত হয়। অপরাধী যদি ভিক্টিমের কথা চিন্তা করে, তাহলে তার অপরাধ করার ইচ্ছা চলে যেতে বাধ্য। কিন্তু এরপরেও কিছু খটকা থেকে যায়। অনেক শিক্ষিত লোকজনও ধর্ষণ করে। সরকারের উঁচু পর্যায়ে যারা আছে, তারা প্রায় সবাই শিক্ষিত। অথচ দুর্নীতির হার সেখানে লজ্জাদায়ক রকমের বেশি। সেখানে তো শিক্ষার অভাবকে অপরাধের কারণ হিসাবে দায়ী করা যায় না। এখানেই দ্বিতীয় কারণটা চলে আসে। সেটা হলো, ‘ইম্পিউনিটি’ বা অপরাধের দায়মুক্তি। বেশির ভাগ মতই এ রকম: ক্ষমতার রাজনীতিতে লেগে থাকার বড় লাভ ‘ইম্পিউনিটি’ বা অপরাধের দায়মুক্তি। ফলাফল সুবিচারের অনুপস্থিতি, দুর্নীতি, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর রাজনৈতিক শক্তির বশ্যতা ইত্যাদি। একসময় বাড়ির মেধাবী ছেলেটিকে মাছের মাথা তুলে দেওয়া হতো। এখন পরিবারসহ আশপাশে সবাই সমীহ করে উগ্র বেয়াদব বখাটেকে। যে নেতাদের সঙ্গে মোটরসাইকেল মহড়ায় ব্যস্ত সময় যত কাটায় তার কদর বেশি হয়। এভাবেই গোটা সমাজটাকে চোখের সামনে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। একা মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা লড়াই করে কী করবেন? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একটি অপরাধপ্রবণ সমাজকে কতটা সামাল দেবে? রাজনীতি ও সমাজে আদর্শিক মূল্যবোধ ও সততার নীতি ফিরিয়ে না আনতে পারলে সামনে ভয়ঙ্কর দিন। আমাদের এ প্রিয় মাতৃভূমি ধর্ষণের উপত্যকা হিসেবে পরিচিতি লাভের আগেই এর প্রতিরোধে আইনগত, বিচারিক, প্রশাসনিক সংস্কার ও সামাজিক আন্দোলনসহ সম্ভাব্য সব পথে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। লাখো শহীদ ও কন্যা-জায়া-জননীর সম্ভ্রমের চড়া মূল্যে অর্জিত এ পুণ্যভূমি ধর্ষকের দখলে যেতে পারে না।

লেখক : মোঃ মামুন হাসান বিদ্যুৎ, ঢাঃবিঃ।

এই বিভাগের আরো সংবাদ

আজকের দিন-তারিখ

  • শনিবার (সকাল ৬:৩১)
  • ৪ঠা মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ২৫শে শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরি
  • ২১শে বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)

এই মুহুর্তে সরাসরি সংযুক্ত আছেন

Live visitors
238
3394860
Total Visitors